ফেনীতে ভয়াবহ বন্যা

ডুবে গেছে ঘরবাড়ি, বিদ্যুৎ না থাকায় চরম ভোগান্তি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ফেনী
প্রকাশিত: ০২:৪০ পিএম, ২১ আগস্ট ২০২৪

ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে ফেনী। ভারী বৃষ্টি ও ভারতের উজানের পানিতে প্লাবিত হয়ে গেছে শতাধিক গ্রাম। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। একই সঙ্গে ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কে বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। এছাড়া লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজারো মানুষ।

সবশেষ বুধবার (২১ আগস্ট) দুপুরে মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে দেখা গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দেড় মাসের ব্যবধানে তৃতীয় দফায় বন্যার কবলে পড়েছে ফেনীর পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলা। গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টি ও ভারতের উজানের পানিতে মঙ্গলবার সকাল থেকে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙন দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে।

পরশুরামের সলিয়া এলাকার বাসিন্দা মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাদের ত্রাণের চেয়েও এখন নৌকা বা স্পিডবোট বেশি প্রয়োজন। বন্যা পরিস্থিতি এমন হবে কেউ বুঝতে পারেনি। এদিকে সোমবার রাত থেকে বিদ্যুৎ নেই। এছাড়া মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় বেশি ভোগান্তি দেখা দিয়েছে।

ডুবে গেছে ঘরবাড়ি, বিদ্যুৎ না থাকায় চরম ভোগান্তি

ফুলগাজীর উত্তর দৌলতপুর এলাকার বাসিন্দা শাহেদ হোসেন বলেন, রাত ৩টার দিকে বুক সমান পানি দিয়ে ছোট সন্তানকে মাথায় নিয়ে পরিবারসহ অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। চারদিকে থইথই পানি। ঘরবাড়ি সব ডুবে গেছে। জিনিসপত্র কোনো কিছুই বের করতে পারিনি।

কিসমত ঘনিয়ামোড়া এলাকার বাসিন্দা শাহাদাত হোসেন বলেন, ঘরের ছাদও পানিতে তলিয়ে গেছে। মানুষকে উদ্ধারে দুয়েকটি নৌকা কাজ করলেও পানির স্রোতের কারণে সম্ভব হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা বেশি প্রয়োজন। দুদিন ধরে বিদ্যুৎ, মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় আরও কষ্ট করতে হচ্ছে। এছাড়া ভারতের ত্রিপুরায় ডম্বুর গেট খুলে দেওয়া হয়েছে বলে জেনেছি। এতে এদিকে পানির চাপ আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম বলেন, নদীর পানি বিপৎসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতো পানি আগে কখনো দেখা যায়নি। মানুষকে উদ্ধারেও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। আমরা অসহায় হয়ে গেছি। পরিস্থিতি খুবই খারাপ। এখনো বৃষ্টির সঙ্গে পানি বাড়ছে।

ডুবে গেছে ঘরবাড়ি, বিদ্যুৎ না থাকায় চরম ভোগান্তি

এ ব্যাপারে পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা হাবিব শাপলা বলেন, উপজেলার চিথলিয়া, সলিয়া ও অলকা এলাকায় অনেক মানুষ আটকা পড়েছে। রাত থেকে ফায়ার সার্ভিস ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে উদ্ধার কাজ চলছে। কিন্তু নৌকার সংকট। পানির স্রোতের জন্য ঠিকভাবে কাজ করা যাচ্ছে না। এ মুহূর্তে স্পিডবোটের প্রয়োজন। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

ফেনী আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যবেক্ষক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ফেনীতে টানা তিনদিন মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। জেলায় ২৪ ঘণ্টায় ৯৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টা বৃষ্টি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা আছে।

এ বিষয়ে ফেনী জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ডের একটি টিম স্পিডবোট নিয়ে দ্রুতই বন্যা দুর্গতদের উদ্ধারে যাবে। জেলা শহর থেকে নদী পথ না থাকায় পরিবহনে করে স্পিডবোট নিতে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। এছাড়া সীমান্ত এলাকায় স্থানীয় বিজিবি সদস্যরা উদ্ধারে কাজ করছেন।

আবদুল্লাহ আল-মামুন/জেডএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।