দেশসেরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অর্ধযুগ ধরে নেই চক্ষু চিকিৎসক

আব্দুল্লাহ আল-মামুন
আব্দুল্লাহ আল-মামুন আব্দুল্লাহ আল-মামুন ফেনী
প্রকাশিত: ০১:৫৪ পিএম, ২১ আগস্ট ২০২৪

ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের র‌্যাংকিংয়ে বার বার দেশসেরা হওয়ার পরও এখনো ৪ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শূন্যপদ পূরণ হয়নি। বছরের পর বছর চক্ষু, চর্ম ও যৌন, নাক কান গলা ও অর্থোপেডিক্স বিশেষজ্ঞের পদ খালী পড়ে আছে এ প্রতিষ্ঠানে।

সর্বশেষ চলতি বছর জুন মাসে প্রকাশিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এইচএসএস র‌্যাংকিংয়ে হাসপাতালটি দেশের সেরা তালিকায় ৬ষ্ঠ স্থান অর্জন করে। স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত হাসপাতালটিতে ভবন সংকট, শয্যা সংকট ও জনবল সংকট সমাধান করে এটিকে দেশের মডেল হাসপাতালে রূপান্তর করতে হবে।

সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬০ সালের দিকে ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলায় স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানটি স্থাপিত হয়। পরবর্তীতে নানা সময়ে কর্মপরিধি বাড়িয়ে এর নাম দেওয়া হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন উপজেলার লাখ লাখ মানুষ এ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা নিয়ে আসছে। বর্তমানে হাসপাতালটিতে আউটডোর সেবা, ইনডোর সেবা, সার্জারি, সিজার, এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি সেবাসহ ৫০ শয্যার হাসপাতাল কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়াও হাসপাতালটিতে অতীব গুরুত্বপূর্ণ রোগীদের জন্য ১০ শয্যা বিশিষ্ট হাই ডিপেন্ডেন্স ইউনিট (এইচডিইউ) রয়েছে। হাসপাতালে আগত রোগীদের সঙ্গে থাকা বাচ্চাদের খেলাধুলা ও বিনোদনের জন্য স্থাপন করা হয়েছে কিড্স জোন। রয়েছে পুরুষ, মহিলা, শিশু ও গাইনী ওয়ার্ড। স্বল্প পরিসরে রাখা হয়েছে কেবিনও। বিভিন্ন সূচকে এগিয়ে থাকায় সর্বশেষ চলতি বছরও ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স দেশসেরা তালিকায় ৬ষ্ঠ স্থান অর্জন করেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানটির অবকাঠামোর অবস্থা খুবই নাজুক। হাসপাতালটির দুটি ভবন রয়েছে। পরিত্যক্তপ্রায় পুরাতন ভবনের নিচ তলায় প্রশাসনিক কার্যক্রম, জরুরি বিভাগ ও স্টোর রুম রয়েছে। দ্বিতীয় তলায় মহিলা ও শিশু ওয়ার্ড, শিশু কর্নার এবং এইচডিইউর কার্যক্রম চলছে। পেছনে স্থাপিত নতুন ভবনের নিচ তলায় আউটডোর, কনসালটেন্ট কক্ষ, আইসোলেশন ইউনিট রয়েছে। দ্বিতীয় তলায় অপারেশন থিয়েটার, গাইনি বিভাগ ও তৃতীয় তলায় কেবিন, এইচডিইউ ও পুরুষ ওয়ার্ড স্থাপন করা হয়েছে।

দেশসেরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অর্ধযুগ ধরে নেই চক্ষু চিকিৎসক

চিকিৎসাধীন আবুল কালাম বলেন, কয়েকদিন আগে অসম্ভব জ্বর ও গায়ে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। দুইদিন পর ডেঙ্গু টেস্ট করার পর পজেটিভ রিপোর্ট এলে আমাকে এ কক্ষে নিয়ে আসা হয়। এ হাসপাতালের সেবার মান ভালো। বিনামূল্যে বিভিন্ন রকমের ওষুধ দেওয়া হয়। রোগীদের বিষয়ে ডাক্তার-নার্সরাও আন্তরিক রয়েছেন।

হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুহিনা আক্তার মজুমদার বলেন, আমাদের এখানে নিয়মিত সিজারিয়ান অপারেশন, হার্নিয়া অপারেশন, অর্থোপেডিক্স অপারেশনসহ নানা সেবা কার্যক্রম চালু রয়েছে। এখানে বহির্বিভাগ ও ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদেরকে সরবরাহ সাপেক্ষে অন্তত ৫০-৬০ প্রকারের ওষুধ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়।

তবে ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শোয়েব ইমতিয়াজ নিলয় বলেন, বর্তমানে হাসপাতালটিতে ভবন সংকট, শয্যা সংকট ও জনবল সংকট রয়েছে। হাসপাতালের ২৯টি পদের বিপরীতে ২০ জন চিকিৎসক কর্মরত থাকলেও এখানে বিগত অর্ধযুগ পর্যন্ত চক্ষু, চর্ম ও যৌন, নাক কান গলা, অর্থপেডিক্স বিশেষজ্ঞ নেই। বর্তমানে আরও ৫ জন মেডিকেল অফিসারের পদও শূন্য রয়েছে। নার্স ৩৮ জনের মধ্যে ৯টি পদ শূন্য, তৃতীয় শ্রেণির ৭৪ জন কর্মচারীর মাঝে ৪০টি পদশূণ্য ও ৪র্থ শ্রেণির ২৫ জনের মাঝে মাত্র ৭ জন কর্মরত রয়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির জনবল সংকট কাটাতে স্থানীয় অর্থায়নে ৪ জনকে নিয়োগ দিয়ে মাস্টার রোলে কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, হাসপাতালটি ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করতে জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ জনবল, ভবন সংকটের বিষয়টি বার বার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।