রাজশাহী সিটি করপোরেশন

মামলার আসামি হয়েও দাপ্তরিক কাজে সক্রিয় ২০ কাউন্সিলর

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি রাজশাহী
প্রকাশিত: ০৩:৫৭ পিএম, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সরিফুল ইসলাম বাবু ও মো. নজরুল ইসলাম

হত্যা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ মামলার আসামি হয়ে আত্মগোপনে থেকেও দাপ্তরিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের অন্তত ২০ কাউন্সিলর। সাক্ষর করেছেন সনদসহ বিভিন্ন নথিতেও। একজন পলাতক আসামি কীভাবে এসব কাজ করছেন সেটি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

বিভিন্ন মামলার এজাহার ঘেঁটে দেখা যায়, শিবির নেতা রায়হান আলী হত্যায় সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শরিফুল ইসলাম বাবু, ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আব্দুল মমিন, ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আনোয়ার হোসেন, ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. শাহাদত আলী শাহু, ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. তৌহিদুল হক সুমন, ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. নিযাম উল আযীম, ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মাহাতাব হোসেন চৌধুরী ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আরমান আলীকে আসামি করা হয়।

ছাত্র আন্দোলনে নিহত নাজমুস সাকিব হত্যার ঘটনায় নগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আনোয়ার হোসেন, ২২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল হামিদ সরকার টেকন ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আরমান আলীকে আসামি করে।

বিএনপি অফিস ভাঙচুর ও গুম-খুনের মামলায় আসামি করা হয়েছে ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. রজব আলী, ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আনোয়ার হোসেন, ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আরমান আলী, ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আব্দুল মমিন, ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. তৌহিদুল হক সুমন, ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মাহাতাব হোসেন চৌধুরী, ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শরিফুল ইসলাম বাবু, ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মনিরুজ্জামান, ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. নিযাম উল আযীম ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. শাহাদত আলী শাহুকে।

ছাত্র মিছিলের হামলা ও প্রকাশ্য গুলি ছোড়ার মামলার আসামি করা হয়েছে ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আকতারুজ্জামান কোয়েল, ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. নজরুল ইসলাম, ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আশরাফুল ইসলাম, ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রজব আলী, ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর অলিফ আল মাহমুদ লুকেন, ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি, ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জানে আলম জনি, ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুস সোবাহান, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম পচা, ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাসেল জামান ও ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. রবিউল ইসলামকে।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সিটি করপোরেশনের ৩০ ওয়ার্ডের মধ্যে অন্তত ২০ ওয়ার্ডের কাউন্সিলরা বিভিন্ন মামলার আসামি। এরা সবাই ফৌজদারি মামলার আসামি ও পলাতক। তবে পলাতক থেকেও তারা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। সই করছেন অফিসের বিভিন্ন নথিতে।

নগরীর ১২ নম্বর ওয়ার্ড কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে কাউন্সিলর নেই। তবে সব কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তার অফিসর লোকজন। এমনকি চারিত্রিক সনদেও তিনি সই করে রেখেছেন।

নাম না প্রকাশ করে সেখানে একজন কর্মচারী বলেন, ভাই ফাইল নিয়ে যেতে বলেন। সেখান থেকে তিনি সই করে দেন। আমাদের সব কাজই এখনও ভাই করছেন।

এ বিষয়ে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শরিফুল ইসলাম বাবুর সাথে যোগাযোগ করা হলেও তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এদিকে নগরীর ২ নম্বর ওয়ার্ড কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও পুরো দমে কার্যক্রম চলছে। এমনকি সেখানে কমিশনার মাঝে মাঝে আসেনও। সই করছেন বিভিন্ন প্রকল্পের নথিতে।

এ বিষয়ে কাউন্সিলর মো. নজরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নাগরিক কার্যক্রম সব কিছুই চালু আছে। আমি প্রতিদিন অফিস করছি।

এ বিষয়ে বোয়ালিয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মাসুদ পারভেজ বলেন, মামলায় যাদের নাম রয়েছে তারা এখন পলাতক আসামি। পলাতক আসামি কীভাবে অফিস করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন ঘটনা ঘটে থাকলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেবো।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, ঠিক কতজন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে মামলা আছে সেটি এখনো বলা সম্ভব নয়। আমার কাউন্সিলর মিটিংয়ে যাতে ফৌজদারি মামলার আসামিরা যোগদান করতে না পারে সেটি পুলিশকে বলেছি।

তিনি আরও বলেন, কোনো অপরাধী আমার নাগরিকত্বের সনদ দিবেন, চরিত্রের সনদ দিবেন বা জন্ম নিবন্ধনে সই করবেন সেটি হয় না। এগুলো নিয়ে আমরা কাজ করার চেষ্টা করছি। আমি দ্রুত সময়ের মধ্যেই মিটিং করতে চাচ্ছি। তারা তিনিটি মিটিং এ অনুপস্থিত হলেই ব্যবস্থা গ্রহণ নেওয়া হবে।

সাখাওয়াত হোসেন/আরএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।