পুকুর দখলের পর পদ স্থগিত, এবার বাড়ি দখলের অভিযোগ শিরিনের বিরুদ্ধে

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি বরিশাল
প্রকাশিত: ০৮:০৮ পিএম, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
বিএনপি নেত্রী অ্যাডভোকেট বিলকিস জাহান শিরিন

সরকারি পুকুর দখলের ঘটনায় দলের পদ হারিয়েছেন। এবার তিনতলা বাড়ি দখলের অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রীয় বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট বিলকিস জাহান শিরিনের বিরুদ্ধে।

প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের বাড়িটির মালিক এবিএম সালাউদ্দিন খান। মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে তিনি পথে পথে ঘুরছেন। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার মেলেনি। বিলকিস জাহানের অব্যাহত হুমকিতে শহর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে জানান সালাউদ্দিন।

ভুক্তভোগী এবিএম সালাউদ্দিনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বরিশাল সিটি করপোরেশনের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের ব্রাউন কম্পাউন্ড রোডের বগুড়া আলেকান্দা মৌজার জেএল ৫০, এসএ ৮৬৫১ খতিয়ানের ৩ শতাংশ জমির মালিক সালাউদ্দিনের মা হাসিয়ারা বেগম। তার মৃত্যুর পরে ওয়ারিশসূত্রে তিন ছেলে ও তিন মেয়ে সম্পত্তির ভাগ পাবেন। সম্পত্তি ভাগের আগেই বড় ভাই মহিউদ্দিন খান ও বোন ডালিয়া আক্তার মিলে এক শতাংশ জমি বিক্রি করেন প্রতিবেশী বিএনপি নেত্রী বিলকিস জাহান শিরিনের ছোট ভাই শহিদুল ইসলাম শামীমের স্ত্রী মারিয়া ইসলাম মুন্নির কাছে।

শর্ত থাকে জমিতে যতদিন পুরোনো ভবন থাকবে ততদিন মারিয়া আক্তার মুন্নি নিচতলা ভোগদখল করবেন। বড় ভবন করা হলে তখন অংশীদারত্ব অনুসারে সিদ্ধান্ত ও বণ্টন হবে।

ভবনটির সালাউদ্দিনের একাংশ দোতলায় ভাড়াটিয়া এবং বাকি অংশে আরেক ভাই মৃত মনিরুজ্জামান কামালের পরিবার থাকতো। ২০১৯ সালে বাড়ির ১ শতাংশ জমি কিনে নিচতলা দখলে নেওয়ার কিছুদিন পরে সালাউদ্দিনের অংশের ভাড়াটিয়া নামিয়ে দিয়ে বাড়ি দখলে নেন মারিয়া আক্তার মুন্নি। এ ঘটনায় সালাউদ্দিন বাধা দিতে গেলে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন এবং খুন-জখমের হুমকি দেন। পরে ওই বছরের ১১ নভেম্বর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন সালাউদ্দিন।

এরপরে বাড়ির তিনতলা নির্মাণ শুরু করেন বিলকিস জাহান শিরিনের ভাই। ওই ঘটনায়ও থানায় অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী। এ নিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর, গণমান্যদের নিয়ে সালিশ হলে প্রমাণ হয়, তারা (শিরিনের ভাই) পুরো বাড়ি দখলে নিতে পারেন না। এরপর থেকে তারা কথা শোনেন না। এক শতাংশ কিনে বাড়ি দুই শতাংশ এবং পুরো ভবন দখলে নিয়ে সালাউদ্দিনকে বাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েছেন। এখন তিনতলা করে সেখান বসবাস করে নিচতলা ভাড়া দিয়েছেন। বরিশালে এলে এখানেই ওঠেন বিলকিস জাহান শিরিন।

ভুক্তভোগী সালাউদ্দিন বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহর শ্বশুরবাড়ি আর শিরিনের বাসা পাশাপাশি। শিরিনের সঙ্গে তাদের খুব ভালো সম্পর্ক। শুধু তাই নয়, আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, সাদিক আব্দুল্লাহর সঙ্গে গভীর সখ্য রেখে চলেন। এ কারণে আওয়ামী লীগের আমলে তিনি প্রকাশ্যে আমার বাড়ি দখল শুরু করেন। তখন আমি সিটি করপোরেশনসহ সব দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছি। সিটি করপোরেশন থেকে আমাকে বলা হতো, শিরিনের সঙ্গে আপসে যাওয়ার জন্য। আর আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বরিশালে একক আধিপত্য বিস্তার করেছেন শিরিন। এজন্য আমি বরিশালেও থাকতে পারছি না।’

তিনি বলেন, ‘বিগত পাঁচটি বছর ধরে আমি পথে পথে ঘুরছি। নিজের ঘরে ফিরতে পারছি না। আমার বাড়ি দখল হয়ে যাওয়ার পরে বরিশালেও থাকতে দিচ্ছে না। পালিয়ে পালিয়ে আসি আবার পালিয়ে চলে যাই। বিলকিস জাহান শিরিনের লোকজন দেখে ফেললে আমাকে প্রাণে মেরে ফেলবে। সরকারের কোনো দপ্তর থেকেও সুবিচার পাচ্ছি না।’

ব্রাউন কম্পাউন্ড এলাকায় গিয়ে বিলকিস জাহান শিরিনের বাড়ির খোঁজ করেন এ প্রতিবেদক। স্থানীয়রা তার ছোট ভাই শামীমের স্ত্রীর নামে এক শতাংশ কিনে দখল করা ভবনটিকে দেখিয়ে দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুজন ভবন মালিক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দিন (৫ আগস্ট) রাতেই সরকারি পুকুরটি বালু দিয়ে ভরাট করে ফেলেন বিলকিস জাহান শিরিন। বিষয়টি সেনাবাহিনীকে জানালে শিরিন তার সহযোগীদের নিয়ে এসে এলাকার মানুষকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। আমরা শিরিনের ভয়ে কেউ কথা বলতে পারি না। যে বাড়িটিতে থাকেন সেটিও দখল করেছেন। মূলত শিরিন নিজেকে নিরাপদ রাজনীতিবিদ দেখাতে তার সব সম্পত্তি ভাইয়ের স্ত্রীর নামে কেনেন। এই বাড়িটির এক শতাংশ ভাইয়ের স্ত্রীর নামে কিনে পুরো বাড়িটি দখলে নিয়েছেন।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিলকিস জাহান শিরিন। তিনি বলেন, ‘আমি কোনো ভবন দখল করিনি। প্রায় ৮০ বছর পুরোনো আমার বাবার বাড়ি ব্রাউন কম্পাউন্ড আরশাদ মঞ্জিল। আমি এই ভবনে থাকি। গতকাল আমিও শুনেছি একজনে অভিযোগ দিয়ে বেড়াচ্ছে। সেই অভিযোগে আমার নাম লেখেনি। আমার কোনো আত্মীয়ের নাম লিখেছে। এগুলো আমি জানি না।’

এদিকে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় ও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে এবিএম সালাউদ্দিনের অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের ছয়দিনের ব্যবধানে ১১ আগস্ট দলের সব পদ-পদবী স্থগিত করা হয় বিলকিস জাহান শিরিনের। স্থানীয় বিএনপির নেতারা বলছেন, ব্রাউন কম্পাউন্ড এলাকায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের সরকারি পুকুর ভরাট করে দখল এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছ থেকে সুবিধা নেওয়ার ঘটনায় পদ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র।

শাওন খান/এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।