নির্মাণাধীন সেতুর বিকল্প রাস্তাও ভাঙা, ঝুঁকি নিয়ে পারাপার

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি গাইবান্ধা
প্রকাশিত: ১১:১১ এএম, ০৬ জুলাই ২০২৪

পাঁচ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হবে সেতু, উপকৃত হবে অন্তত ১০ গ্রামের মানুষ। এ উদ্দেশ্যেই গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নে আলাই নদীর ওপর নির্মাণ কাজ শুরু হয় একটি সেতুর। শুষ্ক মৌসুমে নির্মাণাধীন এই সেতুর বিকল্প রাস্তায় এলাকাবাসী চলাচল করতে পারলেও বর্ষার শুরুতেই দেখা দিয়েছে দুর্ভোগ।

টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে আলাই নদীর ওপর নির্মাণ করা বিকল্প রাস্তাটিও ভেঙে গেছে। ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকোয় নাদী পারাপার হতে হচ্ছে এসব গ্রামের মানুষকে। আবার বন্যায় সেই বিকল্প রাস্তাও তলিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) গাইবান্ধা কার্যালয় সূত্র বলছে, সদর ও ফুলছড়ি উপজেলার বুড়াইল বানিয়াজান বিলের ওপর লোহাচরা ব্রিজটি দীর্ঘদিনের পুরোনো হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। ফলে সদরের সঙ্গে থানসিংহপুর, কয়ার ছয়ঘরিয়া, কয়ারপাড়া, চৌডাঙ্গি ও ফুলছড়ি উপজেলার বুড়াইলসহ অন্তত ১০টি গ্রামের মানুষের যাতায়াতের জন্য সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। ৫৪ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। জাকাউল্লা অ্যান্ড ব্রাদার্স নামে ঠিকাদারি একটি প্রতিষ্ঠান এই সেতু নির্মাণের কাজ করছে।

নির্মাণাধীন সেতুর বিকল্প রাস্তাও ভাঙা, ঝুঁকি নিয়ে পারাপার

সরেজমিনে দেখা গেছে, সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নে লোহাচরা এলাকায় একটি সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। তবে বর্তমানে কাজ বন্ধ রয়েছে। এই নির্মাণাধীন সেতুর পাশে একটি বিকল্প রাস্তা তৈরি করে দেওয়া হয় সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য। সেটিও কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে ভেঙে গেছে। পরে স্থানীয়রা নিজ উদ্যোগে চলাচলের জন্য বাঁশের সাঁকো তৈরি করেন। এটিই তাদের একমাত্র ভরসা এখন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই সাঁকো দিয়ে পারাপার হচ্ছে শিক্ষার্থীসহ অন্যান্যরা।

থান সিংসহপুর গ্রামের বাসিন্দা আমির হোসেন বলেন, ‘নদী পার হয়ে উপজেলা সদরে যাওয়া লাগে। ব্রিজের পাশে যে রাস্তা করে দিছে তা বৃষ্টিতে ভেঙে গেছে।’

দক্ষিণ ফলিয়া গ্রামের গৃহবধূ শামীমা আক্তার বলেন, ‘আগে অটোতে করে মেয়েকে সদর উপজেলা স্কুলে নিয়ে যেতাম।এখন বাড়ি থেকে হেঁটে আসতে হয়। তারপর ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পার হতে হয়।’

কয়ারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আসাদুজ্জামান সরকার বলেন, ‘লোহাচরা ব্রিজের করা বিকল্প রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় আমাদের ভোগান্তি বেড়েছে। হেঁটে চলাচল করতে হচ্ছে। যানবাহন নিয়ে চলাচলের জন্য ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার ঘুরে শহরে যেতে হচ্ছে। রাতের বেলা আরও বেশি ঝুঁকি থাকে। ভেঙে যাওয়া রাস্তায় যে কাঠের পাটাতন লাগানো হচ্ছে তা কয়দিন থাকবে? নদীতে পানি বাড়ছে। সামনের দিনে হয়তো এ রাস্তাও ডুবে যাবে।’

নির্মাণাধীন সেতুর বিকল্প রাস্তাও ভাঙা, ঝুঁকি নিয়ে পারাপার

বোয়ালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য হামিদুল ইসলাম বলেন, ‘নির্মাণাধীন সেতুর বিকল্প রাস্তাটির একটি অংশ ভেঙে যাওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। সেই সঙ্গে নদীর পানি বাড়ছে। এ অবস্থায় এ রাস্তাটিও ডুবে যেতে পারে। দ্রুত এসব এলাকার মানুষের যাতায়াতের জন্য বিকল্প কিছু করার দাবি জানান তিনি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদার ও এলজিডি কর্তৃপক্ষ এসব এলাকার মানুষের যাতাযাতের জন্য কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জাকাউল্লা অ্যান্ড ব্রাদার্সের প্রতিনিধি তারিফুল ইসলাম বলেন, সেতুর বিকল্প রাস্তার ভেঙে যাওয়া অংশে কাঠের পাটাতন দিয়ে আপাতত চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ছাবিউল ইসলাম বলেন, শুধু অটো, ভ্যান আর মোটরসাইকেল চলাচল করতো এমন একটা ব্রিজ ছিল। এখন উন্নত মানের ব্রিজ করা হচ্ছে এবং কাজ চলছে। তবে বৃষ্টির কারণে বিকল্প রাস্তাটি ভেঙে গেছে।

এএইচ শামীম/এসএনআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।