বিনা চিকিৎসায় নির্যাতিত মিনহাজ : বহাল তবিয়তে অপরাধী
চট্টগ্রামে প্রতিবন্ধী শিশু নির্যাতনকারী কথিত যুবলীগ নেতা ইছহাক অপরাধ করেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নাকের ডগায় দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। অন্যদিকে বিনা চিকিৎসায় নির্যাতনের ক্ষত নিয়ে যন্ত্রনায় কাতর হয়ে দিন কাটছে প্রতিবন্ধী শিশু মিনহাজের।
জানা গেছে, মিনহাজের চাচার সঙ্গে আইপিএলের বাজিতে হেরে চুরির অপরাধে নির্মম নির্যাতন করার পরেও আইনের ফাঁকে আটকের দিনই ছাড়া পায় নির্যাতনকারী ইছহাক। ছাড়া পাওয়ার পরই এলাকায় ফিরে হুমকি দিতে থাকে মিনহাজের আত্মীয়-স্বজনকে। এমনকি পুলিশের সঙ্গে যোগসাজস করে বিনা চিকিৎসায় মিনহাজকে পাঠিয়ে দেয়া হয় তার গ্রামের বাড়ি আনোয়ারা বুরুমছড়ায় । নগরীর কোন হাসপাতালে যাতে চিকিৎসা নিতে না পারে সে জন্য ইছহাকের সহযোগীরা বসায় নজরদারি করে।
এদিকে অর্থাভাবে বিনা চিকিসায় পড়ে আছে শিশু মিনহাজ। যন্ত্রনায় কাতর মিনহাজের প্রতিটা মুহূর্ত কাটছে কষ্ট আর আতংকে। শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্নগুলো কালছে বর্ণ ধারণ করেছে।
মিনহাজের বড় ভাই মিজান জানান, টাকার অভাবে তার চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছে না। পুলিশ নগরীতে চিকিৎসা নিতে দেয়নি। নির্যাতনকারীর সাথে হাত মিলিয়ে মিনহাজকে গ্রামে নিয়ে আসতে বাধ্য করে। এজন্য থানায় সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়া হয়। এমনকি পুলিশ তাদের মামলাও নেয়নি। তাছাড়া মিনহাজের চিকিৎসার জন্য কোনো ক্ষতিপূরণও দেয়নি তারা।
এদিকে, মিনহাজকে নির্যাতনের ভিডিও চিত্রটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি নিয়ে প্রথম সংবাদ প্রকাশ করে জাগোনিউজ ২৪ ডটকম। এরপর বিভিন্ন অনলাইন ও সংবাদ মাধ্যম এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করলেও টনক নড়েনি প্রশাসনের। সংবাদ প্রকাশের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা না বলতে ভয় দেখানো হয় মিনহাজের পরিবারকে।
সম্প্রতি সরেজমিন পতেঙ্গা হাদীপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে ইছহাকের মালিকানাধীন এ ওয়াহাব ফাস্টফুড দোকানটি খোলা তবে ইছহাককে সেখানে পাওয়া যায়নি।
মিনহাজের এক চাচা তারেক জানান, ইছহাক তার সাথে আইপিএল খেলা নিয়ে বাজি ধরে ২৪ হাজার টাকার। বাজিতে ইছহাক হেরে গিয়ে মিনহাজের উপর প্রতিশোধ নেয়।
এদিকে এ প্রতিবেদকের হাতে মিনহাজকে নির্যাতনের যে ভিডিও ক্লিপটি রয়েছে তাতে দেখা যায়, দোকানদার ইসহাক মিনহাজকে লাথি, কিল-ঘুষি মারার এক পর্যায়ে তার গলায় পা দিয়ে চেপে ধরেন। এ অবস্থায় প্রাণ রক্ষার্থে মিনহাজ ইছহাকের পা ধরে ক্ষমা চায়। আকুতি জানায় যেন তাকে আর নির্যাতন করা না হয়। কিন্তু ইসহাক এতে আরো ক্ষিপ্ত হয়। তাকে একটি রশি দিয়ে পিছমোড়া করে বেঁধে ফের নির্যাতন করতে থাকে। পরে আহত অবস্থায় তাকে আটকে রাখে।
এসময় স্থানীয় শতাধিক মানুষ এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করলেও কেউ ওই শিশুটিকে নির্যাতন থেকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেনি। ওই সময় পালিয়ে যাওয়া হৃদয় এ ঘটনা তার পরিবারের সদস্যদের জানায়। এরপর ঘটনাস্থলে ছুটে যান নির্যাতনের শিকার মিনহাজের ফুফুসহ স্বজনরা। এবার দোকানদার ইসহাক আরো অগ্নিমূর্তি ধারণ করে।
ইছহাকের সঙ্গে এবার যোগ দেয় তার ভাই ফোরকান আলী (৫২)। দুই সহোদর মিলে আবারো পেটায় শিশু মিনহাজকে। শুধু তাই নয়, হাদিরপাড়ার বাসিন্দা আব্দুল ওহাবের দুই ছেলে মিনহাজের স্বজনদেরও নির্যাতন করতে তেড়ে আসে। এরপর শর্ত দেয়া হয়, মিনহাজকে ছেড়ে দেয়া হবে। তবে থানা পুলিশে ঘটনা জানানো যাবে না, মামলা করা যাবে না।
তাকে পাঠিয়ে দিতে হবে গ্রামের বাড়ি আনোয়ার থানার বরুমছড়ায়। এতে মিনহাজের স্বজনরা রাজি হন। আহতাবস্থায় ছেড়ে দেয়া হয় তাকে। কিন্তু বিপত্তি দেখা দেয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া শিশু মিনহাজের নির্যাতনের ভিডিও ক্লিপটি।
জানা গেছে, ইছহাক জামিনে বেরিয়ে এসে শিশু মিনহাজের নির্যাতনের মোবাইলে ভিডিও ধারণকারীকে খুঁজতে থাকেন এবং মামলা তুলে নিতে শিশু মিনহাজ ও স্বজনদের বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দেন। এমনকি মিনহাজকে নির্যাতনের ঘটনা যাতে গণমাধ্যমে না আসে তার জন্য এলাকায় গণমাধ্যম কর্মীদেরও প্রবেশে বাধা দেয়া হয়।
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জয়নাল আবেদিন বলেন, ইছহাক যদি এ ধরনের অন্যায় করে থাকে তাহলে তাকে আইনের আওতায় এনে বিচার করা উচিত।
তবে মামলা না নেয়া এবং মিনহাজকে চিকিৎসা না দেয়ার বিষয়ে এত সমালোচনার পরেও পতেঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ ইছহাককে একদিনের জন্য হলেও আটক করেছেন বলে কৃতিত্ব দাবি করেন। একজন প্রতিবন্ধী শিশুকে প্রকাশ্যে নির্যাতনের পরেও কিভাবে ইছহাক ছাড়া পেল এমন প্রশ্নের জবাবে পতেঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আলমগীর বলেন এটি আদালতের এখতিয়ার। আমার কিছু করার নেই।
কেন ইছহাকের বিরুদ্ধে শিশু নির্যাতনের ধারায় মামলা অর্ন্তভুক্ত করা হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি আলমগীর বলেন, শিশু নির্যাতনের কোনো আইন নেই। সে কারণে মারধর ও হত্যাচেষ্টার ৩২৩/৩২৪/৩৪২/৩০৭/৫০৬ (২)/৩৪ দণ্ডবিধিতে মামলা রুজু করা হয়।
উল্লেখ্য গত শনিবার (২৩ এপ্রিল) বিকেল চারটায় হাদীপাড়া ওয়াহাব মিয়ার বাড়ির সামনে মিনহাজকে নির্যাতনের এই ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার পর পুলিশ অভিযুক্ত ব্যবসায়ী ইছাহাককে গ্রেফতার করলেও এক দিনের মাথায় জামিনে বেরিয়ে আসেন।
এসকেডি/এমএস