গাজীপুরে শেখ হাসিনা-কাদের-রাঙ্গার নামে হত্যা মামলা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি গাজীপুর
প্রকাশিত: ০৮:৩৪ এএম, ২৬ আগস্ট ২০২৪

গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানাধীন বড়বাড়ী এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া রংপুরের পীরগাছা এলাকার বাসিন্দা ও স্থানীয় রাজমিস্ত্রি হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ৮৫ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা রুজু হয়েছে।

ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে মামলাটি করেছেন রংপুর জেলার পীরগাছা থানার জুয়ান এলাকার বাসিন্দা মো. ইনছার আলী (৬৮)।

নিহতের নাম মো. মঞ্জু মিয়া (৪৩)। তিনি মো. ইনছার আলীর ছেলে। তিনি স্ত্রীসহ বাবার সঙ্গে গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানাধীন বড়বাড়ী এলাকায় জয়বাংলা রোডে মোয়াজ্জেম সরকারের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।

মামলায় কেন্দ্রীয় ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে রংপুরের আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাদেরও আসামি করা হয়েছে।

মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল (৭৬), রংপুরের পীরগাছা-কাউনিয়া এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য টিপু মুন্সি (৭৪), সাবেক মন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা (৭৩), গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান (৭০), সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল (৪৬), গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরন (৫৮), কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সাদ্দাম (৩৫) ও সাধারণ সম্পাদক ইনান (৩৪)।

মামলায় শেখ হাসিনাসহ প্রথম ১৯ জনকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে। মামলায় আরও ৫০০-৭০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মহানগর পুলিশের গাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলাম।

তিনি জানান, মামলাটি গত ২৪ আগস্ট রাতে রুজু করা হয়েছে। মামলায় মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রসহ বেআইনী জনতাবদ্ধে মারপিট করে গুরুতর জখম করাসহ গুলি করে মানুষ খুন করা ও হুকুম দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, নিহত মো. মঞ্জু মিয়া গাজীপুর মহানগরীর বড়বাড়ী এলাকায় ভাড়া থেকে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। মঞ্জু মিয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র-জনতার সমাবেশে যোগদানের উদ্দেশে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে গাছা থানাধীন বড়বাড়ী বাজারের সামনের রাস্তায় আসিয়া সমাবেশে অংশগ্রহণ করে। সেখানে আসামিদের জ্ঞাত ও অজ্ঞাত উশৃঙ্খল আসামিদের (কেন্দ্রীয় নেতাদের) নির্দেশ অনুযায়ী বন্দুক, পিস্তল, লাঠি, লোহার রড, রামদা, ছেন, চাপাতি, কোপা ইত্যাদি বিভিন্ন মারাত্মক দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বেআইনী জনতাবদ্ধে গত ২০ জুলাই দুপুর অনুমান ১২টার সময় গাছা থানাধীন কুনিয়া বড়বাড়ী সাকিনস্থ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে কাঁচাবাজারের সামনের রাস্তায় অবস্থানরত আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করে। মারপিট করে মো. মঞ্জুজু মিয়াসহ (৪৩) প্রায় ২৫-৩০ জন আন্দোলনকারীকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীলাফুলা ও কাটা রক্তাক্ত জখম করে।

এক পর্যায়ে উল্লেখিত আসামির নির্দেশে ৬নং আসামি মো. আজমত উল্লাহ খান ও ৭নং আসামি জাহিদ আহসান রাসেল সশরীরে উপস্থিত থেকে ও তাদের হুকুমে ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় অবৈধ পিস্তল ও বন্দুকধারী এজাহারনামীয় ও অজ্ঞাত নামীয় আসামিরা ছাত্র জনতাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করে। ওই সময় আসামিদের ছোড়া গুলিতে ঘটনার দিন দুপুর অনুমান সোয়া ১টার সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী মো. মঞজু মিয়ার (৪৩) পেটের বাম পাশে গুলি ঢুকে পেছন দিয়ে বের হয়ে যায়। ফলে তিনি গুরুতর রক্তাক্ত জখম অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

ঘটনার বিষয়ে সংবাদে পেয়ে মঞ্জু মিয়ার স্ত্রী মোসা. রহিমা বেগম (৩১) উপস্থিত ছাত্র-জনতার সহায়তায় চিকিৎসার জন্য দ্রুত শহীদ তাজ উদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় মঞ্জু মিয়াকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে ঘটনার দিন বিকেল সাড়ে ৪টার সময় মঞ্জু মিয়া মৃত্যুবরণ করে।

বাদী আরও জানান, মো. মঞ্জুর মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়ি রংপুর জেলার পীরাগাছা থানার জুয়ান গ্রামে দাফন সম্পন্ন করার পর দেশব্যাপী চলমান অস্থিরতা বিরাজমান অবস্থায় থানার কার্যক্রম স্থগিত থাকায় সুষ্ঠু ও সঠিক এবং ন্যায়বিচারের স্বার্থে বিবাদীর নাম ঠিকানা সংগ্রহের করে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে এজাহার দায়ের করতে বিলম্ব হলো।

আমিনুল ইসলাম/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।