১০ বছর পর সাবেক রেলমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ছাত্রদল নেতার মামলা
রাজবাড়ীতে সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম, তার ছেলে মিতুল হাকিম ও থানার সাবেক ওসিসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা করা হয়েছে। রোববার (২৫ আগস্ট) দুপুরে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি আমলি আদালতে ছাত্রদল নেতা তুহিনকে অপহরণের পর নির্যাতন, মেরুদণ্ডের ডিস্ক ভাঙাসহ ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা আদায়ের অভিযোগে মামলাটি করেন জিয়া স্মৃতি পাঠাগার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক তুহিনুর রহমান।
এ সময় আদালতের বিচারক মৌসুমী সাহা মামলাটি আমলে নিয়ে শুনানির আদেশ দেন।
মামলার আসামিরা হলেন, রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক রেলমন্ত্রী ও রাজবাড়ী-২ আসনের এমপি মো. জিল্লুল হাকিম, বালিয়াকান্দি থানার তৎকালীন ওসি আবু সামা মো. ইকবাল হায়াত, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এহসানুল হাকিম সাধন, আওয়ামী লীগ নেতা ও বালিয়াকান্দি ইউপির সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নায়েব আলী, আওয়ামী লীগ নেতা নাছির উদ্দিন, নজরুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, নারুয়া ইউপির চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম, মো. কালাম ও রেলমন্ত্রীর ছেলে মিতুল হাকিম। এছাড়া এ মামলায় আরও তিনজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
জানা গেছে, মামলার বাদী তুহিনুর রহমানকে ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি বালিয়াকান্দি সরকারি কলেজ এলাকা থেকে তৎকালীন রাজবাড়ী-২ আসনের এমপি ও সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমের নির্দেশে মামলার অন্যান্য আসামিরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে একটি মাইক্রোবাসে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে আসামি নায়েব আলীর বাড়ির একটি নির্জন কক্ষে নিয়ে বালিয়াকান্দি থানার সাবেক ওসি আবু সামা মো. ইকবাল হায়াতসহ অন্যান্যদের সহায়তায় বাদীর পা উল্টা করে ঝুলিয়ে পা ও হাতের তালুতে বেত দিয়ে আঘাত করে মারাত্মক জখম করে। পরে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে বাদীর বাবাকে খবর দেয়। এ সময় চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মাটিতে ফেলে বাদীর মেরুদণ্ডে আঘাত ও বুট দিয়ে একাধিক লাথি মেরে মেরুদণ্ডের সি-৪ ও সি-৬ ডিস্ক ভেঙে ফেলে। এরপর তার হাতে ইলেকট্রিক শক মেশিন দিয়ে শক দিয়ে অজ্ঞান করে ফেলে রাখা হয়। ওই অবস্থা দেখে বাদীর বাবা ৫ লাখ টাকা চাঁদা দিলে ওসি থানায় নিয়ে পেন্ডিং মামলায় চালান দেন ছাত্রদল নেতা তুহিনকে।
এরপর তিনি জামিনে মুক্ত হয়ে ভারতের চেন্নাই, ভেলোর এবং ইবনে সিনা হাসপাতালে মেরুদণ্ডের অস্ত্রোপচার করে কৃত্রিম সি-৪ ও সি-৬ ডিস্ক স্থাপন করলেও সস্পূর্ণ সুস্থ হননি। তখন জরুরি অপারেশন সহ চিকিৎসা প্রয়োজন হয়। ওই সময় বাদীর পরিবার তার চিকিৎসার খরচ বহন করতে না পারায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহযোগিতা কামনা করেন। পরে তারেক রহমান তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। তখন তিনি মামলা করলে চাইলেও ক্রসফায়ারের হুমকি ও চিকিৎসার কারণে বিভিন্ন স্থানে থাকায় মামলা করেননি।
মামলার বাদী তুহিনুর রহমান বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী দুঃশাসনের বিদায় হয়েছে। আশা করছেন এখন তিনি ন্যায়বিচার পাবেন এবং সেই আশাতেই তিনি সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম, থানার সাবেক ওসি আবু শামাসহ ১০ জনের নাম উল্লেখসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী ও জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক মামলা দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করেন।
রুবেলুর রহমান/এফএ/জেআইএম