যিনি মানুষের রক্তের জন্য ছুটতেন, তার রক্তেই ভিজলো রাজপথ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নেত্রকোনা
প্রকাশিত: ০৮:৪৭ পিএম, ৩১ জুলাই ২০২৪
বুকে তিনটি গুলি লেগে নিহত হন ওমর ফারুক

আহত ও মুমূর্ষু মানুষকে রক্ত দিয়ে বাঁচাতে বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে যেতেন ওমর ফারুক (২৪)। এজন্য পরিচিত ও বন্ধুদের নিয়ে খুলেছিলেন ‘দুর্গাপুর ব্লাড ডোনার সোসাইটি’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তিনি ছিলেন ওই সংগঠনের প্রধান। অথচ তার রক্তেই ভিজলো রাজপথ।

গত ১৯ জুলাই দুপুরে কোটা আন্দোলনে গিয়ে রাজধানীর লক্ষ্মীবাজার এলাকায় গুলিতে নিহত হন ওমর ফারুক। তার বুকে তিনটি গুলি বিদ্ধ হয়। তিনদিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ২১ জুলাই সকালে ওমরের মরদেহ গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার বাকলজোড়া ইউনিয়নের সিংহা গ্রামে নেওয়া হয়। সেখানে ওইদিন সকাল সাড়ে ১০টায় জানাজা শেষে দাফন করা হয়।

ওমর ফারুক নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার সিংহা গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে। তিনি রাজধানীর কবি নজরুল সরকারি কলেজের (বাংলা বিভাগে) অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ওইদিন আন্দোলনে গুলিতে ওমর ফারুকের আরও তিন সহপাঠী নিহত হন বলে জানা গেছে।

দুই ভাইয়ের মধ্যে ওমর ফারুক বড়। তার ছোট ভাই আবদুল্লাহ অনিক উপজেলার বাকলজোড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। ওমর ফারুকের বাবা সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী। ছেলের শরীরে গুলি লাগার খবর পেয়ে পরদিনই দেশে চলে আসেন তিনি।

আরও পড়ুন:

ওমর ফারুকের ছোট ভাই আবদুল্লাহ অনিক (২১) বলেন, ‘ওইদিন বায়তুল মোকাররম মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন ভাইয়া। পরে বন্ধুদের সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলনে বের হন। কিন্তু লক্ষ্মীবাজার এলাকায় ভাইয়ার বুকে তিনটি গুলি লাগে। বন্ধুরা তাকে উদ্ধার করে পরে ঢামেকে নিয়ে যান। ততক্ষণে তার মৃত্যু হয়। ওই মিছিলে ভাইয়ার আরও তিন বন্ধু গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে শুনেছি।’

অনিক বলেন, ‘আমার ভাইয়া খুবই পরোপকারী ছিলেন। তার জানাজায় হাজার হাজার মানুষ এসেছে। মানুষের বিপদ শুনলেই সবার আগে সহায়তার জন্য ছুটে গেছেন। যে ক্ষতি হয়েছে, তা কোনো কিছুতেই পূরণ হওয়ার নয়!’

ওমর ফারুকের বাবা আব্দুল খালেক বলেন, ‘আমার ছেলে রক্ত দিয়ে মানুষের জীবন বাঁচাতো। গুলিতে তার জীবনপ্রদীপ নিভে গেলো। গুলিতে বুক ঝাঁঝরা হয়ে সেই পরোপকারী ছেলের রক্তে রাজপথ ভিজেছে। এখন সে দুনিয়াতে নাই। আমি কারও কাছে বিচার চাই না। সবার কাছে সন্তানের জন্য দোয়া চাই।’

দুর্গাপুর থানার ভরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উত্তম চন্দ্র দেব বলেন, শুনেছি ওমর ফারুক নামের এক ছেলে ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। মারা যাওয়ার পর তারা নিজেরাই এনে দাফন করেছেন। এ বিষয়ে অফিসিয়ালি কিছু জানানো হয়নি।’

এইচ এম কামাল/এসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।