টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে নৌযান চলাচল শুরু

সায়ীদ আলমগীর
সায়ীদ আলমগীর সায়ীদ আলমগীর কক্সবাজার
প্রকাশিত: ০৮:৫০ পিএম, ০৭ জুলাই ২০২৪

বিকল্প পথে স্বাভাবিক হচ্ছে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌযান চলাচল। দীর্ঘদিন পর যাত্রী-মালামাল নিয়ে ট্রলার ও স্পিডবোট যাতায়াত শুরু হয়েছে।

রোববার (৭ জুলাই) সকালে টেকনাফ ঘাট থেকে দুটি ট্রলার সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে দুপুরে দ্বীপে পৌঁছে। অন্যদিকে সেন্টমার্টিন থেকে যাত্রী নিয়ে চারটি ট্রলার ও কয়েটি স্পিডবোট টেকনাফের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে দুপুর সাড়ে ১২টায় টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ পৌঁছায়।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, এক মাস আগে মিয়ানমারের রাখাইনে চলমান সংঘাতের কারণে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু প্রশাসনের সহযোগিতায় বিকল্প পথে দুবার সেন্টমার্টিনে আসা-যাওয়া করে ট্রলার। পরে সাগর উত্তাল থাকায় বিকল্প পথও বন্ধ হয়ে যায়। অবশেষে রোববার সকাল ৯টায় সেন্টমার্টিন জেটি থেকে যাত্রী নিয়ে টেকনাফের উদ্দেশ্যে রওনা হয় প্রথম সার্ভিস ট্রলার। এরপর ৯টা ২০ মিনিট, সাড়ে ৯টা ও ৯টা ৪০ মিনিটে আরও তিনটি ট্রলার যাত্রী নিয়ে টেকনাফের উদ্দেশ্যে সেন্টমার্টিন ছেড়ে যায়।

টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে নৌযান চলাচল শুরু

এছাড়া যারা একটু দ্রুত পৌঁছাতে চেয়েছেন এমন যাত্রী নিয়ে একাধিক স্পিডবোট টেকনাফের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ১টার মধ্যে নিরাপদে ট্রলার ও স্পিডগুলো টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ পৌঁছেছে বলে খবর পেয়েছি। এসব নৌযানে দুই শতাধিক যাত্রী ছিল।

সেন্টমার্টিন সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ জানান, জুন-জুলাই মাসে সাগর বেশি উত্তাল থাকে। এ সময় সাগরে যাওয়া নিষেধ। তবে রোববার একটু শীতল মনে হচ্ছে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সেন্টমার্টিন জেটি থেকে দেড় শতাধিক যাত্রীবোঝাই এসবি সুমাইয়া, এসবি আল্লাহরদান, এসবি আল-নোমান নামের ট্রলার যাত্রা করে দুপুর ১২টার দিকে শাহপরীর দ্বীপে পৌঁছায়।

তিনি আরও জানান, বেলা ১১টায় টেকনাফ থেকে এসবি আবরার হাফিজ, এসবি ওসমান গণি, এসবি রাফিয়া নামের এ তিনটি ট্রলারে শতাধিক যাত্রী, কয়েকশ গ্যাস সিলিন্ডার, চাল, ডালসহ কিছু খাদ্যপণ্য নিয়ে যাত্রা দিয়ে বিকেলে সেন্টমার্টিন দ্বীপের জেটিতে পৌঁছে।

টেকনাফে অবস্থানরত স্পিডবোট সমবায় সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, সকালে তিনটি স্পিডবোটে ২৫ জন যাত্রী নিয়ে সেন্টমার্টিন থেকে শহপরীর দ্বীপে পৌঁছেছে। শনিবারও সেন্টমার্টিন থেকে কয়েকটি স্পিডবোট যাত্রী নিয়ে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ পৌঁছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, নাফনদের মাঝখান দিয়েই নৌযানগুলো চলাচল করে আসছে। কিন্তু মিয়ানমারে সংঘাতের কারণে এখন সাগরে জোয়ার আসলে বাংলাদেশের কিনারা হয়ে নৌযানগুলো চলাচল করছে। বিজিবি প্রধানের পরামর্শ মতো, প্রতিটি নৌযানে উঁচু করে জাতীয় পতাকা টাঙানো হয়েছে। মিয়ানমারে সংঘাত বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত নাফনদের মাঝামাঝি স্থানের পরিবর্তে বাংলাদেশের কিনারা দিয়ে নৌচলাচলের সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।

সার্ভিস ট্রলারে শাহপরীর দ্বীপ ঘাটে পৌঁছানো আব্দুল্লাহ নামে এক যাত্রী বলেন, দীর্ঘদিন পর স্বাভাবিকভাবে ট্রলার করে টেকনাফ পৌঁছলাম। কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি। আমরা যারা আগের মতো স্বাভাবিকভাবে টেকনাফ আসতে পেরেছি তারা সবাই খুশি। আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ, সামনের দিনগুলোতেও যেন এভাবে সবাই স্বাভাবিক যাতায়াত করতে পারি।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, স্বাভাবিক হচ্ছে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে নৌযান চলাচল। এখন পর্যন্ত টেকনাফ-সেন্টমার্টিন বিকল্প রুটে ছয়টি সার্ভিস ট্রলার ও বেশ কয়েকটি স্পিড বোট চলাচল করেছে। পূর্বের মতো যাচ্ছে খাদ্যপণ্যবোঝাই ট্রলার বিকেলে দ্বীপে পৌঁছে বলে খবর এসেছে।

টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে নৌযান চলাচল শুরু

তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের কারণে আমরা এখনো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সংকটের অবসান না হওয়া পর্যন্ত টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটের বিকল্প পথেই সবধরনের নৌযান চলাচল করতে বলা হয়েছে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আমরা এমন ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুনরায় সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে। এরপরও চারদিকে চোখ-কান খোলা রাখতে হবে।

মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের জেরে ১ জুন বিকেলে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে রওনা হওয়া পণ্যসহ ১০ জন যাত্রীসহ এক ট্রলার লক্ষ্য করে নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা থেকে গুলিবর্ষণ করা হয়। এরপর ৫ জুন সেন্টমার্টিনের স্থগিত একটি কেন্দ্রে টেকনাফ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদের ফলাফল নির্ধারণের জন্য ভোটগ্রহণ হয়। আনুষ্ঠানিকতা শেষে ফেরার পথে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেটসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ট্রলারকে লক্ষ্য করেও একই পয়েন্টে ফের গুলি করে। ৮ জুন আরও এক ট্রলারকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয় একই পয়েন্টে। সর্বশেষ ১১ জুন একটি স্পিডবোটকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ হয়। প্রতিটি গুলিবর্ষণের ঘটনাই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ জলসীমায় ঘটেছে। গুলিবর্ষণের এসব ঘটনায় হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে দ্বীপে খাদ্য সংকট ও জরুরি আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়।

১২ জুন কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের জরুরি সভায় বঙ্গোপসাগরকে ব্যবহার করে যাত্রীদের আসা-যাওয়া ও পণ্য নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ১৩ জুন থেকে টেকনাফের সাবরাং মুন্ডার ডেইল উপকূল ব্যবহার করে শুরু হয় যাত্রীদের আসা-যাওয়া। ১৪ জুন কক্সবাজার শহর থেকে দ্বীপে পণ্য নিয়ে যায় জাহাজ। আর বিকল্প পথ হিসেবে শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্টমার্টিনে সীমিত পরিসরে কিছু নৌযান চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। তবে, বৈরী আবহাওয়ার কারণে ২২ জুনের পর থেকে সেটিও বন্ধ রয়েছে। শনিবার (৬ জুলাই) রাত হতে বৃষ্টিপাত বন্ধ হলে রোববার সকাল হতে স্বাভাবিক নিয়মে সেন্টমার্টিনে নৌ-যান চলাচল শুরু করা হয়েছে।

সায়ীদ আলমগীর/আরএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।