বগুড়া জেলা কারাগার

তালিকায় রুই-ইলিশ-গরু-খাসি, বন্দিরা পান পাঙাশ-ব্রয়লার

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক বগুড়া
প্রকাশিত: ০৭:৫৮ পিএম, ০৯ জুলাই ২০২৪
বগুড়া জেলা কারাগার

ছাদ ফুটো করে চার ফাঁসির আসামি জেল পালানোর পর আলোচনায় বগুড়া জেলা কারাগার। কারাগারের নিরাপত্তা নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। বিষয়টি এখানেই শেষ নয়। কারাগারের বন্দিদের খাবার তালিকা দেখেও ভড়কে যাওয়ার দশা।

রুই, কাতলা, মৃগেল, পাবদা, শিং, ট্যাংরা এমনকি ইলিশও আছে মাছের তালিকায়। মাংসের তালিকায় আছে গরু, খাসি ও দেশি মুরগি। খাবারের এ তালিকা দেখে যে কেউ ভাবতেই পারেন কী রাজার হালেই না আছেন বন্দিরা!

তবে বাস্তব চিত্র ঠিক উল্টো। বন্দিদের এসব খাবার দেওয়ার নাম করে বছর বছর কোটি কোটি টাকা লুটে নিচ্ছে বগুড়া কারা কর্তৃপক্ষ। আদতে মাছ বলতে পুকুরের পাঙাশ আর মাংস হিসেবে বন্দিদের পাতে ওঠে ব্রয়লার মুরগির ছোট্ট টুকরা। শুধু খাবার তালিকা নয়, এর বাইরে অন্য কেনাকাটার ফর্দটাও গোঁজামিলে ভরা। অনুসন্ধানে ওঠে এসেছে এসব তথ্য।

৭২০ জন ধারণক্ষমতার বগুড়া কারাগারে সবসময় দুই হাজারের বেশি বন্দি থাকেন। বন্দিদের জন্য গত অর্থবছর সাত কোটি ৬৪ লাখ ১৭ হাজার টাকার মাছ-মাংস ও সবজি কেনা হয়। এর বাইরে অন্যান্য মালামাল কেনা হয় দুই কোটি ৩২ লাখ ৪২ হাজার ৬০৩ টাকার। দুই ধাপে জেল সুপার আনোয়ার হোসেন চাহিদাপত্র দিয়ে এ মালামাল কেনেন।

আরও পড়ুন:

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বন্দিদের খাওয়ানোর জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১২ রকমের মোট এক কোটি ১১ লাখ ৭৬ হাজার ৬০০ টাকার মাছ কেনা হয়েছে বলে দেখানো হয়েছে। এরমধ্যে ৯০০০ কেজি রুই মাছ ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৪০০০ কেজি কাতলা মাছ ১৪ লাখ, ৪০০০ কেজি পাঙাশ ১০ লাখ, ৪০ কেজি পাবদা ১৮ হাজার, ৪০০০ কেজি মৃগেল ১২ লাখ, ৪০০০ কেজি বিগহেড ১০ লাখ ৮০ হাজার, ৪০০০ কেজি সিলভার কার্প ১০ লাখ ৮০ হাজার, ৪০ কেজি শিং মাছ ২২ হাজার, ৪০০০ কেজি গ্রাসকার্প ১০ লাখ, ৪০০০ কেজি তেলাপিয়া ১০ লাখ ৪০ হাজার, ২০০ কেজি ইলিশ ১ লাখ ৬০ হাজার এবং ৪০ কেজি ট্যাংরা মাছ কেনা হয় ২৬ হাজার ৪০০ টাকায়।

তবে সাধারণ বন্দিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা বেশিরভাগ সময় পাঙাশ মাছ পেয়েছেন। কোনোসময় সময় মাসে দু-একবার তেলাপিয়া মাছ দেওয়া হয়েছে। তাদের এই বক্তব্য অনুসারে জেল কর্তৃপক্ষ যদি ১০ লাখ টাকার পাঙাশ ও ১০ লাখ ৪০ হাজার টাকার তেলাপিয়া মাছও কিনে থাকে, তাহলে শুধু মাছ কেনাকাটায় বাকি ৯১ লাখ ৩৬ হাজার ৬০০ টাকা কোথায় গেছে তা কেউ জানেন না।

একই সময়ে পাঁচ রকমের মাংস কেনা হয়। এরমধ্যে ১২০০০ কেজি গরুর মাংস এক কোটি ২ লাখ টাকায়, ১০০০ কেজি খাসির মাংস ১১ লাখ, ১০০০ কেজি ছাগির মাংস ৯ লাখ ৭০ হাজার, ৫২০০ কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮ লাখ ২০ হাজার এবং ১০০০ কেজি সোনালি মুরগি (দেশি জাতের) কেনা হয়েছে পাঁচ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। এখাতেও একইভাবে নির্ধারিত ১৮ লাখ ২০ হাজার টাকার ব্রয়লার মুরগির মাংস কেনা হলেও বাকি এক কোটি ২৮ লাখ ২০ হাজার টাকার মাংসের হিসাবটাও রহস্যজনক।

খাবার তালিকায় ৩০ রকমের সবজি এক কোটি ৬১ লাখ ৪২ হাজার টাকায় কেনার কথা বলা হলেও আদতে গত এক বছরে ডাটা শাক, লাল শাক আর বেগুন ছাড়া আর কোনো সবজি বন্দিরা চোখে দেখেননি। তারপরও আলু ১৬ লাখ, মুলা ৮ লাখ, ডাটা ৩ লাখ ৬০ হাজার, করলা ৭ লাখ ২০ হাজার, ফুলকপি ৪ লাখ ৮০ হাজার, শসা ৬০ হাজার, কলমি শাক দেড়লাখ, ঢ্যাঁড়শ ৬ লাখ, কাঁচা পেঁপে ১২ লাখ, পানি কচু দেড়লাখ, মুখি কচু ২ লাখ ৪০ হাজার, ওলকপি ১ লাখ ৬০ হাজার, বাঁধাকপি ৭ লাখ, লাল শাক ৩ লাখ ৬০ হাজার, টমেটো ৭ লাখ ২০ হাজার, মিষ্টি কুমরা ৮ লাখ, কচি চালকুমড়া ৪ লাখ ৮০ হাজার, ঝিঙে ৪ লাখ ৮০ হাজার, কাঁচা কলা ৩ লাখ, গাজর ৩ লাখ, ধনেপাতা ১২ হাজার, পুঁইশাক ৩ লাখ ৬০ হাজার, শিম ৬ লাখ, কচি লাউ ২৪ লাখ, বেগুন ১০ লাখ, পটোল ৩ লাখ, চিচিঙ্গা ৫ লাখ ৪০ হাজার, কাকরোল ৬ হাজার, পালং শাক ২ লাখ ১০ হাজার এবং ৫৪ হাজার টাকার বরবটি কেনা হয়েছে বলে দেখানো হয়েছে। এখানে ডাটা শাক, লাল শাক ও বেগুনের নির্ধারিত দাম ধরলেও সেটি ১৭ লাখ ২০ হাজার টাকা দাঁড়ায়। এখাতেও বাকি এক কোটি ৪৪ লাখ ২২ হাজার টাকার হিসাব নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে সদ্য জামিন পাওয়া একাধিক বন্দির মনে।

আরও পড়ুন:

কারাগারে রান্নার কাজে ব্যবহৃত ২০ রকমের মসলা কেনা হয়। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি কেনা হয়েছে ৩০ লাখ টাকার শুকনা মরিচ, ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকার লবণ, ৬ লাখ টাকার শুকনা হলুদ, ৫ লাখ ১০ হাজার টাকার পেঁয়াজ, ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার জিরা, ৩ লাখ ২০ হাজার টাকার রসুন, ৩ লাখ ২০ হাজার টাকার আদা, ১ লাখ ৯২ হাজার টাকার দারুচিনি এবং সরিষা ও সয়াবিন তেল মিলিয়ে ৮৬ লাখ ৩৫ হাজার ৩০০ টাকা।

ভোগ্যপণ্যের অন্যান্য মালামালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ২৭ লাখ টাকার চিনি, ১২ লাখ টাকার গুঁড়া দুধ, ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকার সুজি, ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকার ছোলা, ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকার মুড়ি, ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকার গুড়, ৭ লাখ ২০ হাজার টাকার কলা, ১ লাক ২০ হাজার টাকার লেবু, ৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার পোলাও চাল আর দই, মিষ্টি ও পান-সুপারি মিলিয়ে ২৪ লাখ ৪২ হাজার ৮০০ টাকা। অন্য বড় খরচের মধ্যে পরিবহন খরচ দেখানো হয়েছে ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা। বিড়ি-সিগারেট বাবদ খরচ করা হয়েছে ৩ লাখ ৪ হাজার ৮০০ টাকা।

এ তালিকার বাইরে সবচেয়ে বড় পুকুরচুরি দেখা গেছে ডালে। গত ১২ মাসে মসুর ডাল, মোটা-চিকন আর ছোলার ডাল কেনা হয়েছে ১ কোটি ৫২ লাখ ৫০ হাজার ৪০০ টাকার। বন্দিদের অভিযোগ, ভাতের পাতে তারা পানির মতো পাতলা আবরন ছাড়া ঘন ডালের অস্তিত্ব টের পাননি। তারা আরও জানিয়েছেন, রান্নার পর যে খাবারটি ফ্রি বিতরণ করা হয়, সেটি কোনোভাবেই মুখে তোলার মতো নয়। নতুন আগত বন্দিরা প্রায়ই এই খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। অনেকে বমি করার পর আর মুখে দেন না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কারারক্ষী এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ডাল মূল ভবনের বাইরে একটি দোতলা ভবনে মজুত করা হয়। সেখান থেকে অতিঅল্প পরিমাণ ভেতরে আসে। এটা কোনোভাবেই ১৫-২০ লাখ টাকার বেশি হবে না। বাকি ডালগুলো অদৃশ্য ইশারায় গায়েব হয়ে যায়।

বিশেষ দিবস ছাড়া কখনোই বন্দিদের ভালো কোনো খাবার দেওয়া হয় না জানিয়ে এই কারারক্ষী বলেন, ‘ভালো খাবার দিলে ক্যান্টিন ব্যবসা হবে না। এ কারণে এটি একটি কৌশলও হতে পারে।’

আরও পড়ুন:

টেন্ডার ছাড়াই স্টেশনারি ক্রয়

গত এক বছরে কারাগারে অফিস স্টেশনারি মালামাল কেনা হয়েছে ১০ লাখ ২০ হাজার টাকার। এটি করা হয়েছে ডিপিএম (ডিরেক্ট প্রকিউরম্যান্ট মেথড) পদ্ধতিতে। এখানে মালামাল তালিকা পর্যবেক্ষণ করেও গোজামিল দেখা যায়। যেমন পুরস্কার ব্যয়, আপ্যায়ন ব্যয়, বাইপত্র ও সাময়িকী, নিরাপত্তা ও কম্পিউটার সামগ্রী, মনোহারি, আসবাবপত্র, অফিস ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি, মোটরযানের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে সার ও কীটনাশকের খরচ। আবার অনেক মালামালই না কিনে শুধু বিল ভাউচারে সব টাকা উত্তোলন করা হয়েছে বলে অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া গেছে। কারাগারে নথিপত্র সংরক্ষণ করে এমন সূত্রও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

কাগজে আছে বাস্তবে নাই

আলকাতরা, ফিটকিরি, টয়লেট ক্লিনার, জুতার কালিসহ আরও ১০৭ ধরনের পণ্য কেনা হয়েছে ৬৪ লাখ ৬৭ হাজার ২৯০ টাকার। বাদ পড়েনি তল্লা বাঁশ, জিআই তার, হাতুড়ি, করাত, শিরিষ কাগজসহ ১৩০ রকমের পণ্য। এগুলো কেনা হয়েছে আরও ৫ লাখ ৪ হাজার ৯১৩ টাকায়। বড় বাজেটের (১ লাখের ওপরে) কেনা সামগ্রীর মধ্যে ঝাড়ুর শলা, নারিকেল তেল, ব্লিচিং পাউডার, টয়লেট ক্লিনার, কাপড় কাঁচার সোডা, জুতার কালি, শেভিং ক্রিম, চিরুনি, প্লাস্টিকের বালতি-বদনা, গামলা, অ্যালুমিনিয়াম দ্রব্য কেনার যে তালিকা দেওয়া হয়েছে তার বেশিরভাগ মালামালই শুধু কাগুজে। কারারক্ষি, মেট (কয়েদি) ও বন্দিদের একাধিক সূত্র এতথ্য নিশ্চিত করেছে।

এই তালিকায় বড় অর্থ ধরা রয়েছে ভেতরে আটাকল ও পাওয়ারলুমের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ কেনায়। কিন্তুু মিলে কাজ করে এমন একাধিক বন্দির প্রশ্ন, গত এক বছরে বড় কোনো যন্ত্রাংশের মেরামত কিংবা সংযোজনের প্রয়োজন হয়নি। তাহলে লাখ লাখ টাকার বিল হয় কী করে?

কারচুপির বড় একটি খাত হলো ইলেকট্রিক সরঞ্জাম ক্রয় ও মেরামত। এই সেক্টরে কাজ করেন এমন একাধিক ব্যক্তি জানান, কিছু সরঞ্জাম নতুন লাগলেও বেশিরভাগই মেরামত করে চালানো হয়েছে। মালামাল তালিকায় ১৩২ পিস ফটোকপি ও প্রিন্টার মেশিনের টোনার-কালি ক্রয় দেখানো হয়েছে। এখাতে কয়েক লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হলেও বর্ণনার অর্ধেকেরও বেশি প্রয়োজন হয়নি। এছাড়া অন্যান্য খাতগুলোতেও ব্যয় নিয়ে ব্যাপক গোজামিল হিসেব রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে কারাগারের একাধিক সূত্র।

আরও পড়ুন:

বন্দিদের নানা অভিযোগ

মারামারি মামলার আসামি আজাদ মিয়া (ছদ্মনাম) জেল খাটেন বেশ কয়েকমাস। জেলের নানা অনিয়মের প্রত্যক্ষ সাক্ষী তিনি। জামিনে মুক্ত হয়ে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘কী আর কমু ভাই! ক্ষিদার জ্বালাই মনে হচে মরেই যামু। বাড়ি থেকে ট্যাকা দেওয়ার লোক নাই। ফ্রি যে খাবার দেয় তা মুকত (মুখে) তোলা যায় না। সকালে ৮টার সময় আগে লাইন করে খাবার দিচ্চিল। একুন সেডা বন্ধ। কেউ খ্যালে (খেলে) কান্টিনত থ্যাকে ল্যাওয়া লাগবি। ফ্রি এই উটি, সবজি মুকত দেওয়া যায় না। আর ট্যাকা দিয়ে কিছু কিনবার গেলেই দুই তিনগুণ বেশি দাম। যার জন্যে খ্যাইয়া না খ্যাইয়া থাকচি। মাসে দু একদিন মাছ দিয়ে ভাত দিলেও গ্যান্দা পাঙাশের (ছোট আকৃতির) গন্দে তরকারি মুকত দ্যাওয়া যায় না। গোস্ত খাওয়ার কতা তো ভুলেই গেছি এ কয় মাসে।’

কথা হয় জেল থেকে ছাড়া পাওয়া আরেক আসামি বানিউলের (আসল নাম নয়) সঙ্গে। তিনি বলেন. ‘সবজি বলতে শুধু ডাটা শাক। গ্রামত এ্যাগলা হামরা মুকত তুলি না। এ খাবার হলো জেলখানার প্ররতেকদিনের মেন্যু। এডা বাদ দিয়ে কুনু তরকারি হয় না।’

নাম প্রকাশ না করে আরেকজন একজন জানান, বন্দিদের দৈনিক খাদ্যতালিকা অনুযায়ী খাবার সরবরাহ করা হয় না। আর ওজনে কম দেওয়ার বিষয়তো আছেই। সকাল ৮টায় রুটি ও ভাজি দেওয়ার কথা থাকলেও জোটে না। দুপুর ১২টায় সরবরাহ করা হয় ভাতের সঙ্গে সবজি (ডাটা শাক), পানির মতো পাতলা ডাল আর বিকেল ৪টায় ভাতের সঙ্গে সবজি অথবা পাঙাশ মাছ। ভাত থেকে বের হয় দুর্গন্ধ।

আদালতে হাজিরা দিতে আসা বন্দিদের সঙ্গে কথা বলেও একই রকমের তথ্য মেলে। সরকারিভাবে সপ্তাহে তিনদিন ভাজি-রুটি, দুদিন হালুয়া রুটি এবং বাকি দুদিন খিচুড়ি দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে এসব খাবার বন্দিরা পান না।

চক্রে আছেন যারা

কারাগারে বিভিন্ন চক্রের হোতা ছিলেন সদ্য বদলি হওয়া জেলার মোহাম্মদ ফরিদুর রহমান রুবেল। তার নির্দেশে প্রতিটি কাজে চিহ্নিত একাধিক চক্র সক্রিয় থাকতো। এ চক্রে কয়েদি যেমন আছেন, আছেন কারারক্ষীও।

অনুসন্ধানকালে জানা যায়, জেলারের হয়ে কারাগারের অভ্যন্তরে এবং বাইরে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন কারারক্ষী জোবায়ের। তিনি সঘোষিত ক্যাশিয়ার নামেও পরিচিত। তার সঙ্গি হিসেবে রবিউল ও মারুফ নামের দুজন ভেতরের ক্যান্টিন ও খাবার ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করেন। তবে কোনদিন কী রান্না হবে, কী মেন্যু চলবে, কোন খাবারের পরিমাণ কী, সবজি ও মসলার পরিমাণসহ সবকিছুই দেখভাল করতেন জেলার রুবেল নিজেই। তার একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে কারাগারের অনেক দায়িত্বশীল কর্মকর্তাই চোখমুখ বন্ধ করে কাজ করতেন।

আরও পড়ুন:

ক্যান্টিন নিয়ে বাণিজ্য

চার-পাঁচজন কয়েদি সাপ্তাহিক চুক্তিতে টাকা দিয়ে রান্না করেন। সেখানে মাছ, মাংস, ডিম ও সবজি বিক্রি করা হয়। একাধিক বন্দি জানান, ক্যান্টিনে একটা ডিম ৬০ টাকা, ছোট এক পিস সিলভার কার্প মাছ ১২০ টাকায় বিক্রি হয়। এককেজি ব্রয়লার মুরগি রান্না করে বিক্রি হয় ১৩০০ টাকায়। গরুর মাংসের দাম রাখা হয় প্রতিকেজি ১৮০০ টাকা করে। ক্যান্টিনে ন্যায্য দামে পণ্য বিক্রির নিয়ম থাকলেও তা মানা হয় না। দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ দাম নেওয়া হয়। এ কারণে সাধারণ বন্দিরা এসব খাবার খেতে পারেন না। ভালো খাবার জোটে ‘ভিআইপি’ বন্দির ভাগ্যে। কেউ প্রতিবাদ করলে নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ। উচ্চ পদের কোনো কর্মকর্তা কারাগার পরিদর্শনে আসার আগেই বন্দিদের কথা না বলতে বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হয়।

কর্তৃপক্ষের ভাষ্য

বগুড়া কারাগারের বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে জানতে জেল সুপার আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। সশরীরে কারাগারে গেলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি দেখা দেননি। ব্যস্ততার অজুহাতে তিনি বারবার ফিরিয়ে দেন। পরে তাকে খুদেবার্তা পাঠিয়ে কথা বলতে চাইলে ফ্রি হলে যোগাযোগ করবেন বলে জানান।

জেলার মোহাম্মদ ফরিদুর রহমান রুবেল বলেন, আগের চাইতে পরিবেশ এখন অনেক ভালো। খাবারের মানও ভালো। আমরা যা বরাদ্দ পাই, তাই বন্দিদের খাওয়াই।

বিভিন্ন সিন্ডিকেটে নিজের জড়িত থাকার বিষয় অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ এলে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আর আমি নিজে সবকিছু তদারকি করলেও সেটা দায়িত্ব থেকে করি। প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত মালামাল কেনা কিংবা খরচ করা হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি।

এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।