কৃষকের কাছে প্রিয় নাম মারুফ ভাই

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ফেনী
প্রকাশিত: ০১:৩০ পিএম, ০২ জুলাই ২০২৪
ছবি: কৃষকদের সঙ্গে কাজ করছেন আবদুল্লাহ আল মারুফ

দীর্ঘ আট বছর হাইস্কুলে শিক্ষকতা করে ২০০৮ সালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন আবদুল্লাহ আল মারুফ। যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এলাকায় কৃষি সম্প্রসারণ কর্মী হিসেবে কৃষকদের সঙ্গে কাজ করেছেন। বর্তমানে ফেনী জেলার দাগনভূঞা উপজেলার পূর্ব চন্দ্রপুর ইউনিয়নের নয়ানপুর ব্লকে কর্মরত রয়েছেন। প্রায় ৮ বছর ধরে তিনি ওই ব্লকের দায়িত্বে আছেন।

ইউনিয়নের প্রতাপপুর, দরাপপুর, জগতপুর, নয়ানপুর গ্রামগুলো নিয়ে নয়ানপুর ব্লক গঠিত। উক্ত ব্লকের জনগণ কৃষির ওপর নির্ভরশীল এবং চাষিরা যথেষ্ট পরিমানে সবজি চাষ করেন। আগে তারা ইচ্ছামতো সবজি ক্ষেতে কীটনাশক স্প্রে করতেন। কিন্তু মারুফের তত্ত্বাবধানে থেকে এখন আর আগের মতো স্প্রে করেন না।

জানা গেছে, আধুনিক জাতসহ বিভিন্ন প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে এই ব্লকে চাষাবাদে এসেছে ব্যাপক সাফল্য। ব্লকের সকল কৃষক ও বিভিন্ন শ্রেণির পেশাজীবী ও তাদের পরিবারের কাছে ‘মারুফ ভাই’ একটি জনপ্রিয় নাম। এছাড়াও তিনি ২০১৮ সালে ইঁদুর নিধন অভিযানে অঞ্চল পর্যায়ে প্রথম স্থান অর্জনসহ বিভিন্ন সময় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পুরস্কার অর্জন করেন।

কৃষকের কাছে প্রিয় নাম মারুফ ভাই

জগতপুর গ্রামের চাষি বালাই চন্দ্র নাথ ও নুরুল আমিন বলেন, মারুফ ভাই আমাদের মতো কৃষকদের শিখিয়েছেন সবজি ক্ষেতে কীটনাশক স্প্রে না করে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ স্থাপন করে পোঁকা মাকড় মারা, ধানের জমিতে কীটনাশক ব্যবহার না করে জমিতে ডাল পুঁতে পাখিদের বসার ব্যবস্থা করা, যাতে পাখি সেখানে বসে ক্ষেতের পোকা-মাকড় খেতে পারে। তারপর রাতের বেলা আলোক ফাঁদ স্থাপনের মাধ্যমে পোকা-মাকড় দমন পদ্ধতি শিখিয়েছেন, যা আমরা ব্যবহার করে উপকার পাচ্ছি।

নয়ানপুর গ্রামের আইডিয়াল ডেইরি ফার্মের মালিক জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত আকবর হোসেন বলেন, আমরা ফার্মের গরুর গোবর যেখানে সেখানে ফেলে দিতাম, এখন আর ফেলতে হয় না। মারুফ ভাইয়ের পরামর্শে আমি গোবরের জন্য ঘর তৈরি করে সেখানে গোবর দিয়ে কম্পোস্ট তৈরি করছি এবং আমার এলাকার চাষিদের কাছে বিক্রি করি। কয়েক বছর আগেও ব্লকের কৃষকরা জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার করে ফসল ফলাতেন, কিন্তু মারুফ ভাই শিখিয়েছেন মাটির প্রাণ জৈবসার তৈরি ও ব্যবহার।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মারুফ বলেন, উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশের জনগণের জন্য প্রধান উপজীবিকা হলো কৃষি। এসব দেশের আয়ের প্রদান উৎস এটি। জীবন ধারনের প্রয়োজনীয় উপাদান শিল্পের কাঁচামাল ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর বেশীরভাগই কৃষি থেকে আসে। কৃষি ব্যতীত মানুষের জীবন ধারণ অসম্ভব। কৃষির উন্নয়নের উপর বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন নির্ভর করে। তাই কৃষিকে ভালোবেসে ফেলেছি এবং আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে চেষ্টা করি।

কৃষকের কাছে প্রিয় নাম মারুফ ভাই

পূর্ব চন্দ্রপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মাসুদ রায়হান বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের মাঝে মারুফ ভাই এক অনন্ত দৃষ্টান্ত। বিভিন্ন সময়ে তার ব্লকে কৃষক মাঠ দিবসে উপস্থিত থাকার চেষ্টা করি। সরকারি ছুটির দিনেও কৃষকদের ডাকে সাড়া দেন তিনি। তার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট হয়ে আমি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চাষিদের জন্য উইভার মেশিন, স্প্রে মেশিন বিতরণের ব্যবস্থা করি। এতে আমার ইউনিয়নের কৃষকদের পরিবারে ফিরে এসেছে সুখ-সমৃদ্ধি। বিশেষ করে মারুফের ব্লকে কৃষি বিপ্লব ঘটেছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন মজুমদার বলেন, মারুফ একজন দক্ষ ও পরিশ্রমী এবং বহুমুখী প্রতিভাবান কৃষি অফিসার। তার কঠোর প্ররিশ্রম ও যোগ্য নেতৃত্বে নয়ানপুর ব্লকে কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ, ফসলের জমিতে পার্চিং, আলোক ফাঁদসহ কৃষিকাজে বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার উল্লেখযোগ্য। তার কৃষিকাজে অবদানের স্বীকৃতির জন্য ডিপার্টমেন্ট অনেক কৃষি পুরস্কার পেয়েছে।

দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিবেদিতা চাকমা বলেন, আবদুল্লাহ আল মারুফ একজন দায়িত্বশীল ও কর্মঠ অফিসার। তার ব্লকে কৃষিতে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। আমি আশা করি কৃষি সম্প্রসারণে তিনি আরও অবদান রাখবেন।

আবদুল্লাহ আল-মামুন/এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।