মনোহরগঞ্জে পানিবন্দি মানুষের মানবেতর জীবন

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুমিল্লা
প্রকাশিত: ০৪:২৩ পিএম, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে বন্যার পানি নামছে ধীরগতিতে। গত ১৫ দিনেও তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। এখনো পানিতে তলিয়ে রয়েছে বহু ঘর-বাড়ি ও রাস্তা-ঘাট। বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বসতভিটা ছেড়ে অনেকে উঠেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। আবার অনেকেই পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। খেয়ে না খেয়ে পানি কমার অপেক্ষায় কোনোমতে দিন পাড় করছেন। মূলত উপজেলার বিভিন্ন স্থানে খাল দখলের ফলে এমন খারাপ পরিস্থিতি হয়েছে। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলার মৈশাতুয়া খালপাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায় এমন চিত্র।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৫ দিন আগে কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলা, পার্শ্ববর্তী জেলা নোয়াখালী এবং ডাকাতিয়া নদীর বেশ কয়েকটি স্থানে বাঁধ ভেঙে মনোহরগঞ্জে বন্যার পানি প্রবেশ করছে। এতে উপজেলায় ভয়াবহ রূপ নেয় বন্যা পরিস্থিতি। পানিবন্দি হয়ে পড়ে প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় ঘর থেকে বের হতে পারছেন না তারা। ইতিমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বন্যার পানি কিছুটা কমলেও মৈশাতুয়া ইউনিয়নের পানি অপরিবর্তিত রয়েছে।

মৈশাতুয়া খালপাড় এলাকার সেলিমের স্ত্রী আমেনা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, মানবেতর জীবনযাপন করছি। ঘর থেকে বাইরে পা রাখার মতো জায়গা নেই। উঠানসহ সব তলিয়ে গেছে। ঘরের মধ্যে একটি তেলের টিন কেটে লাকড়ি দিয়ে কোনোমতে রান্না করছি। খেয়ে না খেয়ে পাড় করছি সময়। রাত-দুপুরে একটা মানুষ হঠাৎ অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য যে নিয়ে যাবো, সেই ব্যবস্থাও নেই।

মৈশাতুয়া উত্তর পাড়ার মো. বাহার জাগো নিউজকে বলেন, ২১ আগস্ট থেকে বাড়ির উঠানে কোমর পানি। আজ পর্যন্ত পানির লেভেল এক সমান রয়েছে।

মনোহরগঞ্জে পানিবন্দি মানুষের মানবেতর জীবন

পানি না কমার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেসব এলাকা দিয়ে পানি নির্গত হবে, ওই সব এলাকার অধিকাংশ স্থানে বাঁধ দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। যার কারণে পানি কমতে সময় লাগছে।

স্থানীয় আরেক ব্যক্তি আব্দুল কাদের সোহাগ বলেন, মৈশাতুয়া ইউনিয়নে গত কয়েক দিনে মাত্র ২-৩ ইঞ্চি পানি কমেছে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় বাঁধ রয়েছে। যার কারণে পানি কমতে সময় নিচ্ছে।

মনোহরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজালা রানী চাকমা জাগো নিউজকে বলেন, উপজেলায় পানি কমতে আরও সপ্তাহখানেক সময় লাগতে পারে। যেখানে বাঁধের কারণে পানি নামতে সমস্যা হচ্ছে, খবর পাওয়ার সঙ্গে সেখানে অভিযান চালিয়ে বাঁধ ভেঙে দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বানভাসিদের জন্য ১০৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। দুর্গম এলাকাগুলোতে যেসব মানুষ পানিবন্দি, তাদের উদ্ধার এবং খাবার পৌঁছানোর জন্য সরকারি-বেসরকারিসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কাজ করছে। ইতিমধ্যে আমরা বিভিন্ন গ্রামে ৬০ টন চাল, ৫ লাখ টাকার বিভিন্ন প্রকার খাদ্য সামগ্রী এবং নগদ অর্থ বিতরণ করেছি।

জাহিদ পাটোয়ারী/জেডএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।