নোয়াখালীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, এ পর্যন্ত ৫ মৃত্যু

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নোয়াখালী
প্রকাশিত: ০২:৪১ পিএম, ২৬ আগস্ট ২০২৪

প্রবল বর্ষণ ও উজানের ঢলে নোয়াখালীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। জেলার প্রায় ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে খাদ্য সংকটে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এ পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সোমবার (২৬ আগস্ট) জেলা প্রশাসন সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

অন্যদিকে কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর রেগুলেটর ধসে যাওয়ায় এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, নোয়াখালীতে গত কয়েকদিনের ভয়াবহ বন্যায় জেলার ৯ উপজেলার মধ্যে ৮ উপজেলা আক্রান্ত হয়েছে। এরমধ্যে ৮৭ ইউনিয়ন ও ৭ পৌরসভার ১৯ লাখ ৮১ হাজার ৭০০ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। জেলায় এক হাজার ৯৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে এক লাখ ৮২ হাজার ৩০৯ জনকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।

এ পর্যন্ত সরকারিভাবে নগদ ৪৫ লাখ টাকা, ৮৮২ মেট্রিকটন চাল ও এক হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এখনো ৯১৮ মেট্রিকটন চাল মজুত রয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় বন্যায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। ৮৮টি মেডিকেল টিম বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করছে।

জেলা আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এতে বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

খবর নিয়ে জানা গেছে, জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এতে ২০ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট।

নোয়াখালীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, এ পর্যন্ত ৫ মৃত্যু

এদিকে বন্যায় বেড়েছে সাপের উপদ্রব। গত তিন দিনে নোয়াখালীতে ৬৩ জনকে সাপে কেটেছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে সাপে কেটেছে ২৮ জনকে। বন্যার কারণে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে ১০৮ জন।

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) সৈয়দ মহিউদ্দিন আব্দুল আজিম বলেন, মেডিকেল টিম ছাড়াও হাসপাতালে সার্বিক চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রাখা হয়েছে। চিকিৎসকরা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।

সেনবাগ উপজেলার বাসিন্দা খোরশেদ আলম জানান, ফেনীর মুহুরী নদীর উজানের পানি প্রবেশ করায় জেলার সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী উপজেলার আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব উপজেলায় গত দুদিন বৃষ্টি না হলেও উজানের পানিতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়। অনেক জায়গায় ঘরবাড়ি ও সড়ক তলিয়ে গেছে। স্কুলে ঢুকে পড়েছে পানি। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট।

কবিরহাটের বাসিন্দা মো. সফি উল্যাহ বলেন, বন্যা ও ভারী বর্ষণের কারণে কবিরহাটের সব রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে বন্ধ রয়েছে।

বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জেলার ৮টি উপজেলার প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। প্রতিটি বাড়িতে ৩ থেকে ৫ ফুট জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। নিচু এলাকাগুলোতে যার পরিমাণ ৬ থেকে ৭ ফুট। বসতঘরে পানি প্রবেশ করায় বাসিন্দারা নিকটস্থ কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। এলাকার সবগুলো প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় খুলে দেওয়া হয়েছে। বসত ও রান্নাঘরে পানি ঢুকে পড়ায় খাবার সংকটে রয়েছে বেশিরভাগ মানুষ। জেলার প্রধান সড়কসহ প্রায় ৮০ ভাগ সড়ক কয়েক ফুট পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। সড়কগুলোতে যান চলাচল অনেকটাই কম।

নোয়াখালীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, এ পর্যন্ত ৫ মৃত্যু

এছাড়া সোমবার ভোরে জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের ২৩ ভেন্ট রেগুলেটরটি সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। এতে সাগর থেকে লোকালয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে সমগ্র এলাকা প্লাবিত হওয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, রোববার গভীর রাতের দিকে রেগুলেটরে ফাটল ধরে। আজ ভোরে এটি মাঝ বরাবর দেবে গিয়ে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এতে আশপাশের এলাকায় ব্যাপক বন্যাতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহার এবং ফেনীর সোনাগাজী ও দাগনভূঞা উপজেলার মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসাইন পাটোয়ারী জাগো নিউজকে বলেন, রেগুলেটরের আশপাশের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া হচ্ছে। এরআগে কোম্পানীগঞ্জের ৬৭ আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৫ হাজার আশ্রিত থাকলেও এর সংখ্যা অনেক বেড়ে যাচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আমির ফয়সাল জাগো নিউজকে বলেন বলেন, রেগুলেটর ধসে গেলেও বন্যার পানি নিষ্কাশনে কোনো বাধা সৃষ্টি হবে না। তবে প্রতিদিনকার ৪ থেকে ৫ ফুট উচ্চতার জোয়ার আসলে আগে এ পানি লোকালয়ে প্রবেশ করতে পারতো না এখন তা লোকালয়ে প্রবেশ করবে।

জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এ মুহূর্তে বন্যা পরিস্থিতি আমি সরেজমিন পরিদর্শনে আছি। আমরা চেষ্টা করছি দুর্গত মানুষের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং টিমকে রেগুলেটর এলাকায় নিয়োজিত করা হচ্ছে।

ইকবাল হোসেন মজনু/এফএ/জেআইএম

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।