এখনো আতঙ্ক কাটেনি মেসের শিক্ষার্থীদের
গাইবান্ধায় মেসে থাকা শিক্ষার্থীদের আতঙ্ক এখনো কাটেনি। জেলার বিভিন্ন মেসে গিয়ে মোবাইল ছিনতাই, মারধর, টাকা লুট করে শিক্ষার্থীদের মেস ছাড়তে বাধ্য করার পর এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে তাদের মধ্যে।
গত ১৭ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে কর্মসূচিতে অংশ নেন গাইবান্ধার সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে শহরের ১নং রেলগেটে আওয়ামী লীগের নেতারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। তখন আন্দোলনকারীরা চড়াও হয়ে আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা চালান। সেসময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক, গাইবান্ধা পৌরসভার মেয়র মতলুবর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা কামাল হোসেন, খান মোহাম্মদ জসিমসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। বিষয়টি পুরো শহরে ছড়িয়ে পড়লে জেলার বিভিন্ন মেসে মেসে গিয়ে মোবাইল ছিনতাই, মারধর, টাকা লুট করে তাদের হুমকি দিয়ে মেস ছাড়তে বাধ্য করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
গাইবান্ধা সরকারি কলেজ, মহিলা কলেজ, একেএস স্কুল এন্ড কলেজ, আহম্মেদ উদ্দিন শাহ্ শিশু নিকেতন স্কুল এন্ড কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে শহরের কলেজ পাড়া, ফয়জারের মোড়, টাবু পাড়া, সুন্দর জাহান মোড়, পলাশপাড়া, থানা পাড়া, খানকা শরিফ ও স্টেশন এলাকায় কমপক্ষে শতাধিক মেস রয়েছে। এসব মেসে অনন্ত দেড় হাজার শিক্ষার্থী থাকেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, মেসগুলোতে শিক্ষার্থীরা আসা শুরু করেছেন। তবে ওইসব এলাকায় সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীরা ভয়ে অপরিচিত লোকজনের সঙ্গে কথা বলছেন না।
কলেজপাড়ায় মেসে থাকা শিক্ষার্থী মো. রোমান মিয়া বলেন, কোটা সংস্কার দাবি আদায়ের জন্য সকল শিক্ষার্থীর মতো আমিও গিয়েছিলাম। জুলাই মাসের ১৭ তারিখে মেয়র মতলুবর রহমান আহত হওয়ার পর তার নেতাকর্মীরা কলেজপাড়ার মেসগুলোতে ঢুকে শিক্ষার্থীদের মারধর করে মোবাইল ও টাকা নিয়ে মেস থেকে বের করে দেন। সেই দিনের ভয়ঙ্কর হামলার কথা মনে হলে এখনো রাতে ঘুম ধরে না। মেয়রের লোকজন এর আগেও মেসে মেসে চাঁদা নিয়েছেন। ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি। আবার মেসে গেলে হামলা করে কি না ভয়ে আছি।
থানা পাড়ায় মেসে থাকা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, আমরা কোটাবিরোধী আন্দোলনে যাওয়ার কারণে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মেসের মালিককে হুমকি দিয়েছেন আমাদের মেস থেকে বের করে দেওয়ার জন্য। শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে গেলেও নেতাকর্মীরা ঘাপটি মারে আছে। এখনো ভয়ে আছি।
শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি ৮ তারিখে মেসে আসছি। কলেজপাড়া এলাকায় মেয়রসহ তার লোকজন রাত ও দিনে শোডাউন দিচ্ছেন, আমাদের ভয় লাগছে। এর আগেও আমাদের শিবিরের ট্যাগ লাগিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা নিয়েছেন। মুখ খোলার সাহস পাইনি। নীরবে সহ্য করে গেছি।
এ বিষয়ে গাইবান্ধা পৌরসভার মেয়র মতলুবর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
গাইবান্ধা ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মৈত্রীয় হাসান জয়ীতা বলেন, কোন কোন এলাকায় ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কী করেছে সব আমরা জানি। এ বিষয়ে মেয়র মতলুবর রহমানের সঙ্গে বসে ছাত্রদের ছিনতাই করা মোবাইল, টাকা উদ্ধারসহ তার লোকজন যেন আর কোনো মেসের শিক্ষার্থী ভাই-বোনের ওপর অত্যাচার না করে সেটি বলার চেষ্টা করছি। তবে তিনি আমাদের ডাকে এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া দেননি। ছাত্রলীগ বা কোনো নেতাকর্মী যদি আমার আর কোনো ভাই-বোনের ওপর কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর চেষ্ট করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা রাজপথে অবস্থান নেবো।
তিনি আরও বলেন, এক স্বৈরাচারের হাত থেকে দেশটাকে স্বাধীন করেছি। দেশে আর কাউকে স্বৈরাচার হতে দেবো না।
এ এইচ শামীম/এফএ/জেআইএম