বোনের শাশুড়িকে গলা কেটে হত্যার পর স্বর্ণালংকার লুট

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি মিরসরাই (চট্টগ্রাম)
প্রকাশিত: ০৮:৪৯ এএম, ২৬ জুলাই ২০২৪
ছবি: আটক তারিফুল ইসলাম

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করতে সাজেদা আক্তার (৫৮) নামে এক নারীকে হাত-পা বেঁধে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) দুপুরে উপজেলার মিরসরাই পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের বন্ধন ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি ভাড়া বাসায় এ হত্যার ঘটনা ঘটে। পরে বিকেলে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ওই নারীর বড় ছেলের স্ত্রীর ভাই তারিফুল ইসলামকে (৩০) আটক করে পুলিশ। তিনি মিরসরাই সদর ইউনিয়নের পাত্তার পুকুর এলাকার দ্বীন মোহাম্মদের ছেলে। তার কাছ থেকে লুট করা ১০ ভরি স্বর্ণালংকার, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি ও রক্তমাখা জামাকাপড় উদ্ধার করে পুলিশ।

নিহত সাজেদা আক্তার মিরসরাই উপজেলার ১০নং মিঠানালা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের লাল মোহম্মদ চৌধুরী বাড়ির এম মামুন চৌধুরী ওরফে খান সাহেবের স্ত্রী। তারা বন্ধন ভবনের দ্বিতীয় তলার বি-১ ফ্ল্যাটে প্রায় ৫ বছর ধরে ভাড়ায় থাকতেন।

নিহতের স্বামী এম মামুন চৌধুরী (৭৫) বলেন, ‘সকালে আমার ছোট ছেলে আমজাদ হোসেন ও তার খালাত ভাই রাকিব গ্রামের বাড়িতে নির্মাণাধীন নতুন ঘর দেখতে যায়। আমি বাজার করার জন্য মিরসরাই পৌর বাজারে যাই। এ সময় বাসায় আমার স্ত্রী ও তার পরিচিত এক নারী ছিলেন। বাজার করে বাসায় এসে স্ত্রীর কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে তার কক্ষে গিয়ে দেখি মেঝেতে দুই হাত ও দুই পা প্লাস্টিক দিয়ে বাঁধা অবস্থায় গলাকাটা মরদেহ পড়ে আছে। এ সময় ঘর থেকে বের হতে চাইলে দেখি বাসার সামনে দিয়ে দরজা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। পরে বাসার ভেতর থেকে চিৎকার করলে কেয়ারটেকার রুজিনা আক্তার রুমা দরজার লক খুলে দেন।’

বাসার কেয়ারটেকার রুজিনা আক্তার রুমা বলেন, দুপুর ২টায় বি-১ ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে শব্দ শুনে সামনে থেকে লাগানো হুক টেনে দরজা খুলে দিই। এসময় দেখি দরজার পেছনে খান সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি বলেন কারা যেন তার স্ত্রীকে গলাকেটে হত্যা করেছে। বিষয়টি তাৎক্ষণিক ভবন মালিক ও অন্য ভাড়াটিয়াদের জানাই।

বোনের শাশুড়িকে গলা কেটে হত্যার পর স্বর্ণালংকার লুট

নিহতের ভাগনে হাজি আব্দুল মতিন বলেন, বাসায় শুধু মামা আর মামি থাকতেন। মামাতো ভাই বিয়ে করার জন্য গত ৮ জুলাই দেশে আসেন। বাসার আলমারি ভেঙে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা ও ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে গেছে খুনি।

মিরসরাই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দীপ্তেষ রায় জানান, হত্যকাণ্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। এরপর জড়িতদের শনাক্তে পুলিশ কাজ শুরু করে। কিন্তু কোনো কিছুতেই ক্লু উদ্ধার করতে পারছিল না। নিহতের স্বামী, ছেলে ও কাজের লোককে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য থানায় আনা হয়। কিন্তু তারা জিজ্ঞাসাবাদে খুনের বিষয়টি অস্বীকার করেন। এরপর একটি মোটরসাইকেলের সূত্র ধরে অভিযান শুরু করা হয়। মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে জোরারগঞ্জ এলাকা থেকে তারিফুল নামে একজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করেছি। এরপর তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী জোরারগঞ্জ মৌলভী নজির আহম্মদ মাদরাসার একটি কক্ষ থেকে ব্যাগ জব্দ করার পর তল্লাশি চালিয়ে স্বর্ণালংকার, ছুরি ও রক্তমাখা জামাকাপড় উদ্ধার করেছি।

তিনি আরও জানান, খুনের পর তিনি জামাকাপড় পরিবর্তন করে বেরিয়ে যান। পরে অন্যদের সঙ্গে ঘটনাস্থলে এসে সহমর্মিতাও জানান।

মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সহিদুল ইসলাম বলেন, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে আরও কেউ জড়িত কি না জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। হত্যার ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

এম মাঈন উদ্দিন/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।