চুয়াডাঙ্গায় নানা সমীকরণে আটকে আওয়ামী লীগের কমিটি

হুসাইন মালিক
হুসাইন মালিক হুসাইন মালিক
প্রকাশিত: ১২:২৫ পিএম, ০১ জুলাই ২০২৪

গেলো জুন মাসেই চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন সম্পন্ন হওয়ার আভাস দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ। তবে জুন মাস শেষে জুলাই চলে এলেও কমিটির দেখা নেই। মেয়াদোত্তীর্ণ-বিলুপ্তি কমিটি দিয়েই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কার্যক্রম চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।

প্রায় দেড় বছর আগে চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটি দেওয়া হলেও আজ পর্যন্ত তা পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি। এছাড়া যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অন্য সংগঠনগুলোর অবস্থাও ভালো না। এরইমধ্যে জেলার রাজনীতি কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। ক্ষমতাসীন এ সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা বিভক্তির কারণে দিকভ্রষ্ট হয়ে পড়ছে বলেও জনশ্রুতি রয়েছে। এছাড়া সাংগঠনিকভাবে বেশ পিছিয়ে পড়ছে তৃণমূলের রাজনীতি।

জেলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই নাম প্রকাশ করার না শর্তে দলের এ দূরাবস্থার কথা অকপটে স্বীকার করেছেন।

তবে এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির বিষয়ে আমরাও কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে ও দেখা হয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি পাবো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, জেলা আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি বিলুপ্ত ও মেয়াধোত্তীর্ণ হওয়ার একমাত্র কারণ আভ্যন্তরীণ কোন্দল। চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগ বর্তমানে বেশ কয়েকভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। সংগঠনের গতি ফেরাতে অবশ্যই কমিটির বিষয়গুলোকে কেন্দ্রের গুরুত্ব দিতে হবে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, এক যুগ পর ২০১৫ সালের ২ ডিসেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের প্রায় সাড়ে ৪ মাস পর ৭১ সদস্য বিশিষ্ট জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি অনুমোদন দেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। সেই কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ হলে সাত বছর পর ২০২২ সালের ১২ ডিসেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন শেষে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ দুই সদস্যের কমিটি ঘোষণা করে যান। এতে বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপিকে পুনরায় সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদুল ইসলামকে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। যদিও আজাদুল ইসলাম আজাদ এখন সাধারণ সম্পাদক আছেন কি না তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা আছে। সেই হিসাবে চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগ এখন এক সদস্য দিয়েই চলছে বললেও ভুল হবে না।

তবে কেন্দ্র এসব বিরোধিতা আমলে না নিয়ে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী কমিটি ঘোষণাসহ দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়। তবে এই কমিটির ঘোষণার দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও অদৃশ্য কারণে আজও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হয়নি। এছাড়া সদ্য সমাপ্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনও জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ছাড়াই পরিচালিত হয়েছে।

এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক এক নেতা জানান, অদৃশ্য কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হচ্ছে না। তবে কবে হবে তারও কোনো ঠিক নেই। তাল-বেতাল অবস্থা।

পূর্ণাঙ্গ কমিটির বিষয়ে জানতে বর্তমান সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপির ব্যক্তিগত ফোনে কল দেওয়া হলে তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

জেলার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান বলেন, এরইমধ্যে প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা কেন্দ্রে জমা দিয়েছি। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখছি।

তিনি আরও বলেন, যে কমিটি আমরা জমা দিয়েছি তাতে বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি মহোদয়কে সভাপতি ও আমাকে সাধারণ সম্পাদক করে জমা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি পাবো।

এ বিষয়ে জেলার আরেক সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল মালেকের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি আরও অনেক আগেই হওয়ার কথা। কিন্তু বর্তমান সভাপতির সঙ্গে সেক্রেটারির সমন্বয়ের অভাব। এছাড়া ছেলুন জোয়ার্দ্দার তার পক্ষের মানুষদের শুধু কমিটিতে আনতে চাচ্ছেন অর্থাৎ কমিটিতে ‘মাইম্যান’ ঢোকাতে চাচ্ছেন। যারফলে কমিটি আটকে আছে বলে আমি মনে করি। তারপরও আমি চাই দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি হোক।

দলের আভ্যন্তরীণ কোন্দলের বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপকমিটির সদস্য দিলীপ কুমার আগরওয়ালার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘নেতৃত্বের প্রতিযোগিতার কারণে অভ্যন্তরীণ কোন্দল আছে। যার কারণে সবধরনের কমিটি গঠন প্রক্রিয়া বন্ধ আছে বলে শুনেছি।’

তিনি আরও বলেন, তবে সাংগঠনিকভাবে তৃণমূলের রাজনীতিকে শক্তিশালী করতে আমি সর্বদা কাজ করছি এবং করে যাবো।

এদিকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বি এম মোজাম্মেল হকের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ঈদসহ নানা কারণে জুন মাসের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে আগস্টের আগেই শেখ হাসিনার নির্দেশনা মোতাবেক আমরা কমিটি গঠনের কাজ শেষ করবো। সেভাবেই কাজ এগুচ্ছে। আমাদের কাছে কমিটির খসড়া আছে। কাজ চলছে।

এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।