ছাত্র আন্দোলন
শরীরে বিদ্ধ ৭৬টি ছররা গুলি, ঠিকমতো ঘুমাতেও পারেন না ইমন
শেখ হাসিনার পদত্যাগের একদফা আন্দোলনে গিয়ে ৭৬টি ছররা গুলিতে বিদ্ধ হন মৌলভীবাজার সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের পশ্চিম দিগলগজী গ্রামের বাসিন্দা ইমন মিয়া ওরফে জেন্টু। এরপর থেকে অসহ্য যন্ত্রণাই যেন তার নিত্যসঙ্গী। ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না অর্থাভাবে চিকিৎসাও বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এ অবস্থায় বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে ইমন মিয়ার পরিবার।
ইমন পশ্চিম দিগলগজী গ্রামের মৃত ফজলু মিয়ার ছেলে। পেশায় মোটর মেকানিক। একইসঙ্গে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাকরীম ফাউন্ডেশনের সদস্য। গত ৪ আগস্ট বিকেলে মৌলভীবাজার শহরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে যুগ দেন ইমন মিয়া। একপর্যায়ে পুলিশ টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছুড়ে ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করে। এসময় পুলিশের ছোড়া গুলিতে গুরুতর আহত হন অনেকে।
ইমন মিয়া ওরফে জেন্টু বলেন, ওইদিন তিনি তার ছেলের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেন। বিকেলে হঠাৎ পুলিশ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর গোলাগুলি শুরু করে। তখন তাকেও তাড়া করে খুব কাছ থেকে গুলি করে পুলিশ। সেখানেই অজ্ঞান হয়ে পড়েন। জ্ঞান ফিরলে দেখেন তিনি মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে। জানতে পারেন তার শরীর ও মাথায় ৭৬টি ছররা গুলি লেগেছে।
তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসক সিলেট এম এ জি ওসমানী হাসপাতালে পাঠান। সেখানে মাথা ও শরীরে থাকা বুলেট বের করতে না পারায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ইমন মিয়া জানান, গুলিগুলো এখনো বের করা যায়নি। ফলে অসহনীয় ব্যথায় ভুগছেন তিনি। আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় সঠিক চিকিৎসাও করাতে পারছেন না। এ অবস্থায় তার পাশে দাঁড়াতে বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেন জেন্টু।
ইমন মিয়ার স্ত্রী আমেনা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী দেশের জন্য যুদ্ধ করতে গিয়ে আহত হয়েছেন। এখনো বুলেট গায়ে রয়ে গেছে। রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না। আমরা আর্থিকভাবে সচ্ছল না থাকায় চিকিৎসা করাতে পারছি না। আমরা খুব কষ্টে আছি।’
শ্বশুর লোকমান হেকিম বলেন, ‘মাথায় অসহনীয় যন্ত্রণা আর শরীরে ব্যথা নিয়ে জীবন পার করছে আমার জামাই। অর্থাভাবে অপারেশনের ব্যবস্থা করতে পারছি না। আমরা চাই কেউ তার চিকিৎসায় এগিয়ে আসুক।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মৌলভীবাজার জেলার সাবেক সমন্বয়ক রাব্বি মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, আহতদের তালিকা করা হচ্ছে। ইমন মিয়ার মতো প্রায় ৭০ জন আহত হয়েছেন। আমরা সবার তালিকা প্রস্তুত করছি।
ওমর ফারুক নাঈম/এসআর/এমএস