‘পরনের কাপড়ে বের হই, সকালে এসে দেখি ঘর নাই’

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ব্রাহ্মণবাড়িয়া
প্রকাশিত: ০৩:২৯ পিএম, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম বালিয়ারা। সেই গ্রামে বাস করেন পারভীন বেগম। স্বামী মারা গেছেন ১০ বছর আগে। একমাত্র ছেলে সন্তানকে নিয়ে ছোট দুটি মাটির ঘরে কোনোমতে চলে যাচ্ছিল জীবন। কিন্তু এক সন্ধ্যায় বন্যায় কেড়ে নিয়ে গেছে তার সেই মাথা গোজার ঠাঁই।

পারভীন বেগম বলেন, স্বামী মারা গেছেন ১০ বছর আগে। মারা যাওয়ার আগে আমি ও আমার সন্তানের জীবিকার জন্য কিছু রেখে যাননি। আমার ছেলেও ছোট। আমি গ্রামে গ্রামে ভিক্ষা করে চাল ও কিছু টাকা পাই, তা দিয়ে মা-ছেলে চলি। থাকতাম দুটি মাটির ঘরে। ২৩ আগস্ট রাতে আমাদের ঘরে পানি উঠে যায়। পরনের কাপড়েই ঘর থেকে বের হয়ে যাই। পাশের একটি বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেই। পরে এসে দেখি আমার ঘর নাই, পানি নিয়ে গেছে। পানি কমার পর শুধু টিনের চালগুলো ছাড়া আর কিছুই রইলো না। এখন থাকি একজনের বাড়িতে, আর ছেলে থাকে আরেকজনের বাড়িতে। মেম্বারের কাছে গেছিলাম, তিনি বললেন, সরকারি ঘর যদি আসে তাহলে আমার নাম দেবেন। তা কবে আসবে নিশ্চিত না।

শুধু পারভীন বেগম না। এমন আরও অনেকে আছেন কষ্টের মধ্যে। বন্যার পানি কমে যাওয়ার পর ভেসে উঠছে ক্ষতচিহ্ন। ২৩ আগস্ট রাতে গোমতী নদীর বাধ ভেঙে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়ে সালসা নদীতে। ফলে পানিতে তলিয়ে যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার বায়েক ও কায়েমপুর ইউনিয়নের কিছু এলাকা। পানি নেমে যাওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে ঘরবাড়ি ও রাস্তা-ঘাটের বেহাল দশা ফুটে ওঠেছে। টিনের ঘর, মাটির ঘর, সেমিপাকা ঘর, কালভার্ট, গ্রামীণ সড়ক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকায় হওয়ায় অধিকাংশ ঘর ছিল মাটির। পানির কারণে ভেঙে পড়েছে এসব ঘর। এ অবস্থায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে প্রশাসনের পাশাপাশি সামাজিক সংগঠনগুলো। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো ঘর নির্মাণে সহায়তা দেওয়া হয়নি।

‘পরেনের কাপড়ে বের হই মা-ছেলে, সকালে এসে দেখি ঘর নাই’

হারিস মিয়া নামের এক শ্রমিক বলেন, বন্যায় ঘর ভেঙে নিয়ে গেছে। এখন পরিবার নিয়ে অন্যের বাড়িতে থাকি। সবাই শুধু চিড়ামুড়ি ও চাল নিয়ে আসে। আমি পরিবার নিয়ে থাকবো কোথায়? ঘর নির্মাণ করার মতো টাকা তো আমার কাছে নাই।

এ বিষয়ে কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহরিয়ার মোক্তার বলেন, প্রথম দিকে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। পরবর্তীতে পরিবারগুলোকে নগদ দুই হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। আর ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর নির্মাণে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগে বলেছি। এক হাজার বান্ডিল টিন ও নগদ অর্থ চেয়েছি, যদি এগুলো বরাদ্দ দেয় তাহলে ঘরবাড়ি পুনর্নির্মাণে সহায়তা করা যাবে।

এদিকে, শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ফেসবুকভিত্তিক সংগঠন ‘বাউনবাইরার কতার’ পক্ষ থেকে ১১টি পরিবারকে ঘর পুনর্নির্মাণ করতে ৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।

আবুল হাসনাত মো. রাফি/জেডএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।