জমি নিয়ে বিরোধ
দেশে অস্থিতিশীলতার সুযোগে ঘরে ঢুকে মারধর ও লুটপাটের অভিযোগ
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের সুযোগে পঞ্চগড়ে প্রতিপক্ষের হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের সর্বস্বান্ত হয়েছে তিনটি পরিবার। গত ৫ আগস্ট সদর উপজেলার পানিমাছ পুকুরি এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। মারপিটে আহতদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসাসহ গুরুতর আহতদের ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষরা সুযোগ নিয়ে ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে এখনো কোনো মামলা করা হয়নি।
ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, ৫ আগস্ট বিকেলের দিকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের ঘটনায় বাসায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে টেলিভিশন দেখছিলেন রশিদুল ইসলাম। হঠাৎ লাঠিসোঁটা দিয়ে একদল দুর্বৃত্ত তাদের ওপর হামলা করে। এক পর্যায়ে তারা ওই পরিবারের তিন বাড়িতে হামলা করে ঘরের দরজা, জানালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। তারা টাকা, পয়সা ও স্বর্ণালংকার লুট করে ঘরের বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। এমনকি ফ্রিজে রাখা মাছ, মাংসসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী, ঘরে রাখা চালের বস্তাও নিয়ে যায়।
এ সময় পরিবারের কেউ বাড়ি থেকে পালাতে পারেননি। পরে হামলাকারীরা রশিদুল ইসলামকে (৫৩) বেধড়ক মারধর করে। এতে তার ডান হাত ও দুই পা ভেঙে যায়। তার ভাই রফিকুল ইসলাম (৪৫) ও জিয়াউলের বাড়িতেও হামলা করে মারধর করা হয়। গুরুতর রশিদুল ও রফিকুলকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।
হামলার শিকার রশিদুল ইসলাম বলেন, হামলাকারীরা স্থানীয় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। তাদের সঙ্গে আমাদের জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। দেশের অস্থিতিশীলতার সুযোগ নিয়ে তারা অতর্কিত আমাদের ওপর হামলা করে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। তারা আমার স্ত্রীকেও মারধর করে। পরে আমি মারা গেছি ভেবে তারা আমাকে কয়েকটা লাথি মেরে ফেলে চলে যায়। আমি স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়ে ঢাকায় ১২ দিন চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরি।
স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, রশিদুল ভাইয়ের পরিবারের ওপর হামলার খবর শুনে আমরা কয়েকজন বাজার থেকে ছুটে আসি। তবে রাস্তায় লাঠি নিয়ে হামলাকারীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কাছে যাওয়ার সাহস পাইনি। শেষে দেখি, মানুষগুলো রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। আমরা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই।
হাফিজাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ ছিল। এরইমাঝে কয়েক দফায় মীমাংসা হয়। কিছু সমস্যা ছিল তা দিয়ে ৭ আগস্ট বসে সমাধান করতে চেয়েছিলাম। এর আগেই এমন হামলা মেনে নেওয়ার মতো না। জমি নিয়ে বিরোধ থাকতেই পারে, তাই বলে এমন হামলা কাঙিক্ষত নয়। তারা চাইলে এখনও আইনের আশ্রয় নিতে পারেন।
রশিদুলের ভাই রফিকুল ইসলাম বলেন, তারা আমাকে মেরে রক্তাক্ত করে আমার একটি পা ভেঙে দেয়। মা, স্ত্রীসহ পরিবারের নারী সদস্যদের বেধড়ক মারধর করে। বাচ্চাদের মুখ চেপে ধরে ভয় দেখায়। আমাদের সবকিছু লুটপাট করে নিয়ে যায়।
সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার রায় বলেন, পানিমাছ পুকুরির এমন ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সফিকুল আলম/এফএ/জেআইএম