সাভারে আজও চাকরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভ, ৩ কিলোমিটার যানজট
সাভারে ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলসহ (ডিইপিজেড) অন্যান্য কারখানায় সমহারে পুরুষ শ্রমিক নিয়োগের দাবিতে টানা তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। এসময় ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আহসান কবীরের পদত্যাগও দাবি করেন তারা।
তবে বেপজা বলছে, কোনো বৈষম্য নয়, নিয়মের ভিত্তিতেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ডিইপিজেডে ৫১ শতাংশ নারী ও ৪৯ শতাংশ পুরুষ শ্রমিক কাজ করছেন।
সোমবার (১৯ আগস্ট) সকালে বিক্ষোভকারীরা ডিইপিজেডের নতুন ও পুরাতন জোনের প্রধান ফটক দুটিতে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের কারখানায় প্রবেশে বাধা দেন। পরে তারা নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এসময় সড়কটিতে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট দেখা দিয়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন সড়কে চলাচলরত যাত্রী ও পথচারীরা।
এমন খবর শিল্পাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়লে জিরানী, কবিরপুর, বাড়ইপাড়া, চক্রবর্তীসহ বেশ কয়েকটি এলাকার বেশিরভাগ কারখানা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে।
আমজাদ হোসেন নামের আন্দোলনরত এক চাকরিপ্রত্যাশী বলেন, ‘যোগ্যতা থাকতেও চাকরি মিলছে না। কারখানা কর্তৃপক্ষ সাফ জানিয়ে দেয়, কোনো পুরুষ নেওয়া হবে না; নারীদের নেওয়া হবে। শুধু দু-একটিতে নয়, এমন আচরণ সব কারখানায়। বারবার চেষ্টা করেও চাকরি মিলছে না।’
আরেক চাকরিপ্রত্যাশী আশরাফুল বলেন, ‘শিল্পাঞ্চল হলেও পুরুষের কদর কম বেশিরভাগ কারখানায়। কারখানাগুলোতে জরিপ করলেই বোঝা যাবে আমরা পুরুষরা কতটা অসহায়।’
এদিকে বিক্ষোভের খবর পেয়ে এলাকাগুলোতে শিল্প পুলিশ সর্তক অবস্থানে রয়েছে। মোতায়েন রয়েছে সেনাবাহিনী ও বিজিবি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিল্প পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এনিয়ে টানা তৃতীয় দিনের মতো আন্দোলন করছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালকের পদত্যাগসহ শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমানুপাতিক হার নিশ্চিতের বিষয়টিও রয়েছে। এছাড়া আরও কিছু দাবি তাদের রয়েছে।’
আশুলিয়া শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে আছি। আজও একই দাবিতে তারা আন্দোলন করছেন। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।’
এ বিষয়ে জানতে ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আহসান কবীরের ফোনে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে বেপজার তথ্য বলছে, ঢাকা ইপিজেডে মোট শ্রমিক ৭৯ হাজার ৫৮৮ জন। যার মধ্যে নারী শ্রমিক ৪০ হাজার ৮১৮ জন, পুরুষ ৩৮ হাজার ৭৭০ জন। অর্থাৎ ৫১ শতাংশ নারী ও ৪৯ শতাংশ পুরুষ শ্রমিক কর্মরত এখানে।
বেপজার নির্বাহী পরিচালক (জনসংযোগ) আনোয়ার পারভেজ বলেন, ইপিজেডে যোগ্যতার ভিত্তিতে শ্রমিক নেওয়া হয়। এখানে নারী-পুরুষের ভেদাভেদ করা হয় না। কোনো প্রতিষ্ঠানে যেমন-গার্মেন্টসে হয়তো নারী শ্রমিক বেশি দরকার, সেখানে কিছুটা নারী শ্রমিক বেশি। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে-যেমন সোয়েটার বা অ্যাকসেসরিজ টাইপের, যাদের পুরুষ শ্রমিক বেশি দরকার, সেখানে পুরুষই নেওয়া হয়।
‘উদাহরণস্বরূপ বলি, একটি গার্মেন্টসে হয়তো নারী শ্রমিক ৮০ শতাংশ। আবার দেখা গেছে, ঢাকা ইপিজেডের একটি অ্যাকসেসরিজ কারখানায় পুরুষ শ্রমিক ৯১ শতাংশ। এভাবে মোট শ্রমিকের ৫১ শতাংশ নারী আর ৪৯ শতাংশ পুরুষ’, যোগ করেন আনোয়ার পারভেজ।
বিপজার এই কর্মকর্তা আরও বলেন, “বিক্ষোভ প্রদর্শনকারী কথিত চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে বেপজার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা, সহনশীলতা ও সহানুভূতির সঙ্গে সুষ্ঠু সমাধানে চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে কিছু গ্রুপের সঙ্গে যখন কথা বলা হচ্ছে, পেছনেই আরেকটা গ্রুপ আগেই ‘মানি না’ বলে স্লোগান দিচ্ছে। একেক গ্রুপ একেক সময় একেক বক্তব্য উপস্থাপন করছে। শুধু তাই নয়, চাকরিপ্রার্থী বিক্ষোভকারীদের অনেকের কাছেই সিভি চাইলে দেখা যাচ্ছে তারা সিভি না দিয়ে পেছনে চলে যাচ্ছেন।”
বর্তমানে নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর যখন দেশে সবক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে অর্থনীতির গতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে, তখনই চাকরিপ্রত্যাশীদের এই আন্দোলন ইপিজেডের স্বাভাবিক কর্মপরিবেশ ব্যাহত করছে বলেও জানান বেপজার নির্বাহী পরিচালক আনোয়ার পারভেজ।
মাহফুজুর রহমান নিপু/এসআর/এএসএম