মায়ের কান্না থামছেই না, ঘাতকদের পা ধরেও লাভ হয়নি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ফেনী
প্রকাশিত: ০৬:৪৭ পিএম, ০৮ আগস্ট ২০২৪

ফেনীতে ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন মো. সরোয়ার জাহান মাসুদ। সবশেষ শেখ হাসিনার পতনের আগের দিন ৪ আগস্টও মিছিলে ছিলেন ২২ বছর বয়সী এই তরুণ। সেদিন শিক্ষার্থীদের মিছিলে ছাত্রলীগ-যুবলীগ হামলা চালায়। হঠাৎ খবর আসে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মহিপাল কলেজের সামনে পড়ে আছেন মাসুদ। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে বেকের বাজারে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ফের হামলা করেন। এসময় তাদের পা ধরে কান্নাকাটি করেও রেহায় মেলেনি মাসুদের। শেষপর্যন্ত তাকে আর বাঁচানো যায়নি।

নিহত মাসুদ দাগনভূঞার উত্তর জায়লস্কর গ্রামের মীর বাড়ির প্রবাসী মো. শাহাজাহান টিপুর বড় ছেলে। ফেনী সরকারি কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ছাত্র।

বুধবার বিকেলে নিহত মাসুদের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, তার বাবা শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে বুক চাপরিয়ে কাঁদছিলেন।

আর বলছিলেন, ‘দেশ কি মগের মুল্লুক হয়ে গেছে। একটি স্বাধীন জাতির নিরাপত্তাহীন জীবন কাম্য নয়। আমার মাসুদকে আল্লাহ শহীদী মর্যাদা দিয়ে জান্নাত দিন। ছেলে তো পাবো না। আমার ছেলেসহ হাজার হাজার ছেলের রক্তের বিনিময়ে যেন শান্তি আসে এই আশা করছি।

এদিকে মাসুদের মা বিবি কুলসুমের কান্না কোনোভাবেই থামছে না। মায়ের এমন আহাজারিতে স্বজনসহ প্রতিবেশীরাও চোখের জল ফেলছেন।

মাসুদের মা কান্না করে বলছিলেন, ‘কেন আর মাসুদের হত্যা কইরলো তারা। দেশকি হেরাউনের (ফেরআউন) দেশ ছিল।’ এসময় ছেলের ছবি মোবাইলে দেখে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তিনি।

নিহত মাসুদের মেজো ভাই দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আল সামির বলেন, ঘটনার দিন আমিও মিছিলে ছিলাম। ভাই ঢাকা থেকে বাড়ি এসেই মিছিলে শামিল হন। আমরা কাছাকাছি থাকলেও হামলার সময় আলাদা হয়ে যাই। এর কিছুক্ষণ পর আমাকে একজন কল দিয়ে জানান, ভাই গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মহিপাল কলেজের সামনে আছে। পরে আমরা তাকে উদ্ধার করে হাসাপাতালে নিতে চাইলে বেকের বাজারে সরকার দলীয় ক্যাডাররা আমাদের আটকে রাখে।

‘এসময় ভাইকে বাঁচাতে আমি তাদের পা ধরে কান্নাকাটি করে। কিন্তু তারা আমাকে লাথি ও কিল-ঘুষি মারে। কিছুক্ষণ পর একজন এসে বলে ভাইকে নিয়ে যেতে। এমন নিষ্ঠুরতা, পাষবিকতা, বর্বরতা ও নির্মমতা মানুষ করতে পারে ভাবতে গা শিউরে ওঠে।’

মাসুদের সহপাঠী সায়েদ হোসেন বলেন, মাসুদকে আমরা হাসপাতালে আনার সময় দাগনভূঞার বেকের বাজারে পথরোধ করেন ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীরা। সেখানে ৩০-৪০ নেতাকর্মী আমাদের সিএনজি যেতে দিচ্ছিলো না। পরে কোনো রকম তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

মাসুদের বাবা মো. শাহাজাহান বলেন, দেশরক্ষা করতে গিয়ে আমার নিরস্ত্র ছেলেকে ঘাতকরা নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে। ফেনীতে ছাত্রদের ওপর গুলি করা হয়েছে। আমি চাই আমাদের দেশে এমন পরিস্থিতি আর না আসে।

আবদুল্লাহ আল-মামুন/জেডএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।