বন্যার ক্ষতচিহ্ন
একের পর এক ভেঙে পড়েছে মাটির ঘর
ভয়াবহ বন্যায় চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে প্রায় দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি ছিল। প্রায় সাতদিন পর পরিস্থিতি উন্নতি হলেও এখন ভেসে উঠছে ক্ষতচিহ্ন। একের পর ভেঙে পড়েছে মাটির ঘর। কীভাবে নতুন করে মাথা গোঁজার ঠাঁই পাবে এ নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই অনেকের। এই অঞ্চলে গত ৭০ বছরেও এমন পানি দেখেনি মানুষ। তবে ভেঙে যাওয়া ঘরে চাপা পড়ে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। উপজেলায় প্রায় শতাধিক মাটির ঘর ভেঙে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার করেরহাট ইউনিয়ন থেকে মিঠানালা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় অনেক মাটির ঘর টানা সাতদিন ডুবে ছিল। পানি কমার পর ওই এলাকায় প্রায় শতাধিক মাটির ঘর ভেঙে পড়ছে। এসব ঘরের মালিকরা বেশীর ভাগ দরিদ্র। তাদের চলতে কষ্ট হয়। তার ওপর মাথা গোঁজার ঠাঁই চলে যাওয়ায় দুচোখে অন্ধকার দেখছেন তারা।
উপজেলার জনার্দ্দনপুর গ্রামের শ্যামল দত্ত বলেন, আমার বয়স ৭৫ বছর। এই বয়সে গ্রামের রাস্তাঘাট কখনো ডুবতে দেখিনি। এবারের বন্যা ইতিহাস সৃষ্টি করলো। এখানে অনেক মাটির বসতি। অতিরিক্ত পানির কারণে ঘরের দেওয়াল নরম হয়ে ধসে পড়েছে।
শতবর্ষী জানে আলম মিয়াসাব বলেন, এ রকম পানি আর দেখি নাই। বাড়িঘর ছেড়ে এখন আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছি। পানি কিছুটা কমছে। কিন্তু বাড়ি গিয়ে দেখি মাটির ঘরটি পানি কমার সাথে ধসে পড়ে গেছে। শুনেছি আমার মতো অনেকর ঘর ভেঙে গেছে।
তমাল দত্ত নামের আরেকজন বলেন, আমাদের বাড়িতে কয়েকটি মাটির ঘর ছিল। এতদিন মোটামুটি ভালো ছিল পানি। পানি নামার পর ঘরগুলো ধসে পড়েছে।
উপজেলার হিঙ্গুলী ইউনিয়নের আজমনগর গ্রামের গিয়ে দেখা যায়, এখানকার চিত্র আরও ভয়াবহ। পাশের হিঙ্গুলী খাল হয়ে ফেনী নদীর পানির তোড়ে এখানে প্রায় সবকটি কাঁচাঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানকার খামারের গরু-মুরগি ভেসে গেছে বানের জলে। পুকুরে মাছ নেই, ক্ষেতে নেই ফসল।
গ্রামের আনোয়ার এ্যাগ্রো অ্যান্ড ডেইরি ফার্মের মালিক আনোয়ার হোসেন বলেন, বন্যার প্রথম দিক থেকে পুরো গ্রাম ডুবে যায়। পাশে হিঙ্গুলী খাল হওয়ায় এক রাতেই গ্রাম প্লাবিত হয়। গ্রামের কোনো কাঁচাবাড়ি অক্ষত নেই। মানুষের হাঁস-মুরগি, খামারের গরু-মুরগি সব ভেসে গেছে। গ্রামের মানুষকে ঘুরে দাঁড়াতে বহুমুখী সহযোগিতা ছাড়া কখনো সম্ভব হবে না।
উপজেলার ওচমানপুর ইউনিয়নের প্রায় সবকটি গ্রাম টানা ছয়দিন বন্যার পানিতে ডুবেছিলো। বৃহস্পতিবার আজমপুর, মুহুরী প্রজেক্ট ও বাঁশখালী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, এখানে এখনো সড়কের পাশে দোকান-পাটে আশ্রয় নিয়ে আছে বানভাসি মানুষ।
এদিকে বুধবার সকালে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির সমীক্ষা চালাতে মিরসরাই উপজেলায় কর্মরত সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে ৯ সদস্যের একটি কমিটি করেছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৯টি ইউনিয়নের ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করবেন এসব কর্মকর্তা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রশাসক মাহফুজা জেরিন বলেন, বন্যায় উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে সমীক্ষা কমিটি হয়েছে। তারা প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বাসগৃহ, টিউবওয়েল ও স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানার সমীক্ষা চালাবে। পরবর্তীতে অন্যান্য ক্ষতির সমীক্ষাও করবে।
এ বিষয়ে বন্যাদুর্গত এলাকার দুর্যোগ মোকাবিলায় গঠিত মিরসরাই উপজেলা কমিটির সদস্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির খাঁন বুধবার দুপুর ২টার দিকে জানান, বন্যাদুর্গত এলাকায় উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ ছিল অবাক করার মতো। এখন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসন হবে চ্যালেঞ্জ।
এম মাঈন উদ্দিন/জেডএইচ/জিকেএস