রক্ত বেচাকেনা চক্রের সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে হামলার শিকার দুই সাংবাদিক

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নওগাঁ
প্রকাশিত: ০৭:৫৬ পিএম, ২৪ আগস্ট ২০২৪
হামলার শিকার দুই সাংবাদিক

নওগাঁয় রক্ত বেচাকেনা চক্রের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন দুই সাংবাদিক। এসময় তাদের একটি কক্ষে প্রায় ২০ মিনিট অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।

শনিবার (২৪ আগস্ট) দুপুর ১টার দিকে শহরের স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় বলাকা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক এনামুল হকের নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয়।

আহতরা হলেন বণিক বার্তা ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টের জেলা প্রতিনিধি আরমান হোসেন রুমন এবং জাগো নিউজের কন্ট্রিবিউটিং প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম শামীম। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে হামলাকারীদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সংবাদকর্মীরা।

ভুক্তভোগী সাংবাদিক ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বুধবার (২১ আগস্ট) পায়ে ক্ষতজনিত সমস্যায় বলাকা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি হন জেলার পত্নীতলা উপজেলার আমাইড় ইউনিয়নের কান্তাকিসমত গ্রামের ৬৫ বছর বয়সী সুষুমা মন্ডল। এরপর সেখানে অপারেশন করানোর নামে রোগীর স্বজনদের তড়িঘড়ি করে দুই ব্যাগ এবি নেগেটিভ রক্ত ব্যবস্থা করতে বলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। একপর্যায়ে রক্ত সংগ্রহের নামে ছয় হাজার টাকা আদায় করা হয়। এই পুরো প্রক্রিয়ায় প্রকাশ্যে জড়িত ছিলেন ক্লিনিকের পরিচালক এনামুল হক ও ফার্মেসি বিভাগের ইনচার্জ অরূপ কুমার।

সম্প্রতি ওই ক্লিনিক থেকে বেরিয়ে রোগীদের ফাঁদে ফেলে এভাবে রক্ত বেচাকেনার বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য-প্রমাণ গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে উপস্থাপন করেন ভুক্তভোগী সুষমা মন্ডলের নাতি অপূর্ব কুমার। শনিবার দুপুর ১টার দিকে বলাকা ক্লিনিকে এ ঘটনার সংবাদ সংগ্রহে গেলে সাংবাদিক আরমান হোসেন রুমন ও মনিরুল ইসলাম শামীমের ওপর ক্ষিপ্ত হন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক এনামুল হক। একপর্যায়ে তার নেতৃত্ব হামলা চালানো হয়।

এরপর টানা ২০ মিনিটেরও বেশি সময় একটি কক্ষে দুই সাংবাদিককে অবরুদ্ধ করে রাখেন এনামুল হক। পরে সংবাদ প্রকাশ করা হলে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে সেখান থেকে সাংবাদিকদের বের করে দেন।

এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নওগাঁ ব্লাড সার্কেলের উপদেষ্টা সাঈদ জোবায়েদ অনিক। তিনি বলেন, বলাকা ক্লিনিকে ওই দুই সাংবাদিক প্রবেশের পর ফার্মেসি বিভাগের ইনচার্জের কাছে রক্ত বেচাকেনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি পরিচালককে ডেকে নেন। পরিচালক এনামুল হক সেখানে আসা মাত্রই সাংবাদিকদের ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন। তার সঙ্গে যোগ দেয় একদল সন্ত্রাসী বাহিনী। সবাই মিলে দুই সাংবাদিককে টেনে পরিচালকের কক্ষে নেওয়া হয়। সেখানে দুই সাংবাদিককে আটকে রেখে চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলায় জড়ানোসহ মেরে ফেলার হুমকি দেন পরিচালক এনামুল হক। ২০ মিনিট পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

হামলার শিকার সাংবাদিক আরমান হোসেন রুমন বলেন, বলাকা ক্লিনিকে প্রায়ই ভুল অপারেশনে রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এসব কারণে বেশ কয়েকবার ক্লিনিকটি বন্ধ করে দিয়েছিল স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে ক্ষমতাবলে এনামুল হক সেটি আবারও চালু করেন।

তিনি বলেন, রোগীদের জিম্মি করে রক্ত বেচাকেনায় নওগাঁ শহরে একটি চক্র কাজ করে। এ চক্রের সন্ধানে বের হলে চাঞ্চল্যকার তথ্য আসে এনামুল হকের বিরুদ্ধে। সে বিষয়ে কথা বলতে গেলে আমাদের মোবাইল ফোন, ক্যামেরা, মাইক্রোফোনসহ যাবতীয় ইকুইপমেন্ট কেড়ে নিয়ে হামলা চালান এনামুল। পরে সেখানকার একটি কক্ষে অবরুদ্ধ থাকার পর কৌশলে দুজন মুক্ত হতে পেরেছি।

সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম শামীম বলেন, অবরুদ্ধ অবস্থায় এনামুল ও তার পেটুয়া বাহিনী মোবাইলে আমাদের ভিডিও ধারণ করেছে। এই সংবাদ প্রকাশ করলে আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন তিনি। বর্তমানে আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

জানতে চাইলে বলাকা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক এনামুল হক বলেন, ‘ক্লিনিকে দুজন এসে নিজেদের সাংবাদিক পরিচয়ে রক্ত বেচাকেনার বিষয়ে নানান প্রশ্ন করছিল। তখন তাদের কাছ থেকে ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে অফিস কক্ষে বসিয়েছিলাম। এরপর দুজনকে বুঝিয়ে ফেরত পাঠিয়েছি। হামলা বা অবরুদ্ধ রাখার অভিযোগ সঠিক নয়।’

নওগাঁ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল হক বলেন, বলাকা ক্লিনিকে হামলার শিকার দুই সাংবাদিকের সঙ্গে কথা হয়েছে। অভিযোগ পেলে তদন্তসাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।