যশোরে ৯৫ অস্ত্র উদ্ধারে যৌথবাহিনীর অভিযানের রোডম্যাপ চূড়ান্ত

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি যশোর
প্রকাশিত: ১১:৫৭ এএম, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ফাইল ছবি

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা পর্যন্ত যশোরে ৩৬৫টি অস্ত্রের মধ্যে ২৭০টি অস্ত্র জমা পড়েছে। তবে এখনো ৯৫টি অস্ত্র জমা হয়নি। একইসঙ্গে প্রায় এক হাজার রাউন্ড গুলিও জমা পড়েনি। কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার অস্ত্র লুট হওয়া ও আত্মগোপনে থাকায় অস্ত্র জমা দিতে পারেননি বলে সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শতভাগ জমা না দেওয়ায় সব অস্ত্রই অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে যেকোনো সময় যৌথ অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। অবৈধ অস্ত্রসহ সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ নিয়ে বুধবার জরুরি সভা করেছেন জেলার যৌথবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা। এদিন বিকেলে জেলা প্রশাসকের কক্ষে এই সভায় যৌথ অভিযান চালানোর রোডম্যাপ চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।

যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কমলেশ মজুমদার বলেন, জেলা ম্যাজিস্ট্রেসি থেকে ইস্যুকৃত লাইসেন্স এবং অন্যান্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেসি থেকে যশোর জেলায় বসবাসরত বেসামরিক জনগণের অনুকূলে ইস্যুকৃত লাইসেন্সের বিপরীতে ক্রয়কৃত আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ সংশ্লিষ্ট থানায় ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কিন্তু ৯৫টি অস্ত্র জমা হয়নি। এ আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। দেশের অন্যান্য জেলায়ও যশোরের ইস্যুকৃত অস্ত্র জমা হতে পারে। তাই হিসাব মেলানোর পর কার্যকর পদক্ষেপের পরিকল্পনা রয়েছে।

তিনি বলেন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে যশোরে যেকোনো সময় যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হবে। আজ যৌথবাহিনীর সভা হয়েছে। তথ্য পেলেই অভিযান নয়, টিম যাচাই বাছাই করেই অভিযানে যাবে। অভিযানের নামে কেউ যাতে হয়রানি না হয়, সেব্যাপারে কিছু তথ্য যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। সভায় সুনির্দিষ্ট কিছু তথ্য অনুযায়ী অভিযানের রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি অভিযানেই একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একজন মেজর, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, আনসার বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন।

যশোর জেলা প্রশাসকের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাখার তথ্যমতে, জেলায় লাইসেন্স ইস্যুকৃত অস্ত্রের সংখ্যা ১ হাজার ১৩৫টি হলেও প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী জমা প্রদানের জন্য যশোর জেলায় চাহিত অস্ত্রের সংখ্যা ৩৬৫টি। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত দেওয়া লাইসেন্সকৃত অস্ত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল ৩ সেপ্টেম্বর। এই অস্ত্রের মধ্যে জমা পড়েছে ২৭০টি। জমা পড়েনি ৯৫টি। তবে বাইরের জেলা থেকে লাইসেন্সে করা যশোরের বসাবসরত এমন ৮টি অস্ত্র জমা পড়েছে। জেলায় লাইসেন্সধারী অস্ত্রের এক হাজার রাউন্ড গুলি জমা পড়েনি। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাত ১২টার মধ্যে যেসব অস্ত্র এবং গোলাবারুদ সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেওয়া হবে না সেগুলোকে অবৈধ হিসেবে গণ্য করা হবে।

জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গেছে, যশোরে ৩৬৫ অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয় ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত। আর ওই সময়ের মধ্যে বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের বেশিরভাগই পেয়েছিলেন আওয়ামী ঘরানার নেতাকর্মী, ব্যবসায়ী ও পেশাজীবীরা।

সূত্রটির দাবি, তাদের কাছে এমন তথ্যও রয়েছে যে অনেকের নামে অস্ত্রের লাইসেন্স থাকলেও অস্ত্র তার দখলেই নেই এখন। আছে পলাতক ভক্ত সমর্থকদের কাছে। যে কারণে ইচ্ছা থাকলেও জমা দিতে পারছেন না অস্ত্র। আবার যারা অথোরাইজড ডিলারের কাছে আগেই আগ্নেয়াস্ত্র জমা রেখেছেন তারা থানায় শুধু জমার কাগজপত্র দিলেই হবে। তবে তাও করেননি অনেকে। ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের বাড়ি লুট ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ হওয়ার সময়ে অনেকের অস্ত্র লুট হয়েছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। যদিও এ ঘটনায় কেউ থানায় জিডি বা লিখিত অভিযোগ করেননি।

যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ফিরোজ কবির বলেন, ‘নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অস্ত্র জমা না দেওয়ায় সব অস্ত্রই অবৈধ হিসেবে গণ্য করা হবে। যৌথবাহিনী এই অভিযান পরিচালনা করবে এবং ওই অস্ত্রগুলো আমরা উদ্ধার করতে পারবো বলে আশাবাদী।’

মিলন রহমান/এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।