১৫ পুলিশ হত্যা
সিরাজগঞ্জে আ’লীগ নেতাসহ আসামি ছয় হাজার
সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন চলাকালে থানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে ওসিসহ ১৫ পুলিশ সদস্যকে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদকসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ছয় হাজার জনকে আসামি করা হয়।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার (এসপি) আরিফুর রহমান মন্ডল এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জাগো নিউজকে জানান, ওই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল মালেক বাদী হয়ে রোববার রাতে এ মামলাটি দায়ের করেছেন।
মামলায় এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আহমদ মোস্তফা খান বাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, শাহজাদপুর উপজেলার খুকনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মুল্লুক চাঁন ও বেলকুচি উপজেলার ভাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম ভূইয়াকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত রয়েছে আরও পাঁচ থেকে ছয় হাজার আসামি।
মামলায় বলা হয়- এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আহমদ মোস্তফা খান বাচ্চুর বিভিন্ন সময়ে অবৈধ দাবি মেনে না নেওয়ায় পুলিশের ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার করা এক আসামিকে ছেড়ে দেওয়ার দাবি করেন বাচ্চু। পুলিশ ওই দাবি মেনে নেয়নি। পরে ওই আসামির বিরুদ্ধে মামলাও নেয় পুলিশ। এরপর বাচ্চুর নেতৃত্বে ৪৫০ থেকে ৫০০ জন অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারী থানা ঘেরাও করে। সেসময় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাককে অপসারণের দাবিও করেছিলেন তিনি। এরপর থেকেই আসামিরা থানা পুলিশের ক্ষতি করার সুযোগ খোঁজে।
এরই এক পর্যায়ে গত ৪ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে সরকার পতনের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা থানার সামনে সমবেত হয়। এ সময় ওসি আব্দুর রাজ্জাক হ্যান্ডমাইক দিয়ে সমবেত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার উদ্দেশে বক্তব্য দেন।
ওসি তার বক্তব্যে বলেন, এই থানা আপনাদের সাধারণ জনগণের। আপনাদের কাছে অনুরোধ থানার কোনো ক্ষয়ক্ষতি করবেন না। এ কথায় ছাত্র-জনতা চলে যায়। পরে ১নং আসামি আহমদ মোস্তফা খান বাচ্চুর নেতৃত্বে এজাহার নামীয় আসামিসহ পাঁচ থেকে ছয় হাজার দুষ্কৃতকারী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে থানায় হামলা চালায়। এতে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে। পরে আসামিরা পুলিশের কোয়ার্টার এবং ওসির বাসভবনে আগুন লাগিয়ে দেয়। এ আগুন দেখে পুলিশ সদস্যরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।
একই সময় আসামিরা থানা কম্পাউন্ডে উপ-পরিদর্শক (এসআই) তহছেনুজ্জামান, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) ওবায়দুর রহমান, কনস্টেবল আরিফুল আজম, রবিউল আলম শাহ, হাফিজুল ইসলাম, শাহিন ও রিয়াজুল ইসলামকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত করার পর পিটিয়ে হত্যা করে।
এক পর্যায়ে আসামিরা থানা ভবন ধ্বংস ও জীবিত পুলিশ সদস্যদের হত্যার উদ্দেশ্যে ভেতরে প্রবেশ করে পুলিশ ও জনসাধারণের জমা দেওয়া বেসরকারি অস্ত্র ও গুলি লুট করে। পরে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে থানার ভেতর ও বাইরে থাকা অফিসার এবং ফোর্সকে এলোপাতাড়ি গুলি করে। এ সময় থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক, এসআই আনিছুর রহমান, এসআই রহিজ উদ্দিন খান, এসআই প্রণবেশ কুমার বিশ্বাস, কনস্টেবল আব্দুল সালেক ও কনস্টেবল হানিফ আলী থানার পাশে বাবু মিয়ার বাড়িতে আশ্রয় নেন। পরে আসামিরা তাদের উপস্থিতি বুঝতে পেরে সেখানে গিয়ে তাদের কুপিয়ে হত্যা করে। এ সয়ম নারী কনস্টেবল রেহেনা পারভীনকে মারধর ও টানা হেঁচড়া করে শ্লীলতাহানিও করে তারা। পরে সেনাবাহিনীর একটি দল থানা এলাকায় পৌঁছে নিহত পুলিশ সদস্যদের মরদেহ উদ্ধার ও আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ঘটনায় একদিন পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুই পুলিশ সদস্য মারা যান।
এনায়েতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসিবুল্লাহ হাসিব জাগো নিউজকে বলেন, এ হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেফতারের জোরালো চেষ্টা চলছে।
এম এ মালেক/এফএ/জেআইএম