নীলফামারী
ছড়িয়ে পড়ছে লাম্পি স্কিন, নেই ভ্যাকসিন
নীলফামারীতে গবাদি পশুর লাম্পি স্কিন রোগ দেখা দিয়েছে। সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে এক মাসে শতাধিক গরু মারা গেছে। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন মালিক-খামারিরা। রোগ প্রতিরোধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে প্রাণিসম্পদ বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা। তবে জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস বলছে তাদের কাছে রোগটির ভ্যাকসিন নেই।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস ও স্থানীয় পশু চিকিৎসকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলায় ছোট-বড় মিলে ৩০ হাজার ৯৭২ খামারি রয়েছেন। এরমধ্যে সদরে পাঁচ হাজার ৮৫০জন, সৈয়দপুরে চার হাজার ২৭৫ জন, ডোমারে চার হাজার ৭০২ জন, ডিমলায় চার হাজার ৮৮৯ জন, জলঢাকায় ছয় হাজার ১২৩ জন ও কিশোরগঞ্জে পাঁচ হাজার ১৩৩ জন। তবে নীলফামারী জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস মৃত্যুর বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার বিভিন্ন এলাকায় অধিকাংশ কৃষকের গরু ল্যাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে একমাসে এ রোগে ৬ উপজেলায় প্রায় তিন শতাধিক গরু মারা গেছে। তবে ল্যাম্পি স্কিন মৃত্যুর চেয়ে আক্রান্তের সংখ্যা অনেকগুণ বেশি। এ রোগের প্রতিষেধক না থাকায় অনেককে কবিরাজ, হোমিওপ্যাথিক ও পল্লি গরু চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন। নিম্নমানের ওষুধ ও ভুল চিকিৎসায় গরুর মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন অজুহাতে চিকিৎসকরা হাতিয়ে নিচ্ছেন অঙ্কের টাকা।
চওড়া বড়গাছা ইউনিয়নের গাঠাংটারী গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, রোববার দিবাগত রাতে ল্যাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়ে একটি গরু মারা গেছে। পল্লি পশু চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিয়েও গরুটি বাঁচাতে পারিনি।
- আরও পড়ুন
গরুর লাম্পি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকারের উপায়
ছড়িয়ে পড়েছে লাম্পি স্কিন, বিপাকে খামারিরা
গরুর লাম্পি রোগে আতঙ্ক নয়, ভ্যাকসিন আছে
একই অভিযোগ করেন পাশের রামগঞ্জ নৃসিংহ এলাকার কৃষক পান ব্যবসায়ী শ্রী জিতেন চন্দ্র রায় জাগো নিউজকে বলেন, আমার চারটি গরু রয়েছে এরমধ্যে একটি বাছুর গরু মারা গেছে। স্থানীয় পশু চিকিৎসকের চিকিৎসায় প্রায় ১২ হাজার টাকা ওষুধ প্রয়োগ করেও কোনো লাভ হয়নি। এলাকায় অনেক কৃষকের গরু ল্যাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত রয়েছে।
ডিমলা উপজেলা বাইশপুকুর গ্রামের বাদশা আলমগীর বলেন, আমার পাড়ায় গত কয়েকদিনে লাম্পি স্কিনে ভাইরাসের কারণে দুটি গরু মারা গেছে। এলাকায় লাম্পি স্কিনে অনেকের গরু আক্রান্ত হয়েছে। তবে বাজারে গরুর ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে। সরবরাহের কম অজুহাতে দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে।
দক্ষিণ চওড়ার কৃষক ওসমান গনি জানান, হঠাৎ করে আমার একটি গরুর বাছুর দুর্বল হয়ে পড়ে। একই সঙ্গে সারা শরীরে গুঁটি গুঁটি বের হয়। খাওয়া দাওয়া কমিয়ে দেয়। এখন ওষুধ ব্যবহার করছি। তবে তিনি অভিযোগ করেন, প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে কোনদিন কেউ খবর নেয়নি। কোনো চিকিৎসক আসেনি বা পরামর্শ দেয়নি।
সুধেন নাথ রায় নামে কৃষক জানান, তার নিজের দুটি গরু ল্যাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। প্রথমে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের দ্বারা চিকিৎসা করেছি। উপকার না হয়ে এখন কবিরাজের চিকিৎসা চলছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রমতে, লাম্পি স্কিন গবাদি পশুর নতুন একটি রোগ। আক্রান্ত পশুর প্রথমে সামনের পা ফুলে যায়। তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে শরীরে বড় বড় গুটি দেখা দেয়। এক সপ্তাহ পরে গুটিগুলো গলে ঘা হয়। ঘা থেকে অনবরত তরল পদার্থ বের হয়। অল্প দিনে গরু শুকিয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে মারা যায়। তবে আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর সংখ্যা খুবই কম।
নীলফামারী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. সিরাজুল হক জাগো নিউজকে বলেন, নীলফামারীর বিভিন্ন উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে লাম্পি স্কিন রোগ। অনেক জায়গায় ছোট বাছুর মারা যাচ্ছে বেশি। আমরা খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি পল্লি চিকিৎসকের কারণে অনেক গরু মারা যাচ্ছে। তারা বেশি করে এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করার কারণে মরছে। এজন্য বিভিন্ন উপজেলায় মাঠ পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছি। যাতে বেশি করে এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা না হয়। যার প্রতিষেধক বেসরকারিভাবে বিভিন্ন কোম্পানির কাছে পাওয়া গেলেও সরকারিভাবে এখনো আসেনি। আমাদের কাছেও এ রোগ প্রতিরোধের কোনো টিকা নেই।
তিনি আরও বলেন, আক্রান্ত গরুর সুচিকিৎসার জন্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে দ্রুত যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। গরুর সঠিক পরিচর্যা, আক্রান্ত পশুকে মশারির ভেতর রাখা ও বাসস্থান পরিষ্কার পরিছন্ন রাখার মাধ্যমে এ রোগ ছড়িয়ে পড়া রোধ করা সম্ভব।
ইব্রাহিম সুজন/আরএইচ/জেআইএম