পটুয়াখালীতে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের টাকায় নদী ভরাট
কোনো ধরনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের টাকায় কাশিপুর নদী (করাতখালী খাল) ভরাট হয়েছে। এতে করে দখল হয়ে গেছে প্রবাহমান নদীর একটি অংশ। আর এই ভরাট কার্যক্রম পুরোটাই তদারকি করছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা আ স ম ফিরোজ। কাশিপুর নদীটি পটুয়াখালী সদর ও বাউফল উপজেলার মাঝে অবস্থিত।
বাউফল উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, কাশিপুর খেয়াঘাট সংলগ্ন মাছ বাজারের উন্নয়নের জন্য ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ‘কাবিটা’ প্রকল্পের আওতায় দেওয়া হয় এই বরাদ্দ।
এরপর বাজার উন্নয়নের নামে নদীর মধ্যে গাছের খুঁটি দিয়ে পাইলিং করে বালি দিয়ে ভরাট করা হয়। তবে নথিপত্রে নদী ভরাটের বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। বালি ভরাট কার্যক্রম বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ স ম ফিরোজ নিজে উপস্থিত থেকে উদ্বোধন করেন।
এদিকে বরাদ্দ দেওয়া ৩৫ লাখ টাকা দিয়ে কি কি কাজ করা হবে কিংবা কীভাবে এই অর্থ ব্যয় হবে সে বিষয় বিস্তারিত তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রাজিব বিশ্বাস।
স্থানীয়রা জানান, পটুয়াখালী থেকে লোহালিয়া হয়ে বাউফল উপজেলায় যাতায়াতের বিকল্প পথ এবং পানি ব্যবস্থাপনার জন্য ৯০ এর দশকে কাশিপুর স্থানে বাধ দিয়ে স্লুইস গেট তৈরি করা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, নদীর অস্তিত্ব এবং পানি প্রবাহ থাকলেও দক্ষিণ পাশে ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সৃষ্টি এবং পলি পরে নদীর দক্ষিণ পাড় ভরাট হয়েছে। আবার কিছু কিছু স্থানে নদী পাড়ের মানুষরা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেন। এরমধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে বাধের দক্ষিণ পাশে নদীর মধ্যে বিশাল একটি এলাকা বালি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা আ স ম ফিরোজের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি।
পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. নূর কুতুবুল আলম বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাবিটা প্রকল্পের আওতায় ‘কাশিপুর খেয়াঘাট মাছ বাজারের টেকসই উন্নয়ন’ নামে একটি প্রকল্প থেকে কাজটি করা হয়েছে। জায়গাটি যদি নদীর জমি হয়ে থাকে তবে অন্য কাজে ব্যবহারের সুযোগ নেই। এরপরও এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। নদীতে বালি ভরাট করা হলে অবশ্যই তা অপসারণ করতে হবে।
এদিকে স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৯০ এর দশকে কাশিপুর নামক স্থানে বাধ দিলেও ২০১৪ সালেও এই স্থানটি প্রবাহমান নদীর একটি অংশ ছিল।
আব্দুস সালাম আরিফ/জেডএইচ/জিকেএস