গোমতীর বেড়িবাঁধে বানভাসিদের উদ্বাস্তু জীবন

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুমিল্লা
প্রকাশিত: ০২:২১ পিএম, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ফ্রিজ, টিভি ও রান্নার জন্য মরিচ-হলদি, চাল এবং গরুর মাংস ছিল ঘরে। মানুষের বাসায় কাজ করে অনেক কষ্টে এসব যুগিয়েছিলেন রহিমুন আক্তার। কিন্তু এক বন্যায় তার সব শেষ হয়ে গেছে। ঘর-বাড়ি হারিয়ে বেড়িবাঁধে ত্রিপল টানিয়ে যাযাবর জীবন পার করছেন রহিমুন আক্তার। তিনি তার দুঃখ কষ্টের কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

রহিমুনের মতো কুমিল্লার গোমতীর বেড়িবাঁধে শত শত মানুষ খেয়ে-না খেয়ে পার করছে দিন। পানি কমলেও অর্থনৈতিক দৈন্যতায় ঘর-বাড়ি মেরামত করতে পারছেন না তারা।

বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গোমতীর বেড়িবাঁধের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় এ চিত্র।

স্থানীয়রা জানান, ১৯ আগস্ট থেকে অব্যাহত বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানিতে ক্রমেই ফুঁসে উঠে গোমতী নদী। বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত শুরু হলে ২১ আগস্ট থেকে রেড অ্যালার্ট জারি করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এরপর থেকে গোমতীর পাড়ে বসবাসকারীদের মধ্যে কিছু মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে গেলেও অধিকাংশ মানুষ নিজবাড়িতে অবস্থান করছিলেন। হঠাৎ পানির পরিমাণ বেড়ে তলিয়ে যেতে থাকে ঘর-বাড়ি।

এসময় জীবন বাঁচাতে বাসিন্দারা এক কাপড়ে বেরিয়ে আসেন। মুহূর্তের মধ্যে নিঃস্ব হয়ে পড়েন বহু মানুষ। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তারা গোমতীর বাঁধে অবস্থান নিয়ে বসবাস শুরু করেন।

কুমিল্লা সদরের গোমতীর পাড়, বিবির বাজার, টিক্কারচর, চানপর ও বানাসুয়াসহ বিভিন্ন এলাকার ঘুরে প্রায় চার শতাধিক মানুষকে উদ্বাস্তু জীবন পার করতে দেখা গেছে। ত্রিপলের একটি খুপরিতে ৪-৫ জনের বসবাস। শুয়ে-বসে পার করছেন সময়। খাবার ও সুপেয় পানির সংকটে কষ্ট পাচ্ছেন অনেকেই। চাল, ডাল ও তেল এবং শুকনো খাবার সহায়তা পেলেও নেই রান্নার উপকরণ।

গোমতীর বেড়িবাঁধে বানভাসিদের উদ্বাস্তু জীবন

রহিমুন আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, প্রথমে পানির পরিমাণ কম দেখে ঘর থেকে বের হই নাই। হঠাৎ যখন পানি বেড়ে যায় ঘরে থাকা বুড়ো মাকে নিয়ে বের হয়ে পড়ি। এসময় নিজের দেহে থাকা কাপড় ছাড়া ঘর থেকে কিছুই বের করতে পারিনি। মানুষের বাসায় কাজ করে ঘর বানিয়েছি। যুগিয়েছি মাল-সামানা। আজ সব শেষ হয়ে গেলো।

তিনি আর বলেন, এখন আমি কি খাবো, কোথায় থাকবো? আপনারা যদি আমাকে সহায়তা না করেন রাস্তায় থাকা ছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই।

মোশের্দ আলম মানিক নামে এক ব্যক্তি জাগো নিউজকে বলেন, রাত ৩টায় হঠাৎ পানি ঢুকে যায় বসতঘরে। কোনোমতে জীবন রক্ষায় ছেলে-মেয়ে নিয়ে গোমতীর বেড়িবাঁধে অবস্থান নিয়েছি। ৫০ বছর বয়স চলে, কখনো চিন্তাও করিনি এ রকম একটি পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। বর্তমানে উদ্বাস্তু জীবন পার করছি।

জান্নাতুল ফেরদৌস নামে এক নারী জাগো নিউজকে বলেন, বাচ্চাদের নিয়ে বেড়িবাঁধে উঠি। ১৫ দিন ধরে এখানে অবস্থান করছি। থাকতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। বাড়িতে যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, প্রায় ৩-৪ লাখ টাকা ফার্নিচার নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ঘরে থাকা কোনো কিছুই বাঁচাতে পারিনি।

তিনি আরও বলেন, এখানে বাচ্চাদের নিয়ে ভয়ের মধ্যে রয়েছি। রাতে বৃষ্টিতে ভিজে, সকালে রোধে শুকাচ্ছি। এভাবে আর পারছি না। ক্লান্ত হয়ে গেছে।

জাহিদ পাটোয়ারী/জেডএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।