পাঁচদিনে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে লোকসান অর্ধকোটি টাকা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি রাজশাহী
প্রকাশিত: ০৬:১৫ পিএম, ১৩ জুলাই ২০২৪
ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন

ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-ঢাকা রুটে চলা ‘ম্যাংগো স্পেশাল’ ট্রেনের লোকসানের হিসাব। চলতি মৌসুমে মাত্র পাঁচদিন চললেও ট্রেনের ব্যয়ের পরিমাণ ছাড়িয়েছে অতীতের সমস্ত রেকর্ড। রেলের পক্ষ থেকে সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে মহাপরিকল্পনা গ্রহণের কথা বললেও এ কয়দিনে লোকসান গুণতে হয়েছে প্রায় অর্ধকোটি টাকা।

রেলওয়ের তথ্যমতে, চলতি বছরের পাঁচদিনে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনে আম পরিবহন করা হয়েছে ১৮ হাজার ১৪৬ কেজি। এতে রেলের আয় হয়েছে ২৭ হাজার ৩৪৫ টাকা। কুরবানি উপলক্ষে একই ট্রেনে দুদিনে পশু পরিবহন করা হয় ১০৫টি। এতে রেলের আয় হয়েছে ৯২ হাজার ৮২০ টাকা। এক সপ্তাহে ম্যাংগো স্পেশাল ও ক্যাটল ট্রেনে মোট আয় হয়েছে এক লাখ ২০ হাজার ১৬৫ টাকা। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় যেতে ও আসতে দৈনিক খরচ হয়েছে ১০ লাখ ২৩ হাজার ৮৪০ টাকা। অর্থাৎ সাতদিনে ট্রেনটিতে মোট খরচের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫১ লাখ ১৯ হাজার ২০০ টাকা। আর এতেই রেলের লোকসান হয়েছে ৪৯ লাখ ৯৯ হাজার ৩৫ টাকা।

তবে পরিসংখ্যান বলছে, ট্রেন চালুর প্রথম বছর ২০২০ সালে ৪৭ দিনে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন আম পরিবহন করেছে ১১ লাখ ৯৯ হাজার ৫৯ কেজি। এতে আয় হয়েছে ১৩ লাখ ৩৭ হাজার ৫৩৬ টাকা, ব্যয় হয়েছে ৫৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ২০২১ সালে ৪৯ দিনে ট্রেনটি আম পরিবহন করেছে ২২ লাখ ৯৯ হাজার ৯২০ কেজি। এতে আয় হয়েছে ২৬ লাখ ৩০ হাজার ৯২৮ টাকা, ব্যয় হয়েছে ৫৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ২০২২ সালে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন আম পরিবহন করেছে এক লাখ ৭৮ হাজার ৭৭৮ কেজি। এতে আয় হয়েছে ২ লাখ ১২ হাজার ১৭৪ টাকা আর ব্যয় হয়েছে ১২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। সবশেষ ২০২৩ সালে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন ১৮ দিনে আম পরিবহন করেছে ১২ লাখ ৭ হাজার কেজি। এতে আয় হয়েছে ৪ লাখ ৪৮ হাজার ৫০২ টাকা আর ব্যয় হয়েছে ১৯ লাখ ৬২হাজার টাকা। গত চার বছরে রেল আয় করেছে ৪৬ লাখ ৩৯ হাজার ১৪০ টাকা। যেখানে রেলের ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৪৭ লাখ ২২ হাজার টাকা। দিন শেষে রেলের লোকসান ১ কোটি ৮২ হাজার ৮৬০ টাকা। গত ৪ বছরে সেখানে এক কোটি টাকা লোকসান করেছে রেল। সেখানে চলতি বছর যাত্রাপথ পাড়ায় মাত্র ৭ দিনেই লোকসান হয়েছে অর্ধকোটি টাকা।

আম ব্যবসায়ীরা বলছেন, রেল কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতার ঘাটতির কারণে লাভজনক এ সেবা খাতটি লোকসানে পরিণত হচ্ছে। নেই আধুনিক সেবা, এমনকি পরিকল্পনা নিয়ে অসন্তোষ ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও আম পরিবহনে বিলম্ব ও মান ঠিক না থাকা নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ। আম পাঠানো ও গ্রহণের ক্ষেত্রেও পোহাতে হয় সীমাহীন দুর্ভোগে। আর তাই ট্রেনের পরিবর্তে কুরিয়ারেই আগ্রহী সকলেই।

জানতে চাইলে বাঘার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সাদিয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক শফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি প্রতি বছর দেশের বাইরে আম রপ্তানি করেন। সে কারণে আমের মান সবচেয়ে ভালো রাখতে হয়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিতভাবে নিয়ে যেতে হয়। তবে ট্রেনে এসি লাগেজে আম পাঠানো গেলে মান ভালো থাকে। রাজশাহী থেকে সরাসরি সিলেট ও চট্টগ্রামে আম পরিবহনের সুযোগও নেই। ফলে ট্রেনের চাইতে কুরিয়ারেই বেশি ভালো হয়।

নাচোলের আমচাষি মতিউর ইসলাম বলেন, বাগান থেকে সরাসরি আম ট্রাকে করে ঢাকায় যেখানে ইচ্ছে নিয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু ট্রেনে আম নেওয়ার জন্য স্টেশনে আসতে হয়। সেখান থেকে আম আবার স্টেশনে নামিয়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে আড়তে আম নিতে হয়। আবার এখানেও স্টেশনে গিয়ে আম দিয়ে আসতে হয়। এতে ওঠানো-নামানোসহ পরিবহন খরচ বেশি পড়ে যায়। অনেক স্টেশনে রোদে ও বৃষ্টিতে আম ফেলে রাখা হয়। প্রতিটি স্টেশনে আম রাখার সুব্যবস্থা থাকলে ও ঢাকায় হোম ডেলিভারি চালু করা গেলে চাষীদের ট্রেনে পরিবহনে আগ্রহ বাড়তে পারে।

এদিকে ট্রেনটি জনপ্রিয় করতে রাজশাহীতে এসেছিলেন রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম। ট্রেনটিকে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ আনতে পরামর্শও নেন তিনি। চালানো হয় বিশাল প্রচার প্রচারণা। তবে এত কিছুর পরও তিন দিনের বেশি আম পরিবহন করতে পারেনি ট্রেনটি। এছাড়াও দুই দিন গরু পরিবহনেও তেমন সাড়া নেই।

এ বিষয়ে পশ্চিম রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক আহম্মদ হোসেন মাসুম বলেন, রেলের লোকসানের কারণ হচ্ছে মানুষ ম্যাঙ্গো নেয়নি। আমাদের উপর বিশ্বাস রাখেনি। তারা ভেবেছে বাই রোডে সহজে নিয়ে যাবে। যখন কারো কিছু একটা অভ্যাস হয়ে যায় সেখান থেকে বেরিয়ে আসা টাপ হয়ে যায়। এটাই মূল কারণ। এখন যদি কেউ না আসে সেক্ষেত্রে আর কী করতে পারি।

সাখাওয়াত হোসেন/আরএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।