ভরা মৌসুমেও পর্যটকশূন্য বান্দরবান, হতাশ ব্যবসায়ীরা
পাহাড়কন্যা খ্যাত প্রাকৃতিক ভূস্বর্গের অপার লিলাভূমি বান্দরবান। বছরজুড়ে প্রকৃতিপ্রেমী ভ্রমণ পিপাসুদের পদচারণায় মূখর থাকে জেলার প্রতিটি দর্শনীয় স্থান। সরকারি বিশেষ ছুটির দিনে এই সংখ্যা বাড়ে কয়েকগুণ। ফলে আগত পর্যটকদের সেবায় জেলায় গড়ে উঠেছে নানা হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, রেস্তোরাঁ ও হেন্ডিক্রাফট বিপণন কেন্দ্র। এতে যুক্ত হয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন ১০ হাজারেরও বেশি সংখ্যক জনগণ।
তবে দীর্ঘদিন ধরে প্রেক্ষাপট অনেকটাই ভিন্ন। দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ ও বান্দরবানে চলমান কুকি-চিন সমস্যার কারণে আশানুরূপ পর্যটক না পাওয়ায় চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছর সেপ্টেম্বর মাসের দিকে জেলার দূর্গম এলাকাগুলোতে সশস্ত্র সংগঠনগুলোর আনাগোনা বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০২৩ সালের ১৭ অক্টোবর রুমা-রোয়াংছড়িতে দেশি বিদেশি পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে স্থানীয় প্রশাসন। এই নিষেধাজ্ঞা কয়েক দফায় বাড়িয়ে রুমা-রোয়াংছড়ি, আলীকদম ও থানচি উপজেলাতেও আরোপ করা হয়। পরে সকল উপজেলা থেকে এই নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে সন্ত্রাস দমনে নিরাপত্তা বাহীনির অভিযান যে এলাকায় চলে শুধুমাত্র সে সমস্ত এলাকায় নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যটক ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হয়। তবুও আতঙ্কিত হয়ে বান্দরবান ভ্রমণে বিমুখ হচ্ছেন পর্যটকরা। ফলে আশানুরূপ পর্যটক না পাওয়ায় জেলার পর্যটন সংশ্লিষ্টরা প্রতিনিয়ত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
হোটেল হিল্টনের ম্যানেজার আক্কাস উদ্দিন জানান, বান্দরবানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে এক সময় প্রতিনিয়ত ভিড় জমাতেন পর্যটকরা। তবে দীর্ঘদিন ধরে কোভিড, বন্যা, কুকি-চিন ও সম্প্রতি রাজনৈতিক সমস্যার কারণে প্রায় পর্যটকশূন্য বান্দরবান। ফলে প্রতিনিয়ত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন জেলার পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
হোটেল হিলভিউ’র ম্যানেজার তৌহিদ পারভেজ জানান, দীর্ঘদিন ধরে বান্দরবানে বিভিন্ন সমস্যা ও সম্প্রতি রাজনৈতিক সমস্যার কারণে জেলার পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বর্তমানে তাদের হোটেলটিতে একজন পর্যটকও নেই।
বান্দরবান হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানান, এই বর্ষা মৌসুমটিও বান্দরবানে পর্যটন ব্যবসায়ীদের একটি মৌসুম। বর্ষায় বৃষ্টি ও মেঘের অপরূপ দৃশ্য দেখতে পরিবার পরিজন নিয়ে ভিড় জমান প্রকৃতিপ্রেমী ভ্রমণ প্রত্যাশীরা। তবে জেলায় দীর্ঘদিন ধরে কুকি-চিন ও চলমান রাজনৈতিক সমস্যার কারণে একেবারে পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে বান্দরবান জেলা। এতে এই পেশায় জড়িত জেলার প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ অর্থনৈতিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
বান্দরবান জিপ-মাইক্রোবাস মালিক সমিতির সভাপতি নাছিরুল আলম বলেন, জেলা সদরে পর্যটক পরিবহনের জন্য ৪শোর বেশি গাড়ি রয়েছে। যার মধ্যে অধিকাংশ গাড়িই কিস্তিতে নেওয়া। পর্যটক না থাকায় গাড়ির কিস্তি পরিশোধে যেমন ব্যর্থ হচ্ছেন তেমনি এই পেশায় জড়িত মালিক ও চালকসহ জড়িত প্রায় ১ হাজারেরও বেশি জনগণ অভাব-অনটনের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, বান্দরবানের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। পর্যটকরা চাইলে বান্দরবানের অধিকাংশ পর্যটন স্পট ঘুরে দেখতে পারবেন।
নয়ন চক্রবর্তী/এফএ/জেআইএম