আশ্রয়কেন্দ্রে জন্ম নিলো ‘প্লাবন’, উপহার নিয়ে গেলেন ইউএনও
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেওয়া নারগিস আক্তার নামের এক প্রসূতি একটি ছেলেসন্তান জন্ম দিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা তার নাম রেখেছেন ‘আজমাইন রহমান প্লাবন’।
খবর পেয়ে রোববার (২৫ আগস্ট) দুপুরে উপহার নিয়ে শিশুটিকে দেখতে যান সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আঁখিনুর জাহান নীলা। এরআগে শনিবার (২৪ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে এ ঘটনা ঘটে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বন্যায় আক্রান্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী ধর্মপুর ইউনিয়নের বজু কারিগর বাড়ির আবদুর রহমানের সন্তানসম্ভবা স্ত্রী নারগিস আক্তারসহ পরিবারের লোকজন নোবিপ্রবির আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেন। পরে সেখানেই সন্তান জন্ম দেন নারগিস। পরে অনুরোধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বন্যার সঙ্গে মিলিয়ে নবজাতকের নাম রাখেন ‘আজমাইন রহমান প্লাবন’।
নবজাতকের বাবা আবদুর রহমান বলেন, ‘আমার স্ত্রীর কঠিন সময়ে শিক্ষার্থীরা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এ স্মৃতি কখনোই ভুলবার নয়। তাদের (শিক্ষার্থী) সঙ্গে আমাদের আত্মার সম্পর্ক তৈরি হলো। আবারও প্রমাণিত হলো মানুষ মানুষের জন্য।’
তিনি আরও বলেন, আমার স্ত্রী ও ছেলে ভালো আছে। তাদের জন্য দোয়া করবেন। ইউএনও ম্যাডাম আমার ছেলেকে দেখতে এসেছেন। আমি তার কাছেও কৃতজ্ঞ।
নবজাতক প্লাবনের মা নারগিস আক্তার বলেন, ‘আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েরা হলে থাকার সুযোগ করে দিয়েছে। আমাকে আর আমার বাচ্চাকে আদর-যত্ন করে আগলে রেখেছে। বন্যার সময় শরীর খারপ হওয়ায় দুশ্চিন্তায় ছিলাম। শিক্ষার্থীদের আল্লাহ যেন ফেরেশতা হিসেবে আমার কাছে পাঠিয়েছেন। তাদের অবদান আমি কখনো ভুলবো না।’
কথা হয় জেবাইদা খানম মারিয়া নামের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা আশ্রয়কেন্দ্রে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময় নারগিস আক্তারের প্রসব বেদনার খবর পাই। আমাদের ছেলে বন্ধু নাহিদ ও শাহীনুরের মাধ্যমে তাকে ২৫০ শয্যা নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে নরমাল ডেলিভারি মাধ্যমে ছেলেসন্তান জন্ম দেন নারগিস আক্তার।’
আরেক শিক্ষার্থী তামান্না ফেরদৌস তাম্মী বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ! মা ও নবজাতককে আমাদের হলে নিয়ে এসেছি। বাবুটার একটা নাম আমরা আমাদের ইচ্ছামতো দিতে পেরেছি। আমাদের অনেক ভালো লাগছে।’
ইউএনও আঁখিনূর জাহান নীলা জাগো নিউজকে বলেন, ‘খবর পেয়ে প্লাবনসহ আরও যে দুটি শিশু ছিল তাদের দেখতে গিয়েছি। শিক্ষার্থীরা খুবই ভালো কাজ করেছে। তারা প্রশংসার দাবিদার। আমরা যে বাংলাদেশ এতদিন চেয়েছিলাম, শিক্ষার্থীরা মনে হয় আমাদের সেদিকেই নিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, সদর উপজেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রসহ দুই শতাধিক আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। সবাই আমাদের মেহমান। আমরা সবার খোঁজখবর নেওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।
ইকবাল হোসেন মজনু/এসআর/জেআইএম