বাড়িতে হাঁটুপানি, চুলায় জ্বলেনি আগুন
ভারী বর্ষণে লক্ষ্মীপুরে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। খাল-বিল, ফসলের ক্ষেতসহ বসতবাড়িও ডুবে গেছে পানিতে। এ জেলার পার্শ্ববর্তী নোয়াখালী জেলার চরমটুয়া ও আন্ডারচর ইউনিয়নের জনজীবনও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ বাড়িতেই হাঁটুপানি। চুলায় আগুন না জ্বলায় পানিবন্দি থাকা প্রায় ৫০ হাজার পরিবারের রান্না-বান্না বন্ধ হয়ে পড়েছে।
সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ, কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের চরঠিকা গ্রাম (স্মার্ট ভিলেজ), রামগতি উপজেলার চরবাদাম ও চরপোড়া গাছা ইউনিয়ন ঘুরে পানিবন্দি বাসিন্দাদের দুর্দশার চিত্র দেখা যায়। তবে বাসিন্দাদের দাবি, অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে খালবিল মুক্তকরণসহ অবৈধ বাঁধ অপসারণ করলেই জলাবদ্ধতা রোধ হবে। এ জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে জোরালো পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে কমলনগরের চরকাদিরা ইউনিয়নের ভুলুয়া নদী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভুলুয়া নদীতে পানি থৈ থৈ করছে। যদিও শুষ্ক মৌসুমে এ নদীর বিস্তীর্ণ এলাকায় কোনো পানি দেখা যায় না। বৃষ্টির পানি জমে ভুলুয়া এখন পানিতে টইটম্বুর। একই সঙ্গে আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকাও ডুবে আছে বৃষ্টির পানিতে। অধিকাংশ বাড়িতেই হাঁটু পরিমাণ পানি জমে আছে। আবার অনেক বাড়িতে কোমর পরিমাণ পানি, ঘরেও ঢুকে পড়েছে। সেখানকার মানুষ উঁচু এলাকায় আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।
রামগতির চরপোড়াগাছা গ্রামের শেখের কিল্লা এলাকায় গিয়ে শতাধিক বাড়িতে হাঁটু পরিমাণ পানি দেখা যায়। ওখানকার বাসিন্দা ঝর্ণা বেগম ও আরিফ হোসেনসহ কয়েকজন তাদের দুর্দশার কথাগুলো বলেন। এরমধ্যে ঝর্ণা বেগম বলেন, একমাস আগ থেকে প্রায় প্রতিদিন চরপোড়াগাছায় বৃষ্টি শুরু হয়। এতে ২২ দিন ধরে তাদের বাড়ির উঠানসহ আশপাশের এলাকায় পানি জমতে শুরু করে। বাড়িতে হাঁটু পরিমাণ পানি। আমাদের ঘরে আরও ৫টি পরিবাকে আশ্রয় দিতে হয়েছে। গত কয়েকদিন ইট বসিয়ে রান্না করতে হয়েছে। এখন তাও সম্ভব হচ্ছে না। পানির কারণে আগুন জ্বলছে না। কেউ তাদের খোঁজ নিতেও যায়নি।
রামগতির চরবাদাম ইউনিয়নের বেঁড়িবাঁধ এলাকার পূর্ব পাশে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। যতদূর দেখা যায় সব পানি আর পানি। গণকবরস্থান ডুবে আছে।
চরপোড়াগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, আমার ইউনিয়নের আজাদনগরের দক্ষিণে স্টিল ব্রিজ এলাকায় নদী দখল করে কয়েকটি ঘর উঠানো হয়েছে। ঘরগুলোর কারণে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চরজব্বর ইউনিয়নে নদীটির তিনমুখী একটি এলাকায় পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়।
চেয়ারম্যান নুরুল আমিন আরও বলেন, প্রায় ২০ দিন ধরেই আমার এলাকার বহু মানুষ পানিবন্দি। অনেকের ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে লোকমান নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৩টি সাইক্লোন সেন্টারে অর্ধ-শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পানিবন্দি পরিবারগুলোর মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান বলেন, নদীতে ভাটা এলে জলাবদ্ধতা নিরসনে সবগুলো স্লুইস গেইট খুলে দেওয়া হয়। আবার জোয়ারের সময় গেইটগুলো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। সার্বক্ষণিক আমাদের কর্মীরা পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।
লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুরাইয়া জাহান বলেন, জেলায় শুকনো খাবার বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া আমাদের স্থায়ী ও অস্থায়ী ১৮৯টি সাইক্লোন সেন্টার প্রস্তুত রয়েছে। খালগুলোতে অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে দখল করে রেখেছে প্রভাবশালীরা। এতে পানি নামতে পারছে না। জনগণ আমাদের এ ব্যাপারে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছে। প্রশাসনের উপস্থিতি ও জনগণের সহযোগিতায় অবৈধ বাঁধগুলো কেটে দেওয়া হচ্ছে।
কে কে/এসআইটি/এমএস