রোগীর মৃত্যুর পর মেলে সমাজসেবার সহায়তা

তানভীর হাসান তানু তানভীর হাসান তানু ঠাকুরগাঁও
প্রকাশিত: ০৯:৫৫ এএম, ২৮ জুলাই ২০২৪

সারাদেশের ন্যায় ঠাকুরগাঁওয়েও বাড়ছে ক্যানসার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড, জন্মগত হৃদরোগ এবং থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এসব রোগের চিকিৎসা বেশ ব্যয়বহুল। চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেক পরিবার।

তাই এসব রোগে আক্রান্ত রোগীদের কথা ভেবে সরকারের একটি মহৎ উদ্যোগ চালু হয় ২০১৩-১৪ অর্থবছরে। যেখানে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান শুরু হয়। এরপর ২০১৯ সাল থেকে আর্থিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় প্রতিটি জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে দুরারোগ্য এসব ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীদের এককালীন জনপ্রতি ৫০ হাজার টাকা হারে বাজেটপ্রাপ্তি সাপেক্ষে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।

কিন্তু এর সুফল পেতে ভোগান্তি হচ্ছে রোগীর স্বজনদের। আবেদনের পর সমাজসেবা অফিসে অনেককেই হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। মাত্র ১৭ থেকে ১৮ কার্যদিবসের মধ্যে এই সহায়তার টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, চিকিৎসা সহায়তার এই টাকা পেতে মাসের পর মাস ঘুরতে হচ্ছে তাদের। চিকিৎসার অভাবে অনেক রোগী মারা যাচ্ছেন, তারপর স্বজনরা টাকা পাচ্ছেন। এতে সরকার যে উদ্দেশ্যে টাকা দিচ্ছে সেই উদ্দেশ্য পূরণ হচ্ছে না। তাই জটিলতা দূর করে দ্রুত টাকা দেওয়ার দাবি রোগীর স্বজনদের।

কথা হয় মুন্সিরহাট এলাকার সাহেরা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার স্বামী একজন শ্রমিক ছিলেন। তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত হলে এলাকাবাসী ও আত্মীয়-স্বজনদের কাছে সহযোগিতা নিয়ে চিকিৎসা শুরু করি। পরে জানতে পারি সমাজসেবার অনুদানের কথা। সেখানে আবেদন করি। কিন্তু ঘুরতে ঘুরতে জান শেষ। আজ না কাল, কাল না পরশু। এভাবে কাটে ৪-৫ মাস। তারপরও টাকা পাইনি। এরপর আমার স্বামী মারা যান। স্বামী মারা যাওয়ার অনেক দিন পর টাকা পাই। স্বামীর মৃত্যুর পর সেই টাকা আমি কী করবো? আমি মনে করি সমাজসেবার অনেক কর্মকর্তার অবহেলা রয়েছে এতে। তাদের কারণে সরকারের এই মহৎ উদ্যোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ গরিব মানুষ।

অটোভ্যানের শ্রমিক রাজু বলেন, আমার বাবা দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারে আক্রান্ত। অনেক ঘুরেছি সমাজসেবা অফিসে। যখনই যাই, আজ ফাইল ওমুক খানে পরে শুনি আবার অন্যখানে। এমন করতে করতে অনেকটা বিনা চিকিৎসায় আমার বাবার মৃত্যু হয়। শেষমেশ আমার বাবার মৃত্যুর কয়েকদিন আগে টাকা পেলাম। তবে সেই টাকা আর আমাদের কোনো কাজে আসেনি। আমার বাবাকে আর বাঁচাতে পারিনি।

আবেদন করার পর অনুদানের টাকা পেতে কতদিন সময় লাগে জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোছা. সাইয়েদা সুলতানা বলেন, কত সময় লাগে এটা বলা যাবে না, কারোটা খুব দ্রুত শেষ হয়ে যায় কারণ বরাদ্দ চলে আসে। এটার বরাদ্দ তিন মাস পর পর আসে। তবে দেরি হওয়ার কারণ হলো প্রথমে উপজেলায় বাছাই হয়, এরপর জেলায় যায়। তারপর আবার সিভিল সার্জন অফিসে বোর্ড বসে এটি যাচাই হয়। এজন্য সময় লাগে। তারপরও দ্রুত করার চেষ্টা করা হয়।

এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।