শেরপুর

আগ্রাসী ব্রহ্মপুত্র, ভাঙনে দিশেহারা নদীতীরের মানুষ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি শেরপুর
প্রকাশিত: ০৭:১৩ পিএম, ০৮ জুলাই ২০২৪
খননকাজ শুরুর পাঁচ বছরেও শেষ না হওয়ায় আগ্রাসী রূপ নিয়েছে ব্রহ্মপুত্র/ছবি-জাগো নিউজ

শেরপুরে ব্রহ্মপুত্র ও দশআনী নদীর ভাঙনে দিশেহারা চরাঞ্চলের মানুষ। নদীতে একের পর এক বিলীন হচ্ছে বসতভিটা, আবাদি জমি, মসজিদ, কবরস্থান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গত ১৫ দিনে বিলীন হয়েছে কয়েকশ একর ফসলি জমি, দেড় শতাধিক বসতভিটা, মসজিদ এবং রাস্তাঘাট। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে নদীপাড়ের মানুষের।

খননকাজ শুরুর পাঁচ বছরেও শেষ না হওয়ায় আগ্রাসী রূপ নিয়েছে ব্রহ্মপুত্র। ২০১৯ সালের জুলাইয়ে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়ে শেষ হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের (২০২৪) জুনে। তবে এ পর্যন্ত কাজ হয়েছে মাত্র ২৬ শতাংশ। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পটির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। সময়মতো খননকাজ শেষ না হওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয়রা।

সরেজমিন দেখা গেছে, যমুনার শাখানদী দশআনী ও ব্রহ্মপুত্র নদের শাখা সদর উপজেরার কামারেরচর ইউনিয়নের ৬ নম্বর চর এলাকায় মিলিত হয়েছে।প্রতিবছরের মতো এবারও ভারী বর্ষণে শেরপুরের এ দুই নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। বাড়িঘর, আবাদি জমি ও রাস্তাঘাট নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। গত দুই বছরে দশআনী নদীর ভাঙনে ৬ নম্বর চর গ্রামের অনেক পরিবারের বসতভিটা, সড়ক, কবরস্থানসহ আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

শেরপুর/ আগ্রাসী ব্রহ্মপুত্র, ভাঙনে দিশেহারা নদীতীরের মানুষ

একই অবস্থা ৭ নম্বর চরের বাসিন্দাদের। অনেকের জায়গা-জমি নদীতে বিলীন হওয়ায় যেমন ফসল হারিয়েছেন, তেমনি মাথাগোঁজার ঠাঁইটুকুও এখন নেই তাদের। আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের।

স্থানীয়দের অভিযোগ, গতবছর ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কিছু জিও ব্যাগ ফেলেই দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছে। পরে স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েও মুক্তি মেলেনি ভাঙন থেকে। এ অবস্থায় পাইলিং করে স্থায়ী সমাধানের দাবি জানিয়েছেন তারা।

ব্রহ্মপুত্রপাড়ের আবাদি জমি হারিয়ে নিঃস্ব কয়েকশ পরিবার। লুৎফর রহমান নামের এক বৃদ্ধ বলেন, ‘আমগোরে ৬০ বিঘা জমি আছিল। দুধেভাতে ছিল আমাগোর সংসার। ক্ষেতভরা ধান, গম, সরিষা, মরিচসহ নানান ফসল ফলাইতাম। কিন্তু রাক্ষুসে নদী আমাগোর সব কেড়ে নিয়ে গেছে। এহন আমাগোর ঘরের চাল, বেড়া খুলে রেখেছি কিন্তু ঘর তোলার জায়গা নাই।’

সাতবার ভিটাবাড়ি স্থানান্তর করে এখন আর পারছেন না আব্দুল জলিল। তিনি বলেন, ‘আবার ভাঙনের কবলে পড়েছি। এবার নতুন করে ঘর তোলার মতো আর নিজের জায়গা নেই। এজন্য প্রতিবেশীর জায়গায় বাড়ি করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

শেরপুর/ আগ্রাসী ব্রহ্মপুত্র, ভাঙনে দিশেহারা নদীতীরের মানুষ

কামারেরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, ‘গতবছর ভাঙন শুরু হলে প্রশাসনের লোকজন এনে সরেজমিন পরিদর্শন করিয়েছি। পরে দুই জায়গায় ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। এবার আবারও ভাঙন শুরু হয়েছে। বিষয়টি ইউএনও ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছি। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে হয়তো তারা ব্যবস্থা নেবেন।’

শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান খান বলেন, শেরপুরের বেশ কয়েকটি নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেগুলোর স্থায়ীভাবে ব্যবস্থার করার জন্য ডিপিপি পাঠানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা ভাঙন এলাকার খোঁজখবর নিচ্ছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।

ইমরান হাসান রাব্বী/এসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।