গুনে গুনে ঘুস নেন জনস্বাস্থ্যের মাঠ কর্মকর্তা শাহদাত
কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কার্যক্রমে চরম অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অফিসের মাঠ কর্মকর্তা শাহদাত হোসেন চাহিদা মতো ঘুসের টাকা গুনে গুনে বুঝে নেন। পরিমাণ কম হলে তা নিয়ে তর্কে জড়ান তিনি। ঘুসের টাকা লেনদেনের এমনই একটি ভিডিও এসেছে জাগো নিউজের হাতে।
ভিডিওতে দেখা যায়, নিজ অফিসে বসে শাহদাত হোসেন গুনে নিচ্ছেন ঘুসের টাকা। চাহিদার চেয়ে পরিমাণ কম হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলেন।
তবে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর অফিসে গিয়ে কথা বলতে বলে ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোন কেটে দেন মাঠ কর্মকর্তা শাহদাত হোসেন।
এদিকে ভিডিওটি সামনে আসার পর অফিসে ঘুস বাণিজ্য, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ঈদগাঁও উপজেলার প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী তুষার মোহন সাধু খাঁ স্বাক্ষরিত ৪ জুলাইয়ের এক অফিস আদেশে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘জনস্বাস্থ্য অফিস থেকে তাকে একটি টিউবওয়েল বরাদ্দ দেওয়া হয়। টিউবওয়েলটি পেতে সরকারি ফি’র পাশাপাশি শাহদাত দশ হাজার টাকা ঘুস দাবি করেন। দেন দরবারের এক পর্যায়ে তাকে দশ হাজার টাকা দেওয়ার কথা হয়। কিন্তু আর্থিক সংকটের জন্য তাকে ঘুসের পুরো টাকা দিতে না পারায় তার সঙ্গে তর্কে জড়ান শাহদাত। পরে টাকাগুলো গুনে দেখেন। কম হওয়ায় তাকে বকাঝকা করে টাকা ফেরত দিতে চান। পরে বাধ্য হয়ে দশ হাজার টাকাই দেন তিনি।’
আবুল কাশেম নামে অপর এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে আমাকে ৮০০ ফুট গভীর একটি নলকূপ বরাদ্দ দেওয়া হয়। মিস্ত্রিকে সঙ্গে নিয়ে শাহদাত আমাকে বলেন, সরকারের দেওয়া টিউবওয়েল আরও দুইশত ফুট গভীর করলে পানি ভালো আসবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আমাকে কিনে দিতে হবে। তার কথা মতো আমি সব কিনে দিই। কিন্তু তারা কাজ না করে আমার সব জিনিসপত্র নিয়ে যায়। আমার প্রায় ৬৫ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। শাহদাতকে বললে, তিনি মিস্ত্রির ওপর দায় চাপিয়ে এড়িয়ে যান।’
শুধু ঘুস বাণিজ্য নয়, ঈদগাঁওয়ে যোগদানের পর থেকে সরকারি টিউবওয়েল বাণিজ্য, ঠিকাদারদের জিম্মি করে টাকা আদায়সহ নানা অভিযোগ রয়েছে শাহদাতের বিরুদ্ধে।
ঈদগাঁও উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান বলেন, আমার মাঠকর্মী কী করেছে, না করেছে তা আমি অবগত নই। তবে আমি কখনো অনিয়মের সঙ্গে কিংবা অনৈতিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত না। এরপরও কেন যে আমাকে বরখাস্ত করেছে তা আমার বোধগম্য নয়। আমিই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তাদের বিলও আটকে আছে।
তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা আদায় করার কোনো সুযোগ নেই। এ সংক্রান্ত একটি গণবিজ্ঞপ্তিও জারি করেছিলাম আমি। তারপরও শাহদাত যা করেছে অপরাধ। তার অপকর্মের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতনের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সরকারি কাজে নিয়মের অতিরিক্ত টাকা লেনদেন হয়ে থাকলে তা চরম অন্যায়। যে অভিযোগ উঠেছে, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ চলছে। এরইমধ্যে উপজেলা প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে কর্তৃপক্ষ।
সায়ীদ আলমগীর/এফএ/এএসএম