ক্যাম্পে সমাবেশ, দেশে ফিরতে চান রোহিঙ্গারা
বাংলাদেশে আগমনের সাত বছর উপলক্ষে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সমাবেশ করেছেন রোহিঙ্গারা। রোববার (২৫ আগস্ট) ক্যাম্পে বিশাল সমাবেশের আয়োজন করা হয়। দিনটিকে ‘কালো দিবস’ আখ্যা দিয়ে ‘রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছেন তারা।
বেলা ১১টার পর থেকে মুষলধারা বৃষ্টি উপেক্ষা করে উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে ‘হোপ ইজ হোম’ ক্যাম্পেইন পালন করেন রোহিঙ্গারা। হাজার হাজার রোহিঙ্গার কণ্ঠে ‘মিয়ানমারে গণহত্যা বন্ধ করো’, ‘গণহত্যা বন্ধ করো’ স্লোগানে প্রকম্পিত হয় সমাবেশস্থল। তারা বলছেন, এ দেশে আর কত বছর থাকবো? আমরা মিয়ানমার ফিরে যেতে চাই।
‘হোপ ইজ হোম’ ক্যাম্পেইন উপলক্ষে সকাল থেকে লোকজন ক্যাম্পের ফুটবল মাঠে জড়ো হতে শুরু করেন। সমাবেশে পুরুষদের পাশাপাশি রোহিঙ্গা নারী, শিশুরাও যোগ দেন। পোস্টার, প্ল্যাকার্ডে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার দাবি তুলে ধরেন।
সমাবেশে দেওয়া রোহিঙ্গাদের পাঁচটি দাবি হলো অবিলম্বে আরাকানে রোহিঙ্গাদের ওপর সব ধরনের গণহত্যা, সহিংসতা ও হামলা বন্ধ করুন; নাগরিকত্বসহ মিয়ানমারের সব ধরনের বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের দ্রুত প্রত্যাবাসন এবং মিয়ানমার জান্তা ও আরাকান আর্মি উভয়কেই মানবাধিকার লঙ্ঘন ও রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে জবাবদিহিতা করতে হবে।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আরসি মেম্বার ছৈয়দ উল্লাহ, রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার কামাল, রহমত উল্লাহ, মাস্টার আবদুর রশিদ, মুহাম্মদ মুসা। আরাকানে জুলুম- নির্যাতনের বিচার ও নিরাপদ প্রত্যাবাসন কামনায় মোনাজাত করেন মাওলানা আবদুর রহমান।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা কামনা করে রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, এদেশে কোন সরকার এলো বা গেলো সেটা আমাদের মাথাব্যথার বিষয় নয়। তবে আমরা চাই এখানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকুক। কারণ এখানে রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকলে আমাদের আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে বেগ পেতে হবে। আমরা মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই। আমরা এ দেশে আর কত বছর থাকবো।
জান্তা সরকারের নিপীড়নের মুখে ২০১৭ সালে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর ২০১৮ সাল থেকে ২৫ আগস্টকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছেন রোহিঙ্গারা।
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করেছিল মিয়ানমার সরকার। কিন্তু সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে বর্তমানে রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে চলমান যুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে দুই পক্ষই। এতে প্রতিদিন মারা যাচ্ছেন বহু রোহিঙ্গা। যারা প্রাণে বেঁচে যাচ্ছেন তারাই নতুন করে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছেন। এতে আরও চাপ-বিপদ বাড়ছে বাংলাদেশের।
কক্সবাজারের উখিয়া আর টেকনাফ উপজেলায় এখন ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার বাস। দুই উপজেলায় স্থানীয় বাসিন্দা পাঁচ লাখের মতো। ফলে স্থানীয় জনগোষ্ঠী সেখানে এখন সংখ্যালঘু। অবনতি ঘটছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও। ক্যাম্পে ঘটছে মাদক, হত্যা, অপহরণ ও মানবপাচারসহ নানা অপরাধ।
বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩ ক্যাম্পে রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এরমধ্যে আট লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর কয়েক মাসে। রোহিঙ্গা ঢলের সাত বছর হলেও একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।
সায়ীদ আলমগীর/এসআর/জিকেএস