মায়ের গহনায় ব্যবসার পুঁজি করা জিসানকে নিঃস্ব করেছে বন্যা

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি মিরসরাই (চট্টগ্রাম)
প্রকাশিত: ১২:০৪ পিএম, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

পড়াশোনা শেষ করে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন জুলফিকার আলী জিসান (২৫)। মাছচাষে স্বপ্ন পূরণে সফলও হন তিনি। কিন্তু হঠাৎ বন্যা সবকিছু এলোমেলো করে দেয়।

জিসান জানান, মা আর বড় বোনের ১০ ভরি স্বর্ণালোঙ্কার বিক্রি করে শুরু করেন মৎস্য ব্যবসা। আশা ছিল ব্যবসার মুনাফা দিয়ে সেগুলো শোধ করবেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, সব ছিনিয়ে নিঃস্ব করে দিলো বন্যা।

জিসান চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ধুম ইউনিয়নের প্রকৌশলী মনির আহমদের ছেলে। ২০১৭ সাল থেকে পারিবারিক এই ব্যবসায় মনোনিবেশ করেন জিসান। পরিবারের ছোট ছেলে হওয়ায় সবার থেকে বেশ সহযোগিতাও পান তিনি। তার বড় ভাই একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলেও পরিবারের বৃহৎ অংশ পরিচালিত হয় এই ব্যবসার মাধ্যমে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রকল্পের দিকে অপলক তাকিয়ে বসে আছেন জিসান। চোখে-মুখে হতাশার ছাপ। কয়েকজন কর্মচারী প্রকল্পের ভেঙে যাওয়া পাড় মেরামত করছেন। বন্যার পানির প্রবল স্রোতে প্রকল্পের সব পাড়ই ভেঙে গেছে।

মায়ের গহনায় ব্যবসার পুঁজি করা জিসানকে নিঃস্ব করেছে বন্যা

জানা গেছে, ১০ একর জায়গা জুড়ে এই মৎস্য প্রকল্পে রুই, কাতল, বৃকেট, গ্রাস কার্পসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করা হয়। চলতি বছর প্রায় ৫০ টন মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল জিসানের। যার বাজার মূল্য ছিল প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। তবে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সবকিছু ভেসে গেছে।

একদিকে বন্যার ভয়াবহ স্মৃতি, অন্যদিকে ব্যবসার জন্য নেওয়া ঋণ পরিশোধের চিন্তা। শ্রমিকদের বেতনের বিষয়ও রয়েছে। সব হারিয়ে দিশাহারা জিসান। বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে ১২টি ছাগল। নষ্ট হয়েছে প্রায় ১৫ বস্তা মাছের খাদ্য।

জিসান বলেন, পড়াশোনা শেষ করে চাকরি না করে মাছ চাষে মনযোগী হই। ভালোই চলছিল। গত বছর স্বর্ণের দাম বেড়ে যাওয়ায় মা এবং বড় বোনের ১০ ভরি স্বর্ণ বিক্রি করে ব্যবসায় পুঁজি করি। এখনতো নিজের মূলধনও গেলো, পাশাপাশি মা-বোনের স্বর্ণও গেলো। এছাড়া খাদ্যের বকেয়া টাকা, শ্রমিকের বেতন, ঋণ সবকিছু মিলিয়ে আমি নিঃস্ব। এখন সরকার যদি আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতা না করে তাহলে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবো না।

মিরসরাই উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ বলেন, মিরসরাইয়ে বন্যায় অনেক মাছচাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সবাইকে অফিসে ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ জমা দিতে বলা হয়েছে। তাদের মধ্যে জিসানও একজন। আমরা ক্ষতির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অবহিত করেছি।


এম মাঈন উদ্দিন/এফএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।