পলাতক মেয়র-কাউন্সিলর
থমকে গেছে খুলনা সিটি করপোরেশনের সব উন্নয়ন প্রকল্প
থমকে গেছে খুলনা সিটি করপোরেশন ও খুলনা ওয়াসার সব উন্নয়ন প্রকল্প। খুলনা সিটি করপোরেশনের অবস্থা এমন হয়েছে যে, একটি কলমও কেনা সম্ভব হচ্ছে না। এতে ৭০টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন কর্মকর্তারা।
সিটি করপোরেশন ও ওয়াসার অত্যন্ত ধীরগতির এসব উন্নয়ন কাজের জন্য গত এক বছরের অধিক সময় ধরে প্রায় সব ছোটখাটো সড়কে যান চলাচল শতকরা ১০ ভাগে নেমে আসে। খুঁড়ে বিশাল গর্ত করে রাখায় এবং সেগুলো যথাযথভাবে বন্ধ না করে কাজ বন্ধ করায় এখন আরও কমে যাচ্ছে যানবাহন চলাচল। এতে করে নগরবাসীকে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
খুলনা ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে নগরীতে পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্পের কাজ শুরু করে খুলনা ওয়াসা। দুই হাজার ৩৩০ কোটি টাকা মূল্যের কাজ করতে গিয়ে নগরীর প্রায় সব সড়ক খুঁড়ে পাইপলাইন ও ট্যাংকি নির্মাণের কাজ শুরু করে ওয়াসা। ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে এই কাজ শেষ করার কথা।
তবে সিটি নির্বাচন ও জাতীয় নির্বাচনের জন্য মাঝে কয়েকমাস কাজ বন্ধ রাখে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। এরপর আবার শুরু হয় খোঁড়াখুঁড়ি। অত্যন্ত ধীরগতির এই কাজে খুলনা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ নতুন যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করে অনেক পুরাতন যন্ত্রপাতি দিয়ে কাজ চালাতে শুরু করে। এতে সড়কগুলোর অবস্থা একেবারে বেহাল হয়ে যায়। অদক্ষ শ্রমিক দিয়ে কাজ করানোর ফলে অনেক এলাকায় ছোট ট্যাংকির স্থলে পুকুরের আকার ধরণ করে সড়কের গর্তগুলো। এতে করে সড়কের পাশের অনেক বাড়িঘর ঝুঁকির মুখে পড়ে যায়। ধসে পড়ে অনেক বাড়ির দেওয়াল।
এই সড়ক মেরামত করার জন্য খুলনা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ ২-৩ দফায় খুলনা সিটি করপোরেশনকে ৯২ কোটি টাকা পরিশোধ করে। তবে অজ্ঞাত কারণে খুলনা সিটি করপোরেশন সড়ক মেরামতে উদাসিনতা দেখায়। ফলে গত এক বছরের বেশি সময় ধরে এসব সড়কগুলোতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
অতিসম্প্রতি ৩০ সড়ক মেরামতের জন্য কার্যাদেশ দেয় খুলনা সিটি করপোরেশন। কিন্তু সড়ক মেরামতেও গড়িমসি দেখা যায় ঠিকাদারদের মধ্যে। খোয়া ফেললেও তা রোলার না করে দীর্ঘদিন ধরে ফেলে রেখেছেন ঠিকাদাররা। এরমধ্যেই সরকার পরিবর্তন হওয়ায় অনেক ঠিকাদার আত্মগোপনে চলে গেছেন বলে জানা গেছে।
নগরীর টুটপাড়া মেইন রোডের বাসিন্দা রানা ফেরদৌস বলেন, সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে রাস্তার দুই পাশে খুঁড়ে ফেলা হয়। এতে করে অনেক বাড়ির লোকজনের বাড়ি থেকে বের হওয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে। এরপর ওয়াসা পাইপ স্থাপন ও ট্যাংকি নির্মাণের জন্য রাস্তা খুঁড়ে ফেলায় বাড়ি থেকে কোনো রকমে আগে বের হওয়া গেলেও এবার চলাচলই বন্ধ হয়ে যায়।
ইজিবাইক চালক হায়দার বলেন, এই সড়কে ইজিবাইক চালিয়ে অনেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে মোটামুটি চলতে পারছিলেন। কিন্তু সড়কটিতে এখন একটা বাইসাইকেলও চলতে পারে না। ইজিবাইক চালাতে না পেরে অনেক চালক পরিবার পরিজন নিয়ে খুব বেকায়দায় রয়েছেন।
খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ জানান, সড়কে তাদের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। ঠিকাদার ও তার লোকজন কাজ করতে চাচ্ছেন না।
অন্যদিকে খুলনা সিটি করপোরেশনের ড্রেনেজ প্রকল্প চলাকালে সড়কগুলো খুলনা ওয়াসা খুঁড়ে ফেলায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে যাওয়া সড়কগুলোতে ধীরগতির কাজও বন্ধ হয়ে গেছে।
এদিকে গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে মেয়র ও কাউন্সিলররা সিটি করপোরেশনে যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছেন। যাবতীয় অর্থ লেনদেনের ক্ষমতা সিটি মেয়রের হাতে থাকায় এখন অনেক কাজে ধীরগতি নেমে এসেছে। বর্তমানে মেয়র ও কাউন্সিলররা এলাকাতে নেই বলেও জানা গেছে।
খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (যুগ্ম-সচিব) লস্কার তাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের অনেক কাজ আটকে গেছে। করপোরেশনের তেলের পাম্প জ্বালিয়ে দেওয়ার ফলে কয়েকদিন আমারা নগরী থেকে ময়লা আবর্জনা সরাতে পারিনি। এখন ধার করে জ্বালানি কিনে ময়লার গাড়িগুলো পরিচালনা করছি।
তিনি বলেন, আমাদের বর্তমানে নগরীতে ৭০টি প্রকল্প চলমান। সবগুলো প্রকল্পই বলতে গেলে থমকে গেছে। মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। মেয়র আর কাউন্সিলররা কবে নির্বাচিত হয়েছেন, কবে তারা যোগদান করেছেন এসব জানতে চেয়েছে। আমরা তাদেরকে সেইসব তথ্য প্রদান করেছি। কিন্তু অর্থ লেনদেন করতে না পারলে আমাদের কাজ একেবারে থমকে যাবে। আমরা এখন করপোরেশনের টাকা দিয়ে একটা কলমও কিনতে পারছি না।
এফএ/এমএস