কুবিতে ছাত্রনেতাকে মারধরে বিভক্ত ছাত্রলীগ, নেত্রীর পদত্যাগ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুমিল্লা
প্রকাশিত: ০৮:৪৬ এএম, ১৬ জুলাই ২০২৪
আন্দোলনে সমন্বয়কারী ফরহাদ কাউসারকে মারধরের ঘটনায় উত্তপ্ত ক্যাম্পাস

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনে সমন্বয়কারী ফরহাদ কাউসারকে ছাত্রলীগ কর্তৃক মারধরের ঘটনায় উত্তপ্ত ক্যাম্পাস। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা গিয়েছে মতানৈক্য।

এদিকে ফরহাদ কাউসারকে মারধরের ঘটনায় নুসরাত সুরভী নামে এক ছাত্রলীগ কর্মী ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। সোমবার (১৫ জুলাই) রাত সাড়ে ৮টায় নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলের সামনে ফরহাদকে মারধর করা হয়।

আহত ফরহাদ কাউসার বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী। হামলাকারীদের মধ্যে রয়েছেন শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রবিন দাশ, উপ-নাট্য ও বিতর্ক বিষয়ক সম্পাদক রবিউল আলম রিয়াজ, ছাত্রলীগ কর্মী আক্তারুজ্জামান পাভেল, ব্যবসা শিক্ষা অনুষদ শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকুর রহমান রাফি, ছাত্রলীগ কর্মী জুনায়েদ লামিম, অর্ণব সিংহ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আসিফ এনতাজ রাব্বি।

আরও পড়ুন

এদের অনেকেই শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহর গ্রুপের কর্মী। এছাড়া মারধরের সময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও আগামী কমিটির পদপ্রত্যাশী মেজবাহউল হল শান্ত উপস্থিত ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ফরহাদ কাউসারসহ আরও কয়েকজনকে ক্যাম্পাস সংলগ্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড় করিয়ে মোবাইল চেক করেন এবং মারধর করেন। ফরহাদ কাউসার মারধরের শিকার হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান হলে আসলে শাখা ছাত্রলীগের অন্যান্য নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে উত্তেজিত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধু হল থেকে বেরিয়ে মারধরকারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের খোঁজে ক্যাম্পাস গেটে যান মারার উদ্দেশ্যে। মারধরকারীদের না পেয়ে উত্তেজিত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা দত্ত হলের দিকে এগুতে থাকেন। তখন শাখা ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীরা উত্তেজিত নেতাকর্মীদের থামাতে চেষ্টা করেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ও বঙ্গবন্ধু হল প্রশাসন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের থামানোর চেষ্টা করেন।

আহত শিক্ষার্থী ফরহাদ কাউসার বলেন, রাতের বাসে শহর থেকে টিউশনি করে এসে ক্যাম্পাস গেইটে নামি। এরপর আমাকে কয়েকজন ডেকে নিয়ে যান। তারা আমার ফোন কেড়ে নিয়ে লক খুলতে বলেন এবং জানতে চান আমি কোটাবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত আছি কিনা। তারা আমার ফোন চেক করতে থাকা অবস্থায় রবিন দাশ প্রথমে আমাকে মারধর করতে শুরু করেন। এরপর পাভেল, রাফি, শান্ত, রিয়াজ, রাব্বি আমাকে মারধর করেন।

তবে অভিযুক্তদের একাধিকবার কল দিয়েও যোগাযোগ করা যায়নি।

ছাত্রলীগের আগামী কমিটিতে পদপ্রত্যাশী নেতা এনায়েত উল্লাহ মারধরের বিষয়ে বলেন, আমি যতটুকু শুনেছি, কালকে রাজাকার স্লোগানের পর ছাত্রলীগ তাদের প্রতিহত করে। আজকেও ওদের সঙ্গে কথা কাটাকাটির হয়েছে। এক পর্যায়ে ওদের একজনের সঙ্গে মারামারি হয়। আমরা তিন হলের সবাই বিষয়টি নিয়ে অবগত রয়েছি। সকলে বসে একটা সমাধানে আসবো।

কুবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাদাত সায়েম বলেন, এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেবো, যাতে কেউ বঙ্গবন্ধু হলের শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত তোলার সাহস না পায়।

আরও পড়ুন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুবি শাখার সমন্বয়কদের একজন মো. সাকিব হোসাইন বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবেই আজকের সকল কর্মসূচি পালন করেছিলাম। কিন্তু এই যে হামলা সেটিতে আমরা মর্মাহত। পাশাপাশি তার ফোন চেক করা একপ্রকার সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন। আমরা এর যথাযথ বিচার চাই।

তিনি বলেন, আমরা প্রশাসন বরাবর অভিযোগ দেবো। তারা যদি যথাযথ বিচার না করেন তাহলে আমরা আদালত পর্যন্ত যাবো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শামসুজ্জামান মিলকী বলেন, খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। তারপর প্রক্টরিয়াল বডির সঙ্গে মিলে ছাত্রদের থামানোর চেষ্টা করি। আমরা ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। তবে এখন পর্যন্ত আমরা এই বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। আমরা ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করছি।

ছাত্রলীগ নেত্রীর পদত্যাগ

ফরহাদ কাউসারের ওপর ছাত্রলীগ কর্তৃক মারধরের অভিযোগ ওঠায় এই ঘটনার প্রতি নিন্দা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুসরাত জাহান সুরভী পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।

নুসরাত সুরভীর সঙ্গে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল শাখা ছাত্রলীগের উপ-নাট্য ও বিতর্ক বিষয়ক সম্পাদক অভিযুক্ত রবিউল আলম রিয়াজের বিয়ে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার আগেই। তবুও তারা দুইজন ছাত্রলীগের বিভিন্ন পোস্টে ছিলেন। এছাড়া নুসরাত জাহান সুরভী প্রথম থেকেই কোটা সংস্কারের আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।

ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, ‘নওয়াব ফয়জুন্নেছা হল, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলাম। আমি লজ্জিত যে আমি এমন একটা সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলাম।’

পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে নুসরাত জাহান সুরভী বলেন, ‘আপনিও মানুষ আমিও মানুষ। আপনিও জানেন দেশে কী হচ্ছে। সেই মানবিক দিক বিবেচনা করে আমি শাখা ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেছি।’

জাহিদ পাটোয়ারী/এফএ/এমএস

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।