বন্যাকবলিত দাগনভূঞাসহ আশপাশের এলাকায় খাবার সংকট চরমে

আবদুল্লাহ আল মিরাজ
আবদুল্লাহ আল মিরাজ আবদুল্লাহ আল মিরাজ , নিজস্ব প্রতিবেদক ফেনী থেকে
প্রকাশিত: ০৪:৩০ পিএম, ২৭ আগস্ট ২০২৪

ফেনী জেলায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ডুবে যাওয়া বাড়ি-ঘর ও এলাকাগুলোতে পানি কিছুটা কমেছে। তবে যে ক্ষত তা থেকে উঠা এখনো সম্ভব হয়নি। এলাকাগুলোতে এখনো ঘরে ফেরার উপক্রম হয়নি। নতুন করে মুছাপুরে ক্লোজার ভেঙে যাওয়ায় চর এলাকার বাড়ি-ঘর ভেঙে যাওয়ার ভয়ে আশ্রয়কেন্দ্র গুলোতে বেড়েছে ভিড়।

মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) সরেজমিনে দাগনভূঞা উপজেলার দাগনভূঞা বাজার, বেকের বাজার, সিলোনিয়া বাজার, ফাজিলের ঘাটসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় বড় মার্কেট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মাদরাসা, কলেজ ও বহুতল ভবনগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে হাজার হাজার মানুষ। এছাড়া প্লাবিত এলাকার বহুতল ভবনেও আশ্রয় নিয়েছে এলাকার বাসিন্দারা। ব্যবস্থা হয়েছে হেলথ কেম্পেরও।

বন্যাকবলিত দাগনভূঞাসহ আশপাশের এলাকায় খাবার সংকট চরমে

দেখা গেছে, এখানে বিএনপি, জামায়াত ইসলামী, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও বিত্তশালীরা এগিয়ে এসেছে মানুষের উপকারে। বিভিন্ন জন থেকে অর্থ ও খাদ্যসামগ্রী সংগ্রহ করে খাবার ব্যবস্থা করছে আশ্রয় নেওয়া মানুষের জন্য। ভলেন্টিয়াররা রাত-দিন পরিশ্রম করছেন। খাবার প্যাকেজিং করছে। কেউ ট্রাকে করে নৌকা করে পৌঁছে দিচ্ছে। আবার বিভিন্ন জায়গায় চুলা বসিয়ে আয়োজন করা হয়েছে রান্না-বান্নার।

স্থানীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দাগনভূঞা বাজারে উপজেলার প্রায় ১৫ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র গুলোতে অবস্থান নিয়েছে। এছাড়া এখানকার বিভিন্ন বহুতল বাড়িগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে অনেক মানুষ। তাদের তিনবেলা খাবার ব্যবস্থা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে এখানকার প্রতিনিধিদের।

দাগনভূঞাঁ উপজেলার স্থানীয় সাংবাদিক ইদ্রিস রিয়াদ জাগো নিউজকে জানান, এখানকার আশ্রয়কেন্দ্রে প্রচুর মানুষ আছে। গতকাল আরও বেড়েছে। এখানে বাজারে পানি উঠেনি। এই এলাকা উঁচু দেখে সবাই এখানে আশ্রয় নিয়েছে। তবে বাজার ছাড়া আশপাশের সব এলাকাই প্লাবিত। প্রথম দিকে ভেতরে গিয়ে খাবার দিতে কষ্ট হয়েছে। এখন সবার কাছে পৌঁছানো যাচ্ছে।

বন্যাকবলিত দাগনভূঞাসহ আশপাশের এলাকায় খাবার সংকট চরমে

তিনি জানান, এখন সবচেয়ে খারাপ বিষয় হচ্ছে খাবারের সংকট। বাড়ি-ঘরে নিজস্বভাবে যা রান্না-বান্না করতো তাদেরও সামর্থ্য পুরিয়ে এসেছে। আজ পর্যন্ত খাবার ব্যবস্থা করা যাবে। এরপর থেকে কী ব্যবস্থা হবে সঠিক জানা নেই। সবার কাছে অনুরোধ এখন এদিকে ত্রাণ নিয়ে আসলে মানুষগুলোর খাবারের ব্যবস্থা হবে। বিভিন্ন এলাকায় খবার বা ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার সময় এমন ঘটনাও ঘটেছে আমাদের ওপর তেড়ে এসে ত্রাণ নিয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, এখনো উপজেলার উত্তর দিক খুশিপুর, নেয়াজপুর, রাজাপুর, প্রতাপপুর এলাকা এখনো গলা সমান পানিতে। অন্যদিকে নতুন করে উপজেলার দক্ষিণ দিকে, আলি পুর, চৌধুরী হাট এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।

উপজেলা জামায়াতের আমির গাজী ছালেহ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের উপজেলা থেকে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে যোগাযোগ করে খাবার পাঠাচ্ছি। আশ্রয় কেন্দ্রে খাবারের আয়োজন করা হচ্ছে। বিভিন্ন মানুষ আমাদের এনে দিচ্ছে আমরা সমন্বয় করছি। তবে এখন ত্রানের সংকট দেখা দিয়েছে।

বন্যাকবলিত দাগনভূঞাসহ আশপাশের এলাকায় খাবার সংকট চরমে

বাজারে খাদ্যের তত্ত্বাবধানে থাকা ভলেন্টিয়াররা জানান, প্রতিদিন খাবার রান্না করে দেওয়া এবং অন্যান্য সব মিলিয়ে প্রায় ১০ লাখ টাকার মতো খরচ হচ্ছে শুধু বাজার ও এর আশেপাশের ভবনে খবার ও শুকনা খাবার, ওষুধ পত্র ও যাতায়াত মিলিয়ে। এখন খাবারের ব্যবস্থা আজ পর্যন্ত আছে। তবে আশা করি মানুষজন এগিয়ে আসবে।

আতাতুর্ক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আকবর জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের এখানে সংকট খাবারের। যা ব্যবস্থা ছিল তা শেষের দিকে। এখন ম্যানেজ করা কষ্ট হচ্ছে।

স্থানীয় প্রতিনিধি ও মানুষ ত্রাণ কার্যক্রমের জন্য এখানে বিভিন্ন সংস্থা ও বিত্তশালীদের দেখার আহ্বান জানিয়েছেন।

এএএম/এমআইএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।