‘ভাইতো মারা গেছে, এখন যৌতুকের টাকা কে পরিশোধ করবে?’

রবিউল হাসান
রবিউল হাসান রবিউল হাসান লালমনিরহাট
প্রকাশিত: ১১:৪২ এএম, ১৯ আগস্ট ২০২৪

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ৫ আগস্ট দুপুরে ঢাকার সাভারে ছাত্রদের মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন সুজন হোসেন (২৩)। এরইমধ্যে সুজন ইসলামের ফোন বন্ধ পেয়ে খুঁজতে থাকেন স্বজনরা। পরে গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজার পর মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তার মরদেহের সন্ধান পান প্রতিবেশী মোস্তফা মিয়া। এরপর ৬ আগস্ট সন্ধ্যায় নিজ বাড়িতে তার দাফন সম্পন্ন হয়।

নিহত সুজনের বাড়ি লালমনিরহাটে হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নের পশ্চিম সারডুবী গ্রামের ৩নং ওয়ার্ডে। তিনি উপজেলার শহিদুল ইসলাম ও রেজিয়া বেগমের সন্তান। একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় বাবা-মা। সুজন হোসেনের চার বোন রয়েছে। চার বোনের বিয়ে হলেও সবার ছোট বোন পাকিজা খাতুনের যৌতুকের ৮০ হাজার টাকা বাকি থাকায় দুই মাস আগে স্ত্রী ও শিশু সন্তানকে শ্বশুরবাড়িতে রেখে ঢাকায় আসেন তিনি। চাকরি করে ওই ৮০ হাজার টাকা পরিশোধ করার কথা ছিল সুজন হোসেনের। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ঢাকা থেকে মরদেহ হয়ে ফিরতে হলো তাকে।

নিহত সুজন হোসেনের জায়গা জমি বলতে কিছুই নেই। মাত্র চার শতক জমির ওপর তাদের বসতভিটা। সেই জমির পাশেই সুজন হোসেনকে দাফন করা হয়েছে। বাবা শহিদুল ইসলাম প্রতিবন্ধী। কোনো কাজকর্ম করতে পারেন না। সুজন আশুলিয়ায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। সেই টাকাতেই চলতো সংসার।

‘ভাইতো মারা গেছে, এখন যৌতুকের টাকা কে পরিশোধ করবে?’

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তাদের বাড়ির চুলা জ্বলেনি কয়েকদিন। প্রতিবেশীদের দেওয়া খাবার খেয়ে দিন পার করছে পরিবারটি। জরাজীর্ণ ঘরবাড়িতে বসবাস করছেন বাবা মা। একটু পরপর মা ও বোন ছুটে আসছেন সুজনের কবরে। অঝরে কাঁদছেন তারা।

বোন পাকিজা খাতুন বলেন, ‘আমার ভাইয়ের হত্যাকারীর বিচার চাই। একমাত্র ভাই আমাদের সবাইকে বিয়ে দিয়েছে। ভাই ছাড়া আমাদের পরিবার অন্ধকার। আমার বিয়ে হয়েছে। ছয় মাসের একটি শিশু আমার কোলে। স্বামীর বাড়ির লোকজন যৌতুকের ৮০ হাজার টাকার জন্য আমাকে বাবার বাড়িতে রেখে গেছে। ভাইতো মারা গেছে, এখন যৌতুকের টাকা কে পরিশোধ করবে?’

মা রেজিয়া বেগম বলেন, ‘পড়াশোনা করে গার্মেন্টসে চাকরি নিয়েছিল আমার ছেলে। মাসের শেষে যে টাকা পাঠায় সেটা দিয়ে সংসার চলে।’ এটা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

সুজনের বাবা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আন্দোলনের ডাক আসার পর আমার ছেলে মিছিলে যায়। পুলিশ গুলি করে তাকে হত্যা করে। আমি একজন প্রতিবন্ধী। জায়গা জমি বলতে কিছুই নেই। সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। তাই বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের আবেদন করছি।’

বড়খাতা ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শাহ মোজাব্বের হোসেন বল্টু জাগো নিউজকে বলেন,পরিবারটি খুবই অসহায় ও গরিব। সুজন হোসেন পরিবারটিকে চালাচ্ছিলেন। তার বাবাও প্রতিবন্ধী। সমাজের বিত্তবানদের পরিবারটিকে সহায়তার জন্য এগিয়ে আসার অনুরোধ করছি।

এদিকে ঢাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে লালমনিরহাটের তিন শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় লালমনিরহাট জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে তিন পরিবারকে ৬০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে।

লালমনিরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক জাগো নিউজকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে লালমনিরহাটের তিন শিক্ষার্থী পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ওই তিন শহীদ পরিবারকে বিশ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়েছে। পরবর্তীতে আমরা আবারো আর্থিক অনুদান দেওয়ার চেষ্টা করবো।

এফএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।