কিশোরগঞ্জের হাওরে মাছ উৎপাদনে রেকর্ড

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কিশোরগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৩:৪২ পিএম, ২৬ জুলাই ২০২৪
কিশোরগঞ্জের হাওরে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ মাছ উৎপাদন হয়েছে

নানান কারণে হাওরে মাছ উৎপাদন কমেছে। পরিবেশ দূষণ, সময়মতো বৃষ্টি না হওয়া, কারেন্ট ও চায়না দোয়ারি জালের ব্যবহারের কারণে মূলত কমছে মাছ উৎপাদন। তারপরও মৎস্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত কিশোরগঞ্জের হাওর থেকে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ মাছ উৎপাদন হয়েছে। এ অর্থবছরে মাছ উৎপাদন হয়েছে ২৮০২০.৫২ টন। যার আনুমানিক বাজারমূল্য ১২৬০.৯২ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জে ৬৪ হাজার ৩০৬ হেক্টর আয়তনের ছোট-বড় ১২২টি হাওর রয়েছে। এসব হাওর থেকে প্রতিবছর মেলে বিভিন্ন প্রজাতির হাজার হাজার টন মাছ। এছাড়া প্রচুর শামুক-ঝিনুক উৎপন্ন হয়। তবে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ২৮০২০.৫২ টন মাছ উৎপাদন হয়েছে, যা এ এযাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ।

কিশোরগঞ্জের হাওরে মাছ উৎপাদনে রেকর্ড

জেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে জেলায় ৯৪ হাজার ৮৮৭.১৯ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়। এরমধ্যে আহরণের মাধ্যমে উৎপাদন হয়েছে ৪২ হাজার ৭৪১.৩৪ টন, যা মোট উৎপাদনের ৪৪.৪২ শতাংশ। আর চাষের মাধ্যমে এসেছে ৫২ হাজার ৭৪১.৩৪ টন মাছ, যা উৎপাদনের ৫৫.৫৮ শতাংশ। এসময়ে হাওর থেকে উৎপাদন হয়েছে ২৮ হাজার ০২০.৫২ টন মাছ, যা মোট উৎপাদনের ২৯.৫৩ শতাংশ। আর এর আনুমানিক বাজারমূল্য এক হাজার ২৬০.৯২ কোটি টাকা।

জেলা মৎস্য অফিস জানায়, কিশোরগঞ্জের হাওরে ৮০ থেকে ১২০ প্রজাতির দেশি মাছ পাওয়া যায়। হাওরে মাছের উৎপাদন বাড়াতে জেলায় অনেক বিলে নার্সারি করা হচ্ছে। যেখানে এক থেকে দেড়মাস বয়সী মাছের পোনা লালন-পালন করে পুরো বিলে ছাড়া হবে। জেলেদের দেওয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণ। হাওরে ক্ষতিকর চায়না জালের ব্যবহার, পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ নিধন, সেচ দিয়ে মাছ শিকার ও জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন স্থানীয় মৎস্য কর্মকর্তারা। আর জেলায় বছরে মাছের চাহিদা রয়েছে ৭০ হাজার ৫৩০ টন।

কিশোরগঞ্জের হাওরে মাছ উৎপাদনে রেকর্ড

হাওর থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন কৃষ্ণ। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘হাওরে জন্ম। ছোটবেলা থেকেই বাবার সঙ্গে হাওরে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। হাওরে মাছ না থাকলে না খেয়ে মরতে হবে। সরকার যদি হাওরে কারেন্ট জাল ও চায়না দোয়ারি জাল দিয়ে মাছ ধরা বন্ধ করতে পারতো, তাহলে আমরা সারাবছর হাওর থেকে মাছ ধরতে পারতাম।’

বিভিন্ন কারণে হাওরে মাছের উৎপাদন কম হচ্ছে বলে জানান জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, পরিবেশ দূষণ, সময়মতো বৃষ্টি না হওয়া, কারেন্ট ও চায়না দোয়ারি জালের ব্যবহারের কারণে হাওরের মাছের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এরমধ্যেও কিশোরগঞ্জের হাওর থেকে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ২৮০২০.৫২ টন মাছ উৎপাদন হয়েছে, যা এ এযাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ।

‘হাওরের মাছ উৎপাদনের এই ধারা যাতে অব্যাহত থাকে, সেজন্য কারেন্ট ও চায়না দোয়ারি জালের ব্যবহার বন্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। যারা বিল ইজারা নেন তারা যেন বিল সেচে মাছ না ধরেন সেই প্রচারণা চালানো হচ্ছে। প্রাকৃতিক মাছের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য মৎস্য আইন বাস্তবায়নে আমরা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি’, যোগ করেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম।

এসকে রাসেল/এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।