৬ বছরেই বাবাকে হারালো শাম্মি, শোকে কাতর মেঘলা বেগম

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ফরিদপুর
প্রকাশিত: ০৫:৫৮ পিএম, ২০ আগস্ট ২০২৪
মা মেঘলা আক্তারের কালে শিশু শাম্মি আক্তার, ইনসেটে নিহত বাবা শামসু মোল্লা

ছয় বছরের শিশু শাম্মি আক্তার। এ বয়সে দুরন্তপনায় বাড়ি মাতিয়ে রাখার কথা থাকলেও সে নীরব। নিস্তেজ হয়ে গেছে শিশু। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকছে সে। আর ঘুরেফিরে খুঁজছে বাবাকে। যদিও তাকে জানানো হয়েছে তার বাবা আর বেঁচে নেই।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দিন ৫ আগস্ট বিকেলে পুলিশের গুলিতে মারা যান শিশু শাম্মি আক্তারের বাবা শামসু মোল্লা (৫২)। তিনি ফরিদপুর শহরের পূর্ব খাবাসপুর এলাকার বাসিন্দা।

শুধু শিশু শাম্মি আক্তার নয়, স্বামীকে হারিয়ে দু’চোখে যেন অন্ধকার দেখছেন মেঘলা বেগম (৩১)। কেননা পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন শামসু মোল্লা। এখন সামনের দিনগুলো কীভাবে চলবে, মেয়েকে কীভাবে বড় করবেন, পড়ালেখাইবা করাবেন কীভাবে, তা ভেবে দিশেহারা ও কাতর হয়ে পড়েছেন মেঘলা বেগম।

শামসু মোল্লা পেশায় একজন বাসচালক ছিলেন। তিন শতাংশ জমিতে টিনশেড বাড়িতে সপরিবারে বসবাস করতেন। শামসু-মেঘলা দম্পতির একমাত্র মেয়ে শাম্মি আক্তার। সে স্থানীয় বায়তুল আমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী।

মেঘলা বেগম বলেন, ‘আমার আর কিছু রইলো না। সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। মাথার ওপর কোনো ছাদ থাকলো না। সেই-ই ছিল আমাদের একমাত্র সম্বল। দুনিয়াতে আমাদের আর দেখার কেউ নেই।’

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শেখ হাসিনার সরকার পতনের দিন ৫ আগস্ট বিকেলে পুলিশের গুলিতে নিহত হন শামসু মোল্লা। ওইদিন বিকেলে একদল লোক ফরিদপুর কোতোয়ালি থানা দখল করতে গেলে পুলিশ গুলি চালায়। এসময় শামসু গুলিবিদ্ধ হন। গুলিটি তার নাক ও ঠোটের মাঝ দিয়ে ঢুকে মাথার পেছন দিয়ে বের হয়ে যায়।

পুলিশ কাদানে গ্যাসের শেল ও মুহুর্মুহু গুলি ছোড়ে। সংঘর্ষ চলে ঘণ্টাব্যাপী। গুলিবিদ্ধ শামসু চকবাজার বাদামপট্টি সড়কে এসময় পড়ে ছিলেন। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা এসে তাকে উদ্ধার করে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শামসু মোল্লাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মেঘলা বেগম বলেন, ‘ওইদিন বিকেল ৪টার দিকে আমি ও আমার স্বামী একসঙ্গে বাড়ি থেকে বের হই। তবে এটাই যে তার সঙ্গে আমার শেষ যাত্রা হবে তা কল্পনাও করিনি। পথে আমি দেবরের বাড়িতে নেমে যাই। আমার স্বামী শহরের দিকে ঘুরতে যান। এর একঘণ্টার মধ্যেই তিনি লাশ হয়ে গেলেন। আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই।’

স্থানীয় বাসিন্দা এ কে এম কিবরিয়া স্বপন বলেন, একটি করুণ মৃত্যু পরিবারটিকে শেষ করে দিলো। সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই।

এন কে বি নয়ন/এসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।