গুলিতে নিহত মাছ ব্যবসায়ী নবী নূরের স্ত্রীর আকুতি
‘আমার স্বামী লেখাপড়া জানতো না, বড় কোনো স্বপ্ন ছিল না তার। পরিবার নিয়ে কোনোভাবে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় গিয়েছিল। মাছের ব্যবসা করে কোনো রকমে সংসার চালাতো। একটি বুলেট সব স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছে। এখন আমাদের কী হবে? কে দেখবে আমাদের? যার স্বজন হারায়নি, সে স্বজন হারানোর যন্ত্রণা বুঝবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই জানে স্বজন হারানোর যন্ত্রণা কতটা কষ্টের এবং ভারী হয়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামীকে হারিয়ে আমি যে বড় অসহায় হয়ে গেলাম। আমার কোনো পুত্র সন্তান নেই, দুটি মেয়ে নিয়ে কীভাবে চলবো, আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।’
দুটি মেয়ে নিয়ে যাতে বেঁচে থাকতে পারি তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নিকট এমনটাই প্রত্যাশা স্বামীহারা গৃহবধূ আকলিমা বেগমের।
গৃহবধূ আকলিমা খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার রাড়ুলী ইউনিয়নের শ্রীকণ্ঠপুর গ্রামের নবী নূর মোড়লের স্ত্রী। নবী নূর (৪৮) পেশায় একজন মাছ ব্যবসায়ী ছিলেন। গত শনিবার (২০ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকার সাভার এলাকায় মসজিদে নামাজ পড়ে রাস্তায় আসার পর গুলিবিদ্ধ হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার সকাল পৌনে ৮টার দিকে মৃত্যুবরণ করেন।
উপজেলার রাড়ুলী ইউনিয়নের শ্রীকণ্ঠপুর গ্রামের মৃত করিম মোড়লের ছেলে নবী নূর। অভাব অনটনের সংসারে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি। পরিবার পরিজন নিয়ে একটু সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার আশায় ৬-৭ বছর আগে ঢাকায় আসেন দিনমজুর নবী নূর। ঢাকার সাভার এলাকার উলাইল থেকে মাছ কিনে বন পুকুর এলাকায় বিক্রি করতেন।
নবী নূরের কোনো পুত্র সন্তান নেই। দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বড় মেয়ে নাজমা খাতুন ও ছোট মেয়ে ফাইমা খাতুন। সর্বশেষ গত কোরবানির ঈদে বাড়িতে যান নবী নূর। ছোট মেয়ে ফাইমাকে ২১ জুন বিয়ে দেন। বিয়ের কাজ অসমাপ্ত রেখেই ঢাকায় চলে আসেন নবী নূর।
জানা যায়, গত শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আসরের নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বেরিয়ে এসে মাছ বিক্রির বকেয়া টাকার তাগাদা করছিলেন। এমন সময় একটি বুলেট এসে কোমর বরাবর বিদ্ধ হয়ে বেরিয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন নবী নূর। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে একটি বেসরকারি ক্লিনিক ও পরবর্তীতে এনাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার সকাল পৌনে ৮টার দিকে মৃত্যুবরণ করেন নবী নূর। ওইদিন রাত ৮টার দিকে তার মরদেহ বাড়িতে আনা হয় এবং পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
মৃত্যুকালে নবী নূর ৩ শতক ভিটে মাটি ছাড়া পরিবারের জন্য আর কিছুই রেখে যেতে পারেননি। বর্তমানে দুটি মেয়ে নিয়ে জামাইয়ের বাড়িতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন গৃহবধূ আকলিমা বেগম। দুটি মেয়ে নিয়ে যাতে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে পারেন এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সমাজের বিত্তবানদের কাছে সহযোগিতা চান তিনি। এরইমধ্যে অসহায় পরিবারের জন্য সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহেরা নাজনীন।
আলমগীর হান্নান/এফএ/জেআইএম