মিরসরাইয়ে ধানবীজের জন্য কৃষকের হাহাকার

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি মিরসরাই (চট্টগ্রাম)
প্রকাশিত: ০৬:৫৩ পিএম, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ভয়াবহ বন্যায় টানা সাতদিন নিমজ্জিত ছিল রোপা আমন ও ধানের বীজতলা। পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে বীজতলা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন শত শত কৃষক। পানি নেমে যাওয়ায় এখন বীজ ও ধানের চারা নিয়ে কৃষকদের মধ্যে হাহাকার দেখা দিয়েছে। সময় মতো চারা লাগাতে না পারলে উপজেলায় ধানের উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মহুরী নদীর তীরবর্তী করেরহাট, হিঙ্গুলী, ধুম, জোরারগঞ্জ, ওচমানপুর, ইছাখালী, কাটাছরাসহ মিরসরাইরে ১১টি ইউনিয়ন বন্যার কবলে পড়ে। এতে টানা সাতদিন ডুবে ছিল মিরসরাই উপজেলার বেশির ভাগ এলাকা। কৃষিজমি, মাছের ঘের ডুবে যায়। বন্যার পানি কমতেই দেখা দিতে থাকে ফসলি জমির ক্ষতির চিহ্ন।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বীজতলা পচে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে ধানের চারা। জমিতে আগাম লাগানো চারাও পচে নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক কৃষক চারার জন্য পার্শ্ববর্তী উপজেলাগুলোতে খোঁজ নিচ্ছেন। উপজেলার সব জায়গায় দেখা গেছে একই দৃশ্য। মাথায় হাত দিয়ে আছেন কৃষকরা।

অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য বীজতলা প্রস্তুত করছেন উপজেলার অন্যতম সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দূর্বার। চারা পেলে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন বলে বলছেন কৃষকরা।

মিরসরাই উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, আমন ধানের মৌসুমে উপজেলায় এক হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে ধানের বীজতলা প্রস্তুত করা হয়েছিল। যার মধ্যে ৩৫০ হেক্টর জমির বীজতলা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। বাকি ৮৭০ হেক্টর জমির বীজতলা কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবার আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৯ হাজার ৮৫০ হেক্টর। বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ৩ হাজার ৫০ হেক্টর জমি খালি থাকার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস।

মিরসরাইয়ে ধান বীজের জন্য কৃষকের হাহাকার

মিঠানালা ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের কৃষক উজ্জল কুমার নাথ বলেন, ৭ শতক জমিতে ৩ একর ৬০ শতক জমির জন্য আমনের বীজতলা প্রস্তুত করেছি। টানা ৭ দিনের বন্যায় বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। গত তিনদিন আমনের চারার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছি, কিন্তু পাইনি। জানি না চারা সংগ্রহ করতে পারবো কি না। গ্রামের অনেক দরিদ্র কৃষকের একই অবস্থা। জমিতে ধান চাষ করতে না পারলে খাবো কি? পরিবার নিয়ে চলবো কি করে। গবাদিপশুর খাদ্যের জোগান মেটাবো কি করে।

উপজেলার ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের কৃষক মো. আব্দুল হান্নান বলেন, ৫০ শতক জমির জন্য বীজতলা প্রস্তুত করেছিলাম। কয়েক শতক জমিতে রোপণ করতে পারলেও অর্ধেক জমি খালি পড়ে থাকবে।

রাজু দাশ নামের এক কৃষক বলেন, ধান চাষ করে আমরা সারা বছরের খোরাকি জোগাড় করি। এবার চারা নষ্ট হওয়াতে জমিতে ধান চাষ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। ঋণ নিয়ে জমিচাষ করি। ধানের মৌসুমে ধান বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করি। এছাড়া ধান মারাই শেষে গবাদিপশুর জন্য খড় সংগ্রহ করি। এবার সব গেলো। কীভাবে কি করবো মাথায় আসছে না।

মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, এবার বন্যায় দুদফা বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বাজারে কিছু জাতের ধান বীজের সংকট তৈরি হয়েছে। অনেক কৃষক আবার নিজে বীজতলা তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছেন। কৃষি বিভাগ ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ধানের চারা উৎপাদনে সহযোগিতা করছে। এখন যেসব কৃষক বীজতলায় চারা তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাদের বিআর-২২, বিআর-২৩, ব্রি-৩৪, ব্রি ধান-৪৬ ও হাইব্রিড ধানি গোল্ড জাতের চারা তৈরির পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আর যেসব কৃষক ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জমিতে ধানের চারা লাগাতে পারবেন না, তাদের এ মৌসুমে আর ধান চাষ না করে সেসব জমিতে আগাম শাকসবজি ও গমজাতীয় ফসল চাষ করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

এম মাঈন উদ্দিন/জেডএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।