মোংলা বন্দর

গাড়ি আমদানিকারকদের প্রতিদিন লোকসান ৪০ কোটি টাকা

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি মোংলা (বাগেরহাট)
প্রকাশিত: ০৪:২৭ পিএম, ২৪ জুলাই ২০২৪
মোংলা বন্দর দিয়ে রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানি হয়

দেশে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ ও কারফিউ জারি রয়েছে। এতে করে সমুদ্র বন্দরগুলোতে ব্যাহত হচ্ছে পণ্য খালাস। বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর দিয়ে গাড়ি খালাস করতে পারছেন না আমদানিকারকরা। ফলে রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানিকারকদের প্রতিদিন ৪০ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।

আমদানি-রপ্তানিকারকরা বলছেন, মোংলা বন্দরে পণ্য খালাস আটকে যাওয়ার কারণ হলো- পণ্যের শুল্কায়ন না হওয়া। ইন্টারনেট না থাকায় অনলাইনে শুল্কায়ন হচ্ছে না। ইন্টারনেট সেবা বন্ধের আগে যেসব পণ্যের শুল্কায়ন শেষ হয়েছিল, এমন পণ্যই এখন খালাস হচ্ছে। নতুন করে পণ্য খালাস বন্ধ থাকায় বন্দরে পণ্যের জটলা তৈরি হয়েছে।

তবে কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে বলে দাবি মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক (বোর্ড ও জনসংযোগ বিভাগ) মো. মাকরুজ্জামানের।

তিনি জানান, আমদানি-রপ্তানিকারকরা বন্দরে এলে তাদের পণ্য ডেলিভারি নিতে পারবেন। এজন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ সব রকমের প্রস্তুত রেখেছে।

মোংলা কাস্টমস হাউস কর্তৃপক্ষের কমিশনার কে. এম মাহাবুবুর রহমান জানান, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে তাদের প্রতি মাসে রাজস্ব আয় হয় ৩০০ কোটি টাকা। আর প্রতিদিন রাজস্ব আদায় হয় ১৫-১৬ কোটি টাকা। তবে চলমান উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে গত রোব, সোম ও মঙ্গলবার- এই তিন দিনে মোংলা কাস্টমস হাউস ৬৬ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, শুধু কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নয়, এই পরিস্থিতিতে আমদানি-রপ্তানিকারকরাও চরম বিপাকে পড়ে মোটা অংকের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ইন্টারনেট না থাকায় অনলাইনে শুল্কায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে পচনশীল পণ্য যাতে খালাস করা যায়, সে জন্য সনাতন পদ্ধতি ‘লোকাল এরিয়া ইন্টারনেট’ চালু রাখা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা চাইলে তাদের পচনশীল পণ্য খালাস করতে পারবেন। কিন্তু এই তিনদিনে আমদানি-রপ্তানিকারকদের কেউ আসেননি বলেও জানান তিনি।

গাড়ি আমদানিকারকদের প্রতিদিন লোকসান ৪০ কোটি টাকা

মোংলা বন্দরের সিঅ্যান্ডএফ অ্যাজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত হোসেন বলেন, গত বৃহস্পতিবার থেকে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় কাস্টমসে ‘বিল অব এন্ট্রি’ করা যাচ্ছে না। ব্যাংক ট্যাক্সের টাকা জমা দেওয়া যাচ্ছে না। মোংলা বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। ট্রাকে বন্দরে পণ্য আনা-নেওয়া করা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ রিকন্ডিশন বেহিক্যাল ইমপোটার্স অ্যান্ড ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের (বারবিডা) সভাপতি মো. হাবিবুল্লা ডন জানান, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে প্রতিদিন মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গাড়ি খালাস করতে ১২০-১৫০টি রেজিস্ট্রেশন হয়। সে হিসেবে তাদের প্রতিদিন ৪০ কোটি টাকা আয় হয়। কিন্তু দেশের চলমান পরিস্থিতি গত বুধবার থেকে ঝুঁকি নিয়ে এই দুই বন্দর থেকে একটি গাড়িও খালাস করতে না পারায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তারা।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে মোংলা বন্দরকে ঘিরে নাশকতা এড়াতে নৌবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। স্বাভাবিক রয়েছে বন্দরে অবস্থান করা দেশি-বিদেশি জাহাজের কার্যক্রম। গাড়ি আমদানিকারকরা চাইলে মোংলা বন্দর থেকে গাড়ি খালাস করতে পারতেন। সে ক্ষেত্রে বন্দর কর্তৃপক্ষ সড়ক-মহাসড়কে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে তাদের সহযোগিতা করতো।

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী এক জ্যেষ্ঠ ব্যবসায়ী বলেন, চলমান এই পরিস্থিতিতে বন্দর সংশ্লিষ্ট সব ধরনের ব্যবসায়ীদের দৈনিক প্রায় ১০০ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। এছাড়া সরকারও মোটা অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে। ইন্টারনেট পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত আমদানি-রপ্তানিতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

দ্রুত এই পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সমস্যা আরও ঘনীভূত হবে বলে জানান এই ব্যবসায়ী।

আবু হোসাইন সুমন/জেডএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।