শেষ হলো সেতুর কর্মযজ্ঞ, পদ্মাপাড়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
পদ্মা সেতুর বদৌলতে দুই বছরেই বদলে গেছে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাতায়াতের চিত্র। একইসঙ্গে শেষ হয়েছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। ৩০ জুন সেতুর সব কর্মযজ্ঞ শেষ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
২০২২ সালের ২৫ জুন সড়কপথের পর ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর চালু হয় প্রকল্পের রেলপথ। বাকি ছিল নদীশাসনসহ কারিগরি কিছু কাজ। এবার প্রকল্পে সেসবও সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার (৫ জুলাই) প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক পরিসমাপ্তি ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ উপলক্ষে মাওয়ায় অনুষ্ঠিত হবে সুধী সমাবেশ। এজন্য চলছে তোড়জোড়। পদ্মাপাড়ে আবারও উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
সরেজমিন বুধবার (৩ জুলাই) মাওয়া এলাকায় দেখা যায়, উত্তর থানা সংলগ্ন মাঠে সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। একই মাঠ পদ্মা সেতুর উদ্বোধন, ও রেল সংযোগ প্রকল্পের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এলাকাজুড়ে জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা বলয়। নজরদারিতে রয়েছে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)। প্রধানমন্ত্রীকে বরণে শেষ সময়ের প্রস্তুতি চলছে এখন।
সূত্রমতে, পরিসমাপ্তির সুধী সমাবেশে অংশ নেবেন দুই থেকে আড়াই হাজার সুধীজন। বিভিন্ন পর্যায়ের অতিথি ছাড়াও থাকবেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
সেতুর কাজ সমাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এটি অনেক বড় একটি প্রকল্প। আমাদের কিছু ক্লেইম ছিল। নদীশাসন ও কারিগরি কিছু কাজ বাকি ছিল। বড় কাঠামো তৈরির পর ডিফেক্ট লাইবিলিটি পিরিয়ড থাকে। এই সময়ে অবকাঠামোর ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে (যেমন কোথাও রং উঠে গেছে, কোথাও কিছুটা কাজ বাকি থেকে গেছে ইত্যাদি) তা সংশোধন করা হয়। ঠিকাদারেরও বেশ কিছু ক্লেইম ছিল। যে কারণে বারবার আমাদের মিটিং করতে হয়েছে। অর্থাৎ এই সবগুলো কাজ এই সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণ করা হয়েছে। সবমিলিয়ে আমাদের কাজ এখন সম্পূর্ণ। গত ৩০ জুনই সম্পন্ন হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘একটি সুন্দর সেতু তৈরি করে দিতে পেরেছি আলহামদুলিল্লাহ। আমাদের সবশেষ বরাদ্দ থেকে ১ হাজার ৮৩৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা কম খরচ হয়েছে। আমরা সে টাকা নিয়ম অনুযায়ী সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে দেবো।’
এদিকে প্রধানমন্ত্রীকে বরণে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা আর সর্বাত্মক প্রস্তুতি থাকার কথা জানান মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসক আবু জাফর রিপন।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ৫ তারিখ (৫ জুলাই) বিকেলে পদ্মা সেতু প্রকল্পের মাওয়া এলাকায় আসার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। মূলত পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজের মেয়াদ সমাপ্তি উদযাপনে প্রধানমন্ত্রী আসবেন এবার। বিভিন্ন পর্যায়ের অতিথিসহ যারা এই সেতুর কাজে বিভিন্ন সময় অংশ নিয়েছেন, তাদের নিয়ে একটি সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে সংশ্লিষ্টদের কথা শোনার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।’
জেলা প্রশাসনক আরও বলেন, ‘এরইমধ্যে জেলা প্রশাসন ও সব দপ্তরের অংশগ্রহণে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করে নিতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আমাদের প্রস্তুতিও চূড়ান্ত হচ্ছে।’
২০০১ সালে মাওয়ায় প্রথম পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে নানা প্রতিবন্ধকতায় আর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা শেষে যাত্রা শুরু হয় মূল সেতুর কাজ। দেশের আলোচিত এই প্রকল্পে সবশেষ মোট বরাদ্দ ছিল ৩২ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা।
আরাফাত রায়হান সাকিব/এসআর/জেআইএম