পাসপোর্ট অধিদপ্তরের গাড়িচালকের পাঁচতলা বাড়ি জব্দ
যশোরের সেই আলোচিত আলিশান বাড়ি ‘রাশিদা মহল’ ক্রোক করেছে প্রশাসন। দুর্নীতির মামলায় আদালতের নির্দেশে জমিসহ পাঁচতলা বাড়িটি ক্রোক করা হয়। বাড়ির সামনে জেলা প্রশাসনের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কাগজে–কলমে বাড়ির মালিক ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের বরখাস্ত হওয়া গাড়িচালক মহসীন আলীর শাশুড়ি ফিরোজা বেগম। বাড়ির সামনে টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে ক্রোককৃত সম্পত্তির রিসিভার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি।
বাড়ির মালিক ফিরোজা বেগম যশোরের মণিরামপুর উপজেলার গালদা গ্রামের মৃত রফিক উল্লাহর স্ত্রী। তার মেয়ের স্বামী একই উপজেলার খেদাপাড়া গ্রামের আবদুল ওহাবের ছেলে ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সাবেক গাড়িচালক মহসীন আলী। তারা দুজনেই দুদকের মামলার আসামি।
শনিবার দুপুরের দিকে শহরে রাজা বরদাকান্ত রোডের রেলগেট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভবনটির প্রধান ফটকের সামনে কয়েকজন যুবক দাঁড়িয়ে আছেন। জানতে চাইলে তারা বলেন, এই ভবনে নিচতলা থেকে তৃতীয়তলা পর্যন্ত ভাড়া দেওয়া আছে। এখানে ক্রেস্ট, ট্রফি তৈরির কারখানা আছে। সেখানে তারা কাজ করেন। শ্রমিকরা ভবনের মালিককে চেনেন না। বাড়ির মালিকপক্ষের কেউ তেমন আসেনও না। ভবনের নিচতলার আরেকটি ইউনিটে রয়েছে মোটরযান মেরামতের গ্যারেজ।
এই গ্যারেজ মালিক বলেন, ভবন মালিকের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ নেই। মাঝে মাঝে তাদের প্রতিনিধি এসে ভাড়া নিয়ে যান। কয়েক দিন আগে জেলা প্রশাসনের লোকজন এসে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছেন। শুনছি, দুর্নীতির মামলায় ভবনটি ক্রোক করেছেন আদালত।
বাড়ির আশপাশের একাধিক দোকানদার ও প্রতিবেশী জানান, বাড়িটির মালিক পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালকের গাড়িচালক মহসীন আলী ও তার স্ত্রী পাসপোর্ট অধিদপ্তরের বরখাস্তকৃত অফিস সহকারী (স্টেনোগ্রাফার) রাশিদা বেগম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সুজন সরকার বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় আদালতের নির্দেশে জমিসহ ‘রাশিদা মহল’ ক্রোক করা হয়েছে। আদালতের আদেশে ওই ভবনের রিসিভার হিসেবে জেলা প্রশাসককে দেওয়া হয়েছে দায়িত্ব। জেলা প্রশাসক প্রতি ছয় মাস পরপর ওই ভবনের আয়–ব্যয়ের হিসাব আদালতে দাখিল করবেন। ভবনটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি কমিটি করা হয়েছে।
দুদক সূত্রে জানা যায়, দুর্নীতি ও ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ স্থানান্তর ও রূপান্তর করে শাশুড়ি ফিরোজা বেগমকে এক কোটি ৭৪ লাখ ৬৯ হাজার ৯৬২ টাকা ৮৫ পয়সা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনে সহযোগিতা করেছেন মহসীন আলী।
অনুসন্ধান শেষে ২০২৩ সালের ২২ নভেম্বর ফিরোজা বেগম ও মহসীন আলীর বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা–১–এর সহকারী পরিচালক খন্দকার নিলুফা জাহান।
এরপর চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ ও মহানগর স্পেশাল জজ আদালত ফিরোজা বেগমের নামে কেনা যশোর পৌরসভার রাজা বরদাকান্ত রোডে অবস্থিত ৭৭ নম্বর চাঁচড়া মৌজায় ৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ জমিসহ ভবনটি মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে ক্রোক করে জেলা প্রশাসককে রিসিভার নিয়োগের আদেশ দেন। ৩ জুলাই জেলা প্রশাসকের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এ সংক্রান্ত একটি সাইনবোর্ড ওই ভবনের সামনে টাঙিয়ে দেন।
নোটিশে বলা হয়েছে, ক্রোক সম্পত্তি কোনোভাবে বা কোনো প্রকারে অন্যত্র হস্তান্তর, সম্পত্তি সংশ্লিষ্ট কোনো প্রকার লেনদেন বা সম্পত্তিকে কোনোভাবে দায়মুক্ত করা আইনত নিষিদ্ধ।
২০০৮ সালে রাশিদা বেগমের মা ফিরোজা বেগমের নামে ৭ দশমিক ৭৪ শতক জমি কেনা হয়। পরে সেখানে পাঁচতলা আলিশান বাড়ি নির্মাণ হয়। এলাকার লোকজন মহসীন আলীকে সচিবালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা বলে জানতেন। পরে দুর্নীতির মামলা হলে তাদের সম্পর্কে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে।
মিলন রহমান/জেডএইচ/এমএস