পঞ্চগড়ে বিলুপ্ত ছিটমহলের বর্ষপূর্তি উদযাপন
অগ্রযাত্রার ৯ বছর উদযাপন করেছে পঞ্চগড়ে বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দারা। ২০১৫ সালের ১ আগস্ট ভারতের সঙ্গে স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের ফলে ৬৮ বছরের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক হওয়ার গৌরব অর্জন করে ছিটমহলের বাসিন্দারা। ৯ বছরে তাদের জীবনমান উন্নয়নে বিলুপ্ত ছিটমহল এলাকার সকলের ঘরে বিদ্যুৎ, পাকা সড়ক, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মন্দির, মাদরাসা, কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়। ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে দেওয়া হয় আধাপাকা ঘর।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) সকালে উপজেলার গারাতি ছিটমহল কলেজ মাঠে শ্রদ্ধাঞ্জলি, র্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য রেজিয়া ইসলাম, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ প্রধান শুভ, ছিটমহলের সাবেক চেয়ারম্যান মফিজার রহমানসহ বিলুপ্ত ছিটমহলের অধিবাসীরা উপস্থিত ছিলেন। জেলার অন্য বিলুপ্ত ছিটমহলেও নানা কর্মসূচি পালন করা হয়।
২০১৫ সালের ৩১ জুলাই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের ফলে দেশের বিলুপ্ত ছিটমহলে উত্তোলন করা হয় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। দেশের ভূখণ্ডে যোগ হয় ১৭ হাজার ১৬০ দশমিক ৬৩ একর। ৬৮ বছরের অবরুদ্ধ জীবন থেকে মুক্ত হয় এসব এলাকার কয়েক হাজার মানুষ। অন্য এলাকার মত পঞ্চগড়ের ভূখণ্ডেও যোগ হয় ১১ হাজার ৯৩২ দশমিক ৭৮ একর এলাকা। জেলার দেবীগঞ্জ, বোদা ও সদর উপজেলার ছোটবড় ৩৬ টি ছিটমহল বিনিময় হয় দুই দেশের মধ্যে।
গারাতি ছিটমহল ঘুরে দেখা গেছে, ছিটমহল বিলুপ্ত ঘোষণার পর ৯ বছরের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বদলে গেছে এসব এলাকার মানুষে জীবনযাত্রা। ছিটমহলের বিভিন্ন গ্রামের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎসংযোগ ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় সরকারিভাবে বিদ্যালয়, কলেজ, মসজিদ, মাদরাসা, মন্দির, কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এক সময় যাদের কোনো দেশের নাগরিকত্বই ছিল না, নাম পরিচয় ছিল না, এখন তাদের ছেলে মেয়েরা বাড়ির পাশেই সরকারি স্কুল কলেজে লেখাপড়া করছে। স্মার্ট কাড পাওয়ার ফলে তারা সবধরনের সরকারি সুযোগ ভোগ করছেন।
বিলুপ্ত গারাতি ছিটমহলের আইজুল ইসলাম বলেন, স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি আমাদের এলাকার রাস্তাঘাট পাকা হবে। ছেলে-মেয়েদের ছিটমহলের বাইরে বিভিন্ন সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মিথ্যা নাম পরিচয় ব্যবহার করে লেখাপড়ার জন্য ভর্তি করতে হতো। কারণ আমাদের কোনো দেশের নাগরিকত্ব ছিল না। এখন আমরা দেশের গর্বিত নাগরিক হয়ে সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করছি।
বিলুপ্ত গারাতি ছিটমহলের সাবেক চেয়ারম্যান মফিজার রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী ছিটমহল বিনিময় চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়ে আমাদের মানুষের স্বীকৃতি দিয়েছে। আমরা নতুন করে স্বাধীনতা পেয়েছি। এজন্য আজকের দিনটি আমরা স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করতে চাই।
সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ প্রধান শুভ বলেন, ইন্দিরা-মুজিব চুক্তির আলোকে শেখ হাসিনা স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তিনি ছিটমহলবাসীদের নাগরিকত্ব দেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। আগে ছিটমহলের বাসিন্দাদের কোনো পরিচয় ছিল না। তাদের কোনো দেশের নাগরিকত্ব ছিল না। স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের ফলে এসব এলাকা দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যোগ হয়।
সফিকুল আলম/আরএইচ/জিকেএস